অনেক কিছুই কাউকে বলতে পারি না

হুজাইফা শোয়েব
হুজাইফা শোয়েব

‘আমি যখন একটা কথা বলি, যুক্তি দিয়ে বলি। তা-ও আমার কথার কেউ গুরুত্ব দেয় না। আপু-ভাইয়া কোনো কথা যুক্তি ছাড়া বললেও, তবু আব্বু-আম্মু তাদের কথাই শোনে। তাদের কথাকেই গুরুত্ব দেয়। যদি একটা দোষও করে, তবু আব্বু-আম্মু কিছুই বলে না। অথচ সামান্য কিছু একটা হলেই আব্বু-আম্মু আমাকে বকা দেয়। তখন খুব খারাপ লাগে। রাগ হয়, কান্না আসে। একা একা কোথাও যেতে দেয় না। কোথাও বেড়াতে চাইলেও যেতে দেয় না। অথচ আমি কিন্তু একা একাই চলতে পারি। আমাকে কেউ বুঝতে চায় না। এ কারণে অনেক কিছুই কাউকে বলতে পারি না।’ কথাগুলো রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র হুজাইফা শোয়েবের। তার বয়স ১৪ বছর। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই নিজের মধ্যে নানা ধরনের পরিবর্তন উপলব্ধি করছে সে। নিজের মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেই প্রচণ্ড জেদ চেপে বসে তার।
গত ২০ জানুয়ারি কথা হয় হুজাইফার সঙ্গে। জিজ্ঞেস করি, ছোটবেলা থেকেই কি তোমার এ রকম মনে হয়?
‘না, আগে এ রকম লাগত না। ইদানীং লাগে। আগে যে যা বলত, সবই মেনে নিতাম। কিছুই বুঝতে পারতাম না। কিন্তু এখন অনেক কিছুই বুঝতে পারি। মনে হয়, সবাই যদি আমার কথা মানত, তাহলে খুব ভালো লাগত। আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন। স্যার আমাকে পছন্দ করে। আমি প্রতিদিন সিটপ্ল্যান করি। যেভাবে বলি, ক্লাসমেটরা সেভাবেই বসে। এটা আমার খুব ভালো লাগে। আমাদের কোনো কোনো ক্লাসমেটের মা–বাবা এখনো স্কুলে আসে তাদের সঙ্গে নিয়ে। ছুটির পর সঙ্গে করে নিয়ে যায়। এটা আমার কাছে ভালো লাগে না। বাসায় আসার পর আম্মু যখন পড়াশোনা নিয়ে খুব চাপাচাপি করে, তখন ভালো লাগে না। আমার কতটা পড়া দরকার, এটা আমিই ভালো বুঝি।’
তার মানসিক এই পরিবর্তনের কথা শুনতেই শুনতেই জিজ্ঞেস করি, তোমার ভেতরে আর কী কী পরিবর্তন টের পাও, যা আগে কখনো ছিল না? উত্তরে খেলাধুলাপাগল এই কিশোর বলে, ‘আমার কণ্ঠটা কেমন যেন হয়ে গেছে। বন্ধুরা অনেকেই বিরক্ত করে। বলে, তোর কণ্ঠ তো বুড়া মানুষের মতো। তখন খারাপ লাগে।’ এটা যে বাড়ন্ত এই বয়সের কারণেই হচ্ছে, এ নিয়ে কেউ তাকে কিছু বলেনি। কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করেনি সে। সে মনে করে, এটা তার একটা সমস্যা। তাই যতক্ষণ বাসায় থাকে, ততক্ষণ খুব সাবধানে কথা বলার চেষ্টা করে, যাতে পরিবর্তিত এই কণ্ঠস্বরটা লুকানো যায়। আমি বলি, এই বয়সেই সবাই এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তখন সে আশ্বস্ত হয়।
হুজাইফার কাছে জানতে চাই, শারীরিক কোনো পরিবর্তন সে খেয়াল করছে কি না?
লাজুক মুখে মাথা নাড়ে হুজাইফা। জানায়, এসব নিয়ে বেশ বিব্রত বোধ করে সে। বিষয়টি যেমন আজ পর্যন্ত কাউকে বলতে পারেনি, তেমনি কেউ তাকে কিছু বলেওনি যে এই বয়সে শরীরে এসব পরিবর্তন আসে। সে বলে, ‘এসব নিয়ে আমাদের স্যাররা যদি ক্লাসে বলত, তাহলে ভালো হতো। কারণ, আমাদের ক্লাসমেটদের অনেকেই এসব নিয়ে সমস্যায় আছে।’ খুব অসহায়ের মতো এসব নিয়ে আরও অনেক কথাই বলে সে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মধ্য দিয়ে অথবা পাঠ্যবইয়ে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলে অনেক সুবিধা হতো, সেসব কথাও বলল হুজাইফা।