Thank you for trying Sticky AMP!!

ধাওয়া করে ধরার পর নীলগাইটিকে হত্যা করলেন গ্রামবাসী

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মণ্ডলপাড়া এলাকায় হত্যা করা নীলগাইটি

লোকালয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটির সময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ে নীলগাইটি। এরপর শুরু হয় ধাওয়া। একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ে প্রাণীটি। প্রাণীটির মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁরা এটিকে শেষে জবাই করেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মণ্ডলপাড়া এলাকায় একটি বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই ধরা পড়ার পর এভাবে এটিকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নীলগাইটি ধরার ও জবাই করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রামবাসী চারদিক থেকে ঘিরে দড়ি দিয়ে নীলগাইটিকে বাঁধছে। একপর্যায়ে প্রাণীটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পা ছোড়াছুড়ি করে। জনা দশেক গ্রামবাসী প্রাণীটিকে চেপে ধরেন, আর একজন নীলগাইটির গলায় ছুরি চালান। এ ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখেন পোশাকধারী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দুই সদস্য।

Also Read: গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে মারাই গেল নীলগাইটি

নীলগাই ধরার পর হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে

রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম নীলগাই হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ধর্মগড় সীমান্ত এলাকার কাঁটাতার পেরিয়ে নীলগাইটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর নীলগাইটি মণ্ডলপাড়া গ্রামে ছোটাছুটি করছিল। গ্রামবাসী নীলগাইটিকে দেখতে পেয়ে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলেন। পরে তাঁরা সেটাকে জবাই করেন।

Also Read: মাংসের জন্য নীলগাইটি জবাই করছিলেন গ্রামবাসী

নীলগাইবিজিবির ৫০ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নীলগাইটি ঘিরে থাকা এত মানুষজকে বাধা দেওয়ার মতো শক্তি বিজিবির সদস্যদের ছিল না। এর আগে এই বিজিবির সদস্যরাই জবাই করার মুহূর্তে নীলগাই উদ্ধার করেছেন। এ ক্ষেত্রে নীলগাইটি জীবিত উদ্ধারে জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা উচিত ছিল।

Also Read: গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ে মারা গেল কাঁটাতারে জখম নীলগাইটি

খবর পেয়ে বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে যান রানীশংকৈলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইন্দ্রজীত সাহা। তিনি বলেন, ‘গ্রামবাসীর হাতে নীলগাই ধরা পড়ার খবর পেয়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি, গ্রামবাসী এর আগেই নীলগাইটিকে জবাই করে ফেলেছেন। তখন সেখানে বিজিবির সদস্যরাও ছিলেন।’

রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী নীলগাইটি জবাই করে ঠিক করেননি এলাকাবাসী। বিষয়টি বন বিভাগকে জানানো হয়েছে। তারা আইনি ব্যবস্থা নেবে।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘রাজশাহী থেকে রওনা হয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত শেষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Also Read: ফিরে এসো নীলগাই

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নীলগাই অনেকটা হরিণ আর গরুর মাঝামাঝি দেখতে। নীলগাই বিলুপ্তপ্রায় একটি বন্য প্রাণী। গাই হিসেবে পরিচিত হলেও নীলগাই গরু শ্রেণির নয়। বরং এটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হরিণবিশেষ প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম Boselaphus tragocamelus। আগে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নীলগাই দেখা যেত। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মাঠে–ঘাটে একসময় নীলগাইয়ের দেখা মিলত। এখন দেখা যায় না।

Also Read: পত্নীতলায় বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই উদ্ধার

এর আগে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের যদুয়ার গ্রামে একটি নীলগাই ধরা পড়েছিল। পরে সেটি দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার শৌলা দোগাছি এলাকায় আরেকটি নীলগাই জবাই করার সময় উদ্ধার হয়। ওই বছর ২ জুলাই রানীশংকৈল উপজেলার মুক্তার বস্তিতে গ্রামবাসীর ধাওয়ায় আরেকটি নীলগাই মারা যায়।

Also Read: প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশ বৃদ্ধির আশা জাগাচ্ছে সেই নীলগাই জুটি