গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে মারাই গেল নীলগাইটি

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের মুক্তারবস্তি এলাকায় উদ্ধার হওয়া মৃত নীলগাই।
ছবি সংগৃহীত

ফসলের খেতে অপরিচিত একটি প্রাণী দেখে পিছু নিয়েছিল গ্রামবাসী। তাদের ধাওয়ায় এদিক–ওদিক ছুটতে থাকে প্রাণীটি। একপর্যায়ে নির্মাণাধীন একটি বাড়ির ভেতর আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পায়নি প্রাণীটি। সেখানেও তাড়া করে গ্রামবাসী। নিজেকে রক্ষায় ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে আছড়ে পড়ে সেটা। সেখানেই মারা যায়।

আজ শুক্রবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের মুক্তারবস্তি এলাকায় এভাবেই গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে মারা যায় প্রাণীটি। মারা যাওয়া প্রাণীটি নীলগাই বলে নিশ্চিত করেছেন রানীশংকৈল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মদন কুমার রায়।

এলাকাবাসী জানান, রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় সীমান্ত এলাকার কাঁটাতার পেরিয়ে নীলগাইটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কয়েক দিন ধরে নীলগাইটি ওই এলাকাতেই ঘোরাঘুরি করছিল। আজ দুপুর ১২টার দিকে গ্রামবাসীর নজরে এলে তাঁরা নীলগাইটিকে ধরতে চেষ্টা করেন। গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে নীলগাইটি একপর্যায়ে হামিদুর রহমান নামের এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে লোকজন সেটাকে ঘিরে ফেললে নীলগাইটি জানালা দিয়ে বাইরে লাফিয়ে পড়ে। এতে আঘাত পায় প্রাণীটি। খবর পেয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের ওই এলাকার লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) আকবর আলী ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনিসহ গ্রামবাসী নীলগাইটিকে সুস্থ করে তুলতে চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু একসময় সেটা নিথর হয়ে যায়।
নীলগাই উদ্ধারের খবর শুনে আজ বেলা দুইটার দিকে রানীশংকৈল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মদন কুমার রায়কে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান রানীশংকৈলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রীতম সাহা।

পরে মদন কুমার রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে প্রাণপণ দৌড়ানোর কারণে প্রাণীটি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। পরে নির্মাণাধীন বাড়িতে আশ্রয় নিয়েও গ্রামবাসীর চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি। জানালা দিয়ে বাইরে লাফাতে গিয়ে আঘাত পেয়ে মাটিতে পড়ে যায় নীলগাইটি। সেখানেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

মদন কুমার রায় আরও বলেন, নীলগাই বিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় একটি বন্য প্রাণী। গাই হিসেবে পরিচিত হলেও নীলগাইটি কখনোই গরুশ্রেণির নয়; বরং এটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হরিণবিশেষ প্রাণী। যার বৈজ্ঞানিক নাম boselaphus tragocamelus. শত বছর আগে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নীলগাই দেখা যেত। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মাঠেঘাটে একসময় নীলগাইয়ের দেখা মিলত। এখন দেখা যায় না। মারা যাওয়া নীলগাইটি ধূসর রঙের পুরুষ প্রজাতির। বাংলাদেশে অনেক আগেই বিলুপ্ত হওয়া নীলগাইটি ভারত থেকেই প্রবেশ করেছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার শৌলাদোগাছি এলাকায় জবাই করার সময় গ্রামবাসীর হাত থেকে একটি নীলগাই উদ্ধার হয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের যদুয়ার গ্রামে আরেকটি নীলগাই ধরা পড়েছিল।
রানীশংকৈলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রীতম সাহা বলেন, নীলগাইটিকে জীবিত উদ্ধার করা গেলে ভালো লাগত। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আজ বিকেলে নীলগাইটিকে ওই গ্রামে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।