Thank you for trying Sticky AMP!!

মেজর সিনহা হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক জানুয়ারিতে

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সম্পন্ন হয়েছে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া সাফাই সাক্ষ্য। আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে টানা চার দিন চলবে উভয় পক্ষে যুক্তিতর্ক। এরপর জানুয়ারির শেষ দিকে আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে।

সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন, সিনহা হত্যা মামলার রায় কী হয় দেখার জন্য। আইনজীবীরা বলেন, আজ বেলা ১১টায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে সাফাই সাক্ষ্য দিতে আসেন মামলার অন্যতম আসামি ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন উপপরিদর্শক নন্দদুলাল রক্ষিত। নন্দদুলাল রক্ষিত আদালতকে বলেন, সিনহা হত্যার সঙ্গে তাঁকে জড়িত করে সাক্ষীরা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা সত্য নয়। পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এ হত্যার দায় তিনি নেবেন না।

Also Read: সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা

বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আসামি নন্দদুলাল রক্ষিতের সাক্ষ্য নেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পিপি ফরিদুল আলম। আদালত পরিচালনা করেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। সকাল সাড়ে নয়টায় জেলা কারাগার থেকে প্রিজনস ভ্যানে ১৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়।

আগের দিন সোমবার একই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে সাফাই সাক্ষ্য দেন টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ এ মামলার ১৪ জন আসামি। ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, সিনহা হত্যার সঙ্গে ওসি প্রদীপ জড়িত নন। মাদক কারবারিরা তাঁকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।

সিনহা হত্যার মামলায় এ পর্যন্ত ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীদের সবাই বলেছেন, ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে সিনহা হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

সাফাই সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আদালতকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেছিলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে জড়িত নন। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, সবাই ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সুবিধাভোগী। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তিনি টেকনাফে মাদক নির্মূলে ভূমিকা রেখেছিলেন, সফলও হয়েছিলেন। সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। বরং পরিকল্পিতভাবে তাঁকেই (প্রদীপ) সিনহা হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এই হত্যার দায় তিনি নেবেন না।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সিনহা হত্যার মামলায় এ পর্যন্ত ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীদের সবাই বলেছেন, ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে সিনহা হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এখন সাফাই সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আসামিরা উল্টো সাক্ষীদের ইয়াবা কারবারি বলছেন। এসব মামলাকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত। প্রকৃতপক্ষে ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে মামলার ১৫ জন আসামি পরিকল্পিতভাবে সিনহাকে হত্যা করেন।

Also Read: সিনহা হত্যা মামলায় ষষ্ঠ দফার প্রথম দিনে সাক্ষ্য দিলেন ৫ পুলিশসহ ৮ জন

আইনজীবী ফরিদুল আলম আরও বলেন, মামলার সর্বশেষ যুক্তিতর্কের জন্য আদালত আগামী ৯, ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি চার দিন সময় নির্ধারণ করেছেন। এ সময় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের পক্ষে সর্বশেষ যুক্তিতর্ক আদালতে উপস্থাপন করবেন। জানুয়ারির শেষ দিকে সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।

Also Read: সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন লাশ হস্তান্তরকারী এসআই আমিনুল

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।