Thank you for trying Sticky AMP!!

সুনামগঞ্জে বন্যায় ১৫ জনের মৃত্যু, বেসরকারি হিসাবে আরও বেশি

বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে ঘরের বেড়া। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গণেশপুর এলাকায়

সুনামগঞ্জে বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ছাতকে পাঁচজন, শান্তিগঞ্জে চারজন, দোয়ারাবাজারে তিনজন, জামালগঞ্জে দুজন ও ধর্মপাশা উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় মৃত ১৫ জনের মধ্যে নারী-শিশু ও জেলেরা আছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন আছে স্কুলের শিক্ষার্থী। স্কুলে যাওয়ার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। একইভাবে হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে মারা যান দুই জেলে। অন্য ব্যক্তিদের বেশির ভাগই স্রোতে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন।

Also Read: বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৮২, শুরু হয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৫ জুন। নৌকায় স্কুলে যাওয়ার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে দোয়ারাবাজার উপজেলায় দুই ভাই-বোনের মৃত্যু হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থী তামান্না আক্তার প্রবেশপত্র আনতে তার ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সৌরভ আহমদকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল। পথে ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের বহনকারী নৌকা ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু হয়।

সরকারি হিসাবের বাইরে খোঁজ নিয়ে সদর উপজেলায় আরও দুই ব্যক্তি মারা যাওয়ার কথা জানা গেছে। তাঁরা হলেন সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের সাজু মিয়া (৭০) ও পৌর শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান (৪৮)। এ দুজনের নাম সরকারি হিসাবে আসেনি।

Also Read: ‘মানুষ সব রাইখা জান বাঁচাইছে আগে’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাহবুবুর রহমান ১৬ জুন রাতে পার্শ্ববর্তী মাইজবাড়ী এলাকা থেকে নবীনগর আসার পথে ঢলের পানিতে ভেসে যান। তিন দিন পর পানিতে তাঁর লাশ ভেসে ওঠে বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বজনেরা।

সাজু মিয়ার জামাতা সালাতুল ইসলাম জানান, তিনি ১৭ জুন সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে আসছিলেন। পথে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের মদনপুর এলাকায় তলিয়ে যাওয়া সড়ক পার হতে গিয়ে ঢলের স্রোতের তোড়ে হাওরে ভেসে যান। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁর লাশ উদ্ধার করেন।

Also Read: পানি কমেছে, খুলেছে দোকান

ছাতক উপজেলায় সরকারি হিসাবে মারা গেছেন পাঁচজন। তবে পরিবারসহ বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৃতের সংখ্যা আটজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিবার, স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বন্যায় এই মৃতের সংখ্যার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। এটিই জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বন্যায় নানাভাবে মারা যাওয়া ১৫ জনের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। এর বাইরে বন্যার পানিতে ডুবে আর কোনো মৃত্যুর সংবাদ তাঁরা পাননি।

Also Read: পানি কমছে, জনমনে ফিরছে স্বস্তি

১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রতিটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। টানা চার দিন সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সুনামগঞ্জ। এ সময়ে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক পর্যন্ত বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎবিহীন ছিল চার দিন। দাঁড়ানোর মতো মাটি ছিল না কোথাও। বাড়িঘর, অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন।

গত পাঁচ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামছে। তবে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে শ্রমজীবী মানুষেরা আছেন। অনেকেই ফিরেছেন, আবার যাঁদের বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা ফিরতে পারছেন না। সরকারি হিসাবেই জেলার সাড়ে চার লাখ মানুষ বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

Also Read: পানি কমছে, দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত রোগবালাই