পানি কমছে, জনমনে ফিরছে স্বস্তি

সুনামগঞ্জে আজ বৃষ্টি না হওয়ায় বানের পানি কমছে। তবে বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়িতে এখনো হাঁটু কিংবা কোমর সমান পানি। মঙ্গলবার ছাতক উপজেলার গুরদেও এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

সুনামগঞ্জে আজ মঙ্গলবারও বৃষ্টি হয়নি। পানিও কমেছে বন্যার। তবে পানি নামার গতি খুবই ধীর। শহরের রাস্তাঘাট, মানুষের বসতবাড়িতে এখনো বন্যার পানি। পানি থাকায় বাসাবাড়িতে ফিরতে পারেননি বাসিন্দারা। পানি নামায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আজ সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আরও কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের কাছে আজ বিকেলে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন

গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল সুনামগঞ্জ। এ সময়ে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক পর্যন্ত বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎবিহীন ছিল চার দিন। দাঁড়ানোর মতো মাটি ছিল না কোথাও। শহরের রাস্তাঘাটে তিন থেকে ছয় ফুট পানি ছিল। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। তলিয়ে যায় মানুষের বসতবাড়ি। গত তিন দিন বৃষ্টি কম হওয়ায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামতে শুরু করে।

পুরো জেলা বন্যাকবলিত হলেও জেলা সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। সরকারি হিসাবে জেলায় প্রায় ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া বাড়িঘর, অফিস-আদালত, হাসপাতাল যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই হাজার হাজার বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৯০ ভাগ বাড়িঘরে এখনো বন্যার পানি। পানি কমলেও তাঁরা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। তবে পানি কমতে শুরু করায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু দোকানপাট খুলেছে। মানুষ বাজারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র কিনছেন।

আরও পড়ুন

শহরের বেশির ভাগ রাস্তাঘাট এখনো প্লাবিত। এসব সড়কের কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমরসমান পানি। মধ্য শহরের কিছু বাড়িঘর থেকে পানি নামলেও অন্যান্য এলাকার বসতবাড়ি এখনো প্লাবিত। আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার, সুপেয় পানির সংকট সর্বত্র।

ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবারসহ আশ্রয় নেওয়া রিকশাচালক ইয়াকুব আলী (৬০) বলেন, ‘ঘরে এখনো কোমর পানি। কবে ফিরতে পারব জানি না। বড় কষ্টে আছি।’ একই এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, বাড়িঘরের জিনিসপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কীভাবে কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।

আরও পড়ুন
ছাতক পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা এখনো পানিবন্দী। বাজার থেকে পানি নেমে যাওয়ায় পৌর শহরের দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার দুপুরে ছাতক পৌর শহরে
ছবি: আনিস মাহমুদ

উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা মজনু মিয়া বলেন, পানি কমছে। মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। শহরের বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা আলী হায়দার বলেন, পানি কমায় মানুষের মন থেকে আতঙ্ক কাটছে। স্বস্তি ফিরেছে। শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চালু হয়েছে। তবে যাঁদের বাড়িঘর থেকে এখনো পানি নামেনি, তাঁদের ভোগান্তি আগের মতোই আছে।

শহরের বনানীপাড়ার ব্যবসায়ী পাভেল আহমদ বলেন, পাঁচ দিন পর দোকান থেকে পানি নেমেছে। বেশির ভাগ জিনিসপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই ক্ষতি সহজে পোষানো যাবে না।

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত প্রথম আলোকে বলেন, শহরে পানি কমেছে। তবে এখনো অনেক এলাকা প্লাবিত। মানুষ এখনো পানিবন্দী। শহরের প্রতিটি স্কুল ও কলেজে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন তাঁরা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত ৬৭০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৮০ লাখ টাকা ও ১০ হাজার বস্তা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় জেলাজুড়ে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। আশা করছেন, দ্রুত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। ত্রাণের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।