Thank you for trying Sticky AMP!!

দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিবের স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান মাঠের পাশে বালুর ওপর তার ভাস্কর্য বানিয়েছেন সহপাঠীরা। আজ শনিবার দুপুরে

সেই বালু আর পাথরেই ফুটে উঠল হাবিবের প্রতিকৃতি

বেলা দুইটা! মাঘের তীব্র শীতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে সতীর্থদের কপালে। কেউ বালু এগিয়ে দিচ্ছেন, কেউ পাথর। কেউ পাশে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকছেন। সবাই ব্যস্ত একজন মানুষের অবয়ব ফুটিয়ে তুলতে। যিনি কয়েক দিন আগেও ছিলেন, এখন কেবলই স্মৃতি।

শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান মাঠের পাশে চলছিল এ কর্মচঞ্চলতা। এখানেই গত মঙ্গলবার রাতে ট্রাকচাপায় মারা যান কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব ওরফে হিমেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আসা পাথরবাহী ট্রাকের চাপায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর মাথা।

Also Read: ট্রাকচাপায় নিহত শিক্ষার্থী স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন

দুর্ঘটনাস্থলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হিমেল সরণী’। সেখানে ‘শিল্পীর প্রতিবাদ তাঁর শিল্পকর্মে’ শিরোনামে তৃতীয় ও শেষ দিনের মতো আর্ট ক্যাম্প করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। শনিবার বালুর ওপরে হাবিবের ভাস্কর্য আঁকলেন তাঁরা।

হাবিব ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সেই মুখাবয়ব ছিল না। এ কারণে ভাস্কর্যে হাবিবের ঘাড়ের ওপরের অংশে মাথা না রেখে তাঁরা ফুলের প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন।

পাশেই সতীর্থরা লিখেছেন, ‘হিমেল আমাদের ঘুম ভাঙানিয়া পাখি।’ এর নিচেই আঁকা হয়েছে একটি পাখির প্রতিকৃতি। এই লেখা ও পাখি আঁকা হয়েছে সেই নির্মাণাধীন উন্নয়ন প্রকল্পেরই পাথর দিয়ে। সঙ্গে মেশানো হয়েছে বালু ও চুন।

Also Read: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ছাত্রের মৃত্যু

দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিবের স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান মাঠের পাশে বালুর ওপর তার ভাস্কর্য বানিয়েছেন সহপাঠীরা। পাশেই হাবিব স্মরণে নানা ধরনের ছবিও আঁকেন তারা। আজ শনিবার দুপুরে

চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী সুমন আচার্য বলেন, ‘নানা অব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয় চলছিল। উন্নয়নকাজে নানা অব্যবস্থাপনা ছিল। অনেকেই বলেছিল, প্রশাসন শুধু শুনেই গেছে। তারা তখন অবহেলা করে কিছু করেনি। হাবিব সেই ঘুমন্ত প্রশাসনকে জাগ্রত করেছে। তাই হাবিব আমাদের ঘুম ভাঙানিয়া পাখি হোক।’

বালু দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যের বিষয়ে চারুকলা অনুষদের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুমন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাবিব ক্যাম্পাসে সব সময়ই হাশিখুশি থাকতেন। শত কষ্টে থাকলেও তাঁরা তাঁকে কোনো দিন গোমড়া মুখে দেখেননি। কিন্তু ট্রাকচাপার পর তাঁকে বিকৃতরূপে দেখতে পান তাঁরা। তাই তাঁরা ভাস্কর্যে মাথাটাকে পুষ্পের প্রতিকৃতি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে হিমেলের বিকৃত রূপকে ভুলে সেই হাস্যোজ্জ্বল মুখটাকেই স্মরণ করছেন তাঁরা। সঙ্গে শিল্পী হিসেবে তাঁরা প্রতিবাদও করছেন।

Also Read: মাহমুদের কফিনবন্দী মরদেহের পাশে নির্বাক মা

এ ছাড়া শনিবার সারা বিকেল দুর্ঘটনাস্থলে হাবিব স্মরণে নানা ধরনের ছবি এঁকেছেন সহপাঠীরা। চিত্রকর্মেও উঠে এসেছে হাবিবের প্রতিকৃতিসহ সেই দিনের দুর্ঘটনার চিত্র। কেউ আবেগে এঁকেছেন ‘ছাইড়া যদি যাবি, জড়াইছিলি কেন?’

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের স্মরণ। চারকলা অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আতিক ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, হাবিব স্মরণে আজ তাঁদের উন্মুক্ত আর্ট ক্যাম্প শেষ হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দুর্ঘটনাস্থলেই একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এ আয়োজনে একটি আর্ট প্রতিযোগিতাও থাকবে। শুধু তাই নয়, হাবিবের শিল্পকর্মও এ প্রদর্শনীতে রাখা হবে।

Also Read: সড়ক দুর্ঘটনা প্রথমে বাবা, পরে দাদি, শেষে কেড়ে নিল মাহমুদের প্রাণ

চারুকলার শিক্ষার্থী শাকিলা খাতুন জানিয়েছেন, চারুকলার বিভিন্ন দাবিদাওয়া পূরণে ও হাবিব স্মরণে রোববার বিকেলে চারুকলায় যাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার।