মাহমুদের কফিনবন্দী মরদেহের পাশে নির্বাক মা

মাহমুদ হাবিব ওরফে হিমেলের কফিনের পাশে মা, স্বজন ও সহপাঠীরা। ছবিটি বুধবার দুপুরে নাটোর শহরের শুকলপট্টি এলাকার একটি স্কুলমাঠ থেকে তোলা।
ছবি: মুক্তার হোসেন

ছেলের কফিনবন্দী মরদেহের পাশে নির্বাক মা মুনিরা আক্তার নিশ্চুপ বসে আছেন। মাঝেমধ্যে বিড়বিড় করে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তা শব্দ আকারে কারও কানে পৌঁছাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, ছেলের সঙ্গেই কথা বলছেন। পাশে খালা, নানি, সহপাঠীরাসহ অন্য স্বজনদের চোখে অঝরে ঝরছে অশ্রু। ঘড়ির কাঁটা দেড়টা ছুঁইছুঁই। তখন মাকে রেখে ছেলের নিথর দেহ ছুটল না ফেরার দেশে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব ওরফে হিমেলের মরদেহ আজ বুধবার দুপুর ১২টার কিছু পর নাটোর শহরের শুকলপট্টি মহল্লায় নানাবাড়িতে আনা হয়। এ সময় মা ও বৃদ্ধ নানা-নানির আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। স্কুল–কলেজের সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন মাহমুদকে একনজর দেখার জন্য। কিন্তু ভিড় ঠেলে কফিনের কাছে এসে প্রিয় মাহমুদের মুখখানা দেখতে না পেয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন সবাই। ফুলে ঢাকা কফিনের কোথাও মাহমুদের শরীরের এতটুকু দেখা যায়নি। দুর্ঘটনায় তাঁর মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় মৃতদেহটি বাক্সবন্দী করে ফেলা হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় একটি স্কুলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কফিন রাখার জন্য ছোট্ট একটা শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। সেখানে মাহমুদকে দেখতে এসেছেন বহু মানুষ। জেলার পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাসহ পুলিশের শতাধিক সদস্যও ছিলেন সেখানে। মাহমুদের কফিনটি আগলে রাখলেন মা মুনিরা আক্তার, নানা মনিরুজ্জামান, খালু সবুর হোসেনসহ শতাধিক সহপাঠী।

সবার বুকফাটা কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠলেও মা মুনিরা আক্তার একদম নিশ্চুপ। কফিনের খুব কাছাকাছি একটা চেয়ারে বসে শুধুই ছেলের কফিনের দিকে চেয়ে আছেন। মাঝেমধ্যে ঠোঁট নেড়ে বিড়বিড় করে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার তাঁর কাছে কিছু জানতে চাইছেন, কিন্তু কিছুই বলছেন না। কিছুক্ষণ পর নানা মনিরুজ্জামান চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। বললেন, ‘নানা ভাই, তোমাকে ছাড়া আমি এ পৃথিবিতে নিঃশ্বাস নেব কী করে? তোমার মায়ের যে আর কেউ রইল না। ওকে আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব?’

এরপরই খালু সবুর হোসেন সহপাঠীদের কাছে তাঁদের প্রিয় বন্ধুর মৃতদেহ জানাজার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলেন। বন্ধুমহলে আবারও কান্নার রোল পড়ে গেল। বন্ধু-স্বজনেরা কফিন কাঁধে রওনা হলেন বাসস্ট্যান্ড মসজিদের মাঠে। সেখানে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে মাহমুদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জানাজার নামাজ পড়ান মাহমুদের খালাতো ভাই। এরপর নানাবাড়ির অদূরে গাড়িখানা কবরস্থানে দাফন করা হয় মুনিরা আক্তারের একমাত্র সন্তান মাহমুদ হাবিব ওরফে হিমেলকে।