Thank you for trying Sticky AMP!!

গোলরক্ষক রুপনার পরিবারের জন্য বাড়ি বানানোর উদ্যোগ

সাফের সেরা গোলরক্ষক রুপনা চাকমার বাড়িতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মা কালাসোনা চাকমা। আজ বুধবার সকালে রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়ো আদাম গ্রামে

১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩ ফুট প্রস্থের দুই কক্ষের জরাজীর্ণ কুঁড়েঘর। বৃষ্টি হলে ভাঙা বেড়া ও ছালা দিয়ে পানি ঢোকে। এতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায় দুই কক্ষ। পাশে খোলা রান্নাঘরেও সামান্য বৃষ্টি হলে পানিতে সয়লাব হয়। বাড়ির একপাশে ঝোপঝাড়। অন্য পাশে বর্ষা মৌসুমে কাদায় একাকার হয়ে যায়। এমন পরিবেশে বড় হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন রুপনা চাকমা।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে প্রত্যন্ত গ্রাম ভূঁইয়ো আদামে রুপনার বাড়ি। রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে নেমে ভূঁইয়ো আদাম মহাসতিপটঠান ধুতাঙ্গ অরণ্য সাধনা কেন্দ্রে যাওয়ার ইটের সলিং রাস্তা ধরে এগোলে বড়মহাপূরম নদের বাঁশের সাঁকো পড়ে। ওই সাঁকো পার হয়ে বাঁয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিট পাহাড়ি রাস্তা হেঁটে গেলেই রুপনাদের বাড়ি। বাড়িটির পশ্চিমে পাহাড়ি ছড়া-জঙ্গল, পূর্বে বড়মহাপূরম নদী, উত্তরে জঙ্গল দিয়ে হাঁটা রাস্তা এবং দক্ষিণে অন্য চার পরিবারের বাড়ি। মাত্র পাঁচটি পরিবার বসবাস করে সেখানে।

Also Read: সাফজয়ী রুপনা ও ঋতুপর্ণার বাড়িতে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক

আজ সকাল আটটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, রুপনার মা জীর্ণ ঘরের পাশে বসে আছেন। দুই কক্ষের কুঁড়েঘরের বেড়াগুলো ভেঙে পড়ছে। ঘরের আশপাশ অস্বাস্থ্যকর। শৌচাগারটিও জরাজীর্ণ। নেই পানির ব্যবস্থাও।

চার ভাই-বোনের মধ্যে রুপনা সবার ছোট। রুপনা যখন মায়ের গর্ভে, তখন তাঁর বাবা মারা যান। তখন থেকে অভাব–অনটনে চার সন্তানকে বড় করেছেন রুপনার মা কালাসোনা চাকমা।

গতকাল মঙ্গলবার রুপনাদের ঘরের অবস্থা দেখে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাড়ি নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে রুপনা চাকমাকে বাড়ি নির্মাণ করে দিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

মেয়ে রূপনার সাফল্যের ছবি দেখাচ্ছেন মা কালাসোনা চাকমা। আজ বুধবার সকালে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়ো আদাম এলাকায়

দুপুরে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক ভূষিত রুপনা চাকমার পরিবারকে বাড়ি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওই বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রকৌশলীকে সঙ্গে নিয়ে জায়গা পরিমাপ করতে যাচ্ছেন।

Also Read: ছাদখোলা বাসে মেয়েদের শোভাযাত্রা

রুপনার মা কালাসোনা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন দেশের গর্ব। তার এই অর্জনে আমরা সবাই আনন্দিত। আমার একটা দুঃখ, ছুটি পেলে বাড়িতে আসলে মেয়েকে ভালো কিছু খাওয়াতে পারিনি। বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করতে পারিনি। সরকারের কাছ থেকে একটি ঘর পাব বলে শুনেছি। তখন হয়তো ছুটিতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারবে। মেয়ে বন্ধু ও সহপাঠী নিয়ে আসতে পারবে। আমাকে প্রায় বলত, আমার বাড়িতে অনেকে আসতে চায়।’

রুপনা চাকমার বড় ভাই অটিল চাকমা বলেন, ‘অভাবে আমরা কেউ লেখাপড়া করতে পারিনি। আমরা দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে রুপনা সবার ছোট। অন্য বোনটির বিয়ে হয়ে গেছে। সবার বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। আমি, আমার স্ত্রী, দুই সন্তান, মা ও রুপনা একসঙ্গে থাকি। ছোট দুই কক্ষে আমরা পাঁচ সদস্য গাদাগাদি করে থাকি। রুপনা ছুটিতে আসলে অন্য বাড়িতে থাকতে হয়।’

রুপনা চাকমার বাড়ি যেতে পাহাড়ি ছড়ার ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। আজ ধবার সকালে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়ো আদাম এলাকায়

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুবিলাস চাকমা বলেন, ‘এত নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে উঠে এসে দেশে ও দেশের বাইরে গিয়ে সুনাম অর্জন করা স্বপ্নের মতো। রুপনার মা জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। আমরা দাবি করব, রুপনা চাকমার পরিবারকে যেন আর কষ্ট করতে না হয়।’

ইউএনও মো. ফজলুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি নির্মাণের নির্দেশ পেয়ে প্রকৌশলীসহ রুপনা চাকমার বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি। সেখানে গিয়ে পরিমাপ করে নকশা তৈরি করে দ্রুত ঘর নির্মাণ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Also Read: বিমানবন্দরে উপচে পড়া ভিড়, বাতিল সাবিনাদের সংবাদ সম্মেলন

পাহাড়ে পাঁচ নারী ফুটবলার একই বিদ্যালয়ের

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ২০১৪ সালে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। খেলাধুলার ব্যস্ততার কারণে মাঝখানে দুই বছর বিরতি দিতে হয়েছে। তিনি এখন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

২০১২ সালে একই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় খাগড়াছড়ির মেয়ে মনিকা চাকমা, আনাই মগিনি ও অনুচিং মগিনি। একসঙ্গে তাঁদের ফুটবল যাত্রা শুরু হয়। সেখানে নিয়মিত অনুশীলনের জন্য শান্তি মনি চাকমা নামে এক প্রশিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত এই বিদ্যালয়েই পড়ে ঋতুপর্ণা চাকমাও। সে অবশ্য এখন বিকেএসপিতে পড়ছে।