Thank you for trying Sticky AMP!!

‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। ২৩ নাবিক, ক্রুসহ জাহাজটি জিম্মি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা

জিম্মি জাহাজে খাবার-পানি পাঠানোর উপায় খুঁজছে মালিকপক্ষ

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি থাকা ২৩ নাবিকের খাবার ও পানি নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে।

জাহাজটির মালিকপক্ষ বলেছে, জিম্মি নাবিকদের পাশাপাশি জলদস্যুরা জাহাজে থাকায় খাবার ও পানির চাহিদা বেড়েছে। এ নিয়ে জলদস্যুদের সঙ্গে কথা বলা হবে। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে খাবার ও পানি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। জাহাজে সাধারণত হিমায়িত মাছ, মাংস, সবজি এবং ফল, চাল, ডাল, বিস্কুট রাখা হয়।

বাণিজ্যিক জাহাজে কর্মরত একজন নাবিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে যেতে যত দিন সময় লাগে, তার চেয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি খাবার মজুত রাখা হয় জাহাজে। তবে কোনো কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হতে পারে—এমন আশঙ্কায় শুকনো খাবার বেশি দিনের জন্য মজুত রাখা হয়।

এ ছাড়া জাহাজে রান্না, গোসল ও পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানি মজুত রাখা হয়। জাহাজভেদে দিনে ৩ থেকে ৫ টন পানি লাগে। লবণাক্ততার জন্য জাহাজে সাগরের পানি ব্যবহার করা যায় না। তাই জাহাজে পানি সরবরাহ করা হয় সাহায্যকারী জলযান ‘টাগবোটে’ করে।

আমরা দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অপেক্ষা করছি। দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে খাবারের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আলোচনা করব। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজে খাবার ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েও পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা।
মিজানুল ইসলাম, কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা।

জলদস্যুদের কবলে পড়ার সময় এমভি আবদুল্লাহতে ২৫ দিনের খাবার ও পানি মজুত ছিল। সেই হিসাবে এখন ওই জাহাজে যে পরিমাণ খাবার ও পানি আছে, তাতে ২০ থেকে ২১ দিন চলার কথা। তবে এখন জিম্মি নাবিকদের পাশাপাশি জলদস্যুরা জাহাজে অবস্থান করছেন। ফলে খাবার ও পানির চাহিদা বেড়েছে।

খাবার ও পানির বিষয়ে জানতে চাইলে জিম্মি জাহাজের মালিক কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাবার কমে গেলে শুরুতে দস্যুরাই নিজেদের স্বার্থে জাহাজে জিম্মি ও নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে খাবারসংকট যাতে তীব্র না হয়, সে বিষয় নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে।’

মিজানুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অপেক্ষা করছি। দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে খাবারের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আলোচনা করব। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজে খাবার ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েও পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা। এখন যত দ্রুত দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হবে, ততই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাবে।’

Also Read: যেভাবে জলদস্যুতায় নেমেছে সোমালিয়ার জেলেরা

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে সোমালিয়ার জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন।

গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেড এই জাহাজ পরিচালনা করছিল।

জিম্মি করার তিন দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে আসে দস্যুরা। সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার জাহাজটি আগের অবস্থান থেকে ৪০-৪৫ মাইল উত্তরে সরে এসে উপকূলের আরও কাছাকাছি অবস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জাহাজ জিম্মি হওয়ার দিনই আমরা ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ফেডারেশনকে বিষয়টি জানিয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, সোমালিয়ার উপকূলে খাবার ও পানি সরবরাহ করার মত কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর নেই।
সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। তিন মাসের মাথায় মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ছাড়িয়ে এনেছিল কবির গ্রুপ। ওই সময় জাহাজে খাবার ও পানির সংকট দেখা দিয়েছিল।

এমভি জাহান মনিতে ছিলেন নাবিক মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহান মনিতে প্রায় তিন মাসের খাবার মজুত ছিল। এরপরও হিমায়িত খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ দিকে দস্যুরা সপ্তাহে দুটি করে দুম্বা দিত। তবে সমস্যা তীব্র হয় বিশুদ্ধ পানি নিয়ে।

মোহাম্মদ ইদ্রিস আরও বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। এই পথের দূরত্ব বেশি নয়। এ কারণে খাবার ও পানির মজুতও ছিল কম। সোমালিয়ার উপকূল থেকে জাহাজে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটা দেখতে হবে।’

Also Read: ‘জিম্মি থাকা নাবিকদের একটু স্মার্টলি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে’

জিম্মি থাকা নাবিকদের খাবার ও পানির বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে মালিকপক্ষ আলোচনা করেন। সেখানে অনলাইনে যুক্ত থাকা কেনিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে খাবার ও পানি সরবরাহে কোনো মধ্যস্থতাকারীর ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেই বিষয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানায় মালিকপক্ষ। রাষ্ট্রদূত খাবার ও পানি কীভাবে সরবরাহ করা যায়, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

Also Read: ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন, জাহাজে আছে ৬০ জলদস্যু: খুরশেদ আলম

জিম্মি জাহাজের নাবিকদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাজ জিম্মি হওয়ার দিনই আমরা ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ফেডারেশনকে বিষয়টি জানিয়েছি। তবে সমস্যা হচ্ছে, সোমালিয়ার উপকূলে খাবার ও পানি সরবরাহ করার মতো কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর নেই।’

সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা বিশুদ্ধ পানি নিয়ে। জিম্মি অবস্থায় এখন পানি রেশনিং করতে হবে। এখন শুধু রান্না ও খাবারের জন্য পানি ব্যবহার করতে হবে। তা–ও বেশি দিন চালিয়ে নেওয়া যাবে না। সোমালিয়ার উপকূলে টাগবোটে করে জাহাজে পানি সরবরাহ করাটাও কঠিন। এরপরও বিকল্প কোনো উপায় বের করার পথ খুঁজছি আমরা।’

Also Read: নাবিকসহ জাহাজ মুক্ত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে: হাছান মাহমুদ

Also Read: জিম্মি জাহাজ আবারও সরিয়ে নিয়েছে দস্যুরা