Thank you for trying Sticky AMP!!

খুলনা সিটি নির্বাচনে সারা দিন যা হলো

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ভালো ছিল। হাজী ফয়েজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টায়, বয়রা, খুলনা

কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার সকালে ভোটের শুরুর দিকে কেন্দ্রগুলো ফাঁকা থাকলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ে। খুলনা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, বেলা দুইটা পর্যন্ত ৩৫ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে।

খুলনায় সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল চারটায় শেষ হয়। বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

Also Read: ছবিতে খুলনার ভোট

ভোট গ্রহণ শুরুর পর প্রথম ঘণ্টায় ভোটার উপস্থিতি ছিল একবারে হাতে গোনা। সকাল সাড়ে আটটায় ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে লায়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পুরুষদের একটি কেন্দ্রে কোনো কক্ষের সামনে তেমন ভোটারই দেখা যায়নি। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা ভোটারদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।

Also Read: তালুকদার খালেকের কেন্দ্রে প্রথম এক ঘণ্টায় ভোটার উপস্থিতি কম

আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর কেন্দ্র ২২ নম্বর ওয়ার্ডের পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতেও সকালে ভোটার উপস্থিতি বেশ কম ছিল। সকাল ৯টা পর্যন্ত পুরুষদের কেন্দ্রে ভোট পড়ে মাত্র ৪৫টি। ভোটারদের কোনো সারি চোখে পড়েনি। বেলা ১১টার পর থেকে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

Also Read: খুলনা শহরে ভোটার কম, শহরতলির ভিন্ন চেহারা

তবে শহরতলির কয়েকটি এলাকায় সকাল থেকেই ভোটারদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বেলা একটায় শহরতলি হিসেবে পরিচিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেয়ানা এলাকার চারটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, নারী ও পুরুষ ভোটারদের পৃথক কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও ভোটাররা লাইনে এসে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। উত্তর দেয়ানা এলাকার দেয়ানা মহিলা দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত ভোট পড়ার হার ছিল ৫১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা যেসব কেন্দ্রে ঘুরেছেন, তার বেশির ভাগ কেন্দ্রেই নারী ও বয়স্ক ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি। অনেক কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী ভোটাররাও ভোট দিয়েছেন।

Also Read: আঙুলের চাপে ইভিএম বিকল, পরে দীর্ঘ লাইন

এদিকে ইভিএমে ভোট দেওয়া নিয়ে ভোটারদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। ইভিএমে একটু ধীরে ভোট হচ্ছে বলে নিজের ভোট দেওয়া শেষে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নিজের ভোট শেষে ইভিএম–বিভ্রাট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বেলা ১১টার দিকে খুলনা নগরের পশ্চিম বানিয়াখামার বিহারি কলোনি এলাকার সেন্ট জেভিয়ার্স হাইস্কুল ডাবল শিফট (মূল ভবন) ভোটকেন্দ্রের ৩ নম্বর ভোটকক্ষে প্রবেশের পর সেখানে থাকা সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে বলছিলেন, ‘স্যার, আমাকে গোপন কক্ষে গিয়ে কীভাবে ভোট দিতে হয়, তা দেখিয়ে দিতে হচ্ছে। বারবার গোপন কক্ষে যেতে হচ্ছে। সিসি ক্যামেরা আছে তো। অস্বস্তি লাগছে।’

Also Read: নারীদের ভিড়, পুরুষদের লাইন ফাঁকা

সকাল পৌনে ১০টার দিকে খুলনা শহরের পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা লক্ষ্মী রানী দাসের আঙুলের ছাপ মেলেনি। প্রায় ১০ মিনিট চেষ্টার পরও সেটি মেলেনি। পরে বৈধ ভোটার হিসেবে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অনুমতি দেওয়ার পর তিনি ভোট দেন।

আবার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শেখপাড়ায় পল্লীমঙ্গল শেখ হাতেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সত্তরোর্ধ্ব এক নারী ভোটারের আঙুলের চাপে ইভিএম বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ওই কেন্দ্রের একটি কক্ষে ২০ থেকে ২৫ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। এতেই দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। পরে আরেকটি যন্ত্র বসিয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারী ভোটার এত জোরে ইভিএমের ব্যালট প্যানেলে চাপ দিয়েছিলেন যে এটা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে টেকনিশিয়ান এনে আরেকটি যন্ত্র বসানো হয়েছে।

বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, যেসব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা ছিল, সেসব ওয়ার্ডের কেন্দ্রে ভোটারদের চাপ বেশি ছিল। নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের প্রার্থীরা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুপুর ১২টার দিকে ওই ওয়ার্ডে দুটি কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রটির সামনের সড়কে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কেন্দ্রে ঢোকার মূল ফটকে ভোটারদের দীর্ঘ সারি। কক্ষগুলোর সামনেও সারিবদ্ধভাবে নারী ও পুরুষেরা ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রতিটি কক্ষে আটজন কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টরা আছেন। মেয়র প্রার্থীদের এজেন্টদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

সকাল ৯টা ২০ মিনিটে নগরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। ভোট শেষে জনগণের রায় মেনে নেবেন বলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ভোটের পরিবেশ খুবই ভালো। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে। সকালবেলা অনেক ভোটকেন্দ্রে গিয়েছি। নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি, আরও ভোটার আসছেন। আমার মনে হয়, অনেক সুন্দর পরিবেশে ভোট উৎসব হচ্ছে।’

Also Read: ভোট দিয়ে তালুকদার খালেক বললেন, জনগণ যে রায় দেবে, তা মেনে নেব

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়াল সকাল ১০টায় নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বানিয়া খামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন। ভোট দেওয়া শেষে আবদুল আউয়াল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। সারা দিন যদি এ রকম পরিবেশ থাকে, তাহলে মানুষ ভোট দিতে পারবে। প্রকাশ্য বা গোপন কোনো ষড়যন্ত্র না থাকলে আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

Also Read: খুলনায় ইভিএমে বিভ্রাটের অভিযোগ ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থীর

অনেক ভোটার ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বি কে ইউনিয়ন ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা আবুল বাশার বলেন, ‘গত কয়েকবার ভোট দিতে পারিনি। কেন্দ্রে এসে শুনি আমার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। এবার ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। আসলে ভোট এমনই হওয়া উচিত।’

Also Read: স্ত্রী ভোটকেন্দ্রে, দুই মাসের ছেলে কোলে নিয়ে বাইরে আরাফাত

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। তাঁদের মধ্যে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন পুরুষ, ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী। এবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। মোট ২৮৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৩২টি কক্ষে ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা হলেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল আউয়াল, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, জাকের পার্টির প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন ও টেবিলঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।