Thank you for trying Sticky AMP!!

মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পকে নিয়েও ইউরোপে সাফল্য পেল না পিএসজি

রিয়ালের মতো ‘তারার মেলা’ বসিয়েও পিএসজি যেভাবে ব্যর্থ

শেষ বাঁশি বাজতেই অধিনায়কের বাহুবন্ধনী খুলে ফেললেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। হাঁটা ধরলেন টানেলের দিকে। পেছনেই লিওনেল মেসিএকটু আগে যা ঘটে গেল, এরপর সবুজ মাঠটিকে হয়তো আর সহ্যই হচ্ছিল না পিএসজির দুই তারকার। বাইলাইনের কাছাকাছি যাওয়ার পর এমবাপ্পেকে থামানোর চেষ্টা করলেন পিএসজির এক কর্মকর্তা। হয়তো সতীর্থদের সঙ্গে মাঠে আরও কিছু সময় থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

এমবাপ্পে পাত্তা দেননি। বায়ার্ন মিউনিখ তারকা কিংসলে কোমানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হারিয়ে টানেলে ঢুকে যান। সেই সঙ্গে ইউরোপে এমবাপ্পের পিএসজির সাফল্য পাওয়ার আশাও যেন অন্ধকার কোনো টানেলে হারিয়ে গেল। যেখানে ১১ বছরের ব্যয়বহুল একটি প্রজেক্টের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যটির পাশে গোটা গোটা হরফে লেখা হলো—০

Also Read: এমবাপ্পেকে ‘জগাখিচুড়ি’ পিএসজি ‘ছাড়তেই হবে’

পিএসজির টানা ইউরোপীয় ব্যর্থতা মনে করিয়ে দিচ্ছে বাংলা ভাষায় প্রচলিত সেই প্রবাদকে—অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট! ফরাসি ক্লাবটির সঙ্গে কি এটাই ঘটল?
একঝাঁক তারকা এনে মাঠে দাঁড় করিয়ে দিলেই যে সাফল্য আসে না, সেই উদাহরণ পিএসজির সামনেই ছিল। কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেনি কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবটি। টাকা ও তারকাখ্যাতিকে পুঁজি করে সাফল্য পেতে চেয়েছিল পিএসজি। কিন্তু ইউরোপে অর্জনের খাতাটা ১১ মৌসুম শেষেও সেই শূন্যই।

হতাশ করেছেন মেসি

পিএসজির আগে ‘নক্ষত্রপুঞ্জ’ বানিয়ে সাফল্য বগলদাবা করতে চাওয়ার সর্বশেষ উদাহরণ রিয়াল মাদ্রিদ। মাদ্রিদের ক্লাবটির সেই দলটি এখনো সেই ‘গ্যালাকটিকোস’ নামে পরিচিত। রিয়ালের প্রথম ‘তারকাপুঞ্জ’ বা ‘তারার মেলা’র স্থায়িত্ব ছিল ২০০০–২০০৬ পর্যন্ত। যদিও ‘গ্যালাকটিকোস’ নিজেদের চূড়ান্ত সময় পার করেছে ২০০২ সালে রোনালদো নাজারিও আসার পর।

এ সময় যে খেলোয়াড়েরা রিয়ালের হয়ে খেলেছেন, সেই নামগুলো শুনলে প্রতিপক্ষের শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাওয়ার কথা—লুইস ফিগো, জিনেদিন জিদান, রোনালদো নাজারিও, ডেভিড বেকহাম, মাইকেল ওয়েন, রাউল গঞ্জালেস, রবার্তো কার্লোস, সের্হিও রামোস, রবিনিও। বলা যায়, প্রায় প্রতিটি পজিশনে তর্কযোগ্যভাবে সে সময়ের সেরাদের এনে দল সাজিয়েছিল রিয়াল।

Also Read: গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মেসি গায়েব হয়ে যান, দাবি পিএসজির সাবেক উইঙ্গারের

কিন্তু সেই দলটি ইউরোপের ময়দানে সাফল্য পায়নি। ২০০১–০২ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেও সেই দলে ‘নক্ষত্রপুঞ্জ’ এর মধ্যে ছিলেন শুধু রাউল গঞ্জালেস ও জিদান। রিয়াল তত দিনে নক্ষত্রপুঞ্জ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু তারপর স্কোয়াডকে ধীরে ধীরে চাঁদের হাট বানিয়েও ইউরোপে সাফল্য না পাওয়ায় ‘গ্যালাকটিকোস’কে ব্যর্থ প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখা হয়।

রিয়ালের সেই পথেই হাঁটার উদ্যোগ নিয়েছিল পিএসজিও। ২০১১ সাল থেকে যাত্রা শুরু হলেও পিএসজির গ্যালাকটিকোস গড়ার কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে দামের রেকর্ড গড়ে নেইমার ও এমবাপ্পেকে দলে টানার পর। কিন্তু বর্তমানের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলারও পারেননি পিএসজিকে সাফল্য এনে দিতে পারেননি। ২০১৯–২০ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হার ইউরোপে এখন পর্যন্ত তাদের সেরা সাফল্য।

হারের পর মাঠ ছাড়ছেন এমবাপ্পে

নেইমার–এমবাপ্পেতে সাফল্য না আসায় ২০২১ সালের দলবদলে সুযোগ পেয়ে নিয়ে আসা হয় মেসিকেও। মেসি–নেইমার–এমবাপ্পেকে নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা দুই মৌসুম শেষ ষোলোতেই থেমেছে পিএসজির অভিযাত্রা। গত ৭ মৌসুমে এ পর্যন্ত পাঁচবার শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিতে হলো প্যারিসের ক্লাবটিকে।

তবে অতীতের যেকোনো বিদায়ের চেয়ে এবারের বিদায়টি যেন একটু বেশিই তাৎপর্যপূর্ণ। এই হার দিয়ে সম্ভবত পিএসজির গড়া ‘তারকাপুঞ্জ’ও ভেঙে পড়ল! কেউ কেউ আবার এরই মধ্যে পিএসজি–প্রজেক্টকে ব্যর্থ ও বাতিল বলেও রায় দিয়েছেন।

Also Read: মেসি-এমবাপ্পেদের বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ

মৌসুমের শুরুতে মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তি নবায়ন স্রেফ সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপের পর সামনে আসে নতুন খবর। চুক্তির শর্তে বনিবনা না হওয়ায় পিএসজিতে আর নিজের সময় বাড়াবেন না মেসি। গ্রীষ্মের দলবদলেই নাকি ক্লাব ছাড়বেন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকা। নেইমারও নাকি গত কিছুদিন ধরে নিজের জন্য নতুন ক্লাব খোঁজা শুরু করেছেন। এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের বেশ কিছু ক্লাবের সঙ্গে নাকি কথাও বলেছেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।

Also Read: মেসি–এমবাপ্পেরা ‘সর্বোচ্চ’ দিলেও পিএসজি পেছাল ২৮ বছর

আর এমবাপ্পে তো দুই মৌসুম ধরে ক্লাব ছাড়তে উন্মুখ হয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিককে ফিরিয়ে দিয়ে নতুন চুক্তিতে পিএসজিতে থেকে যান এমবাপ্পে। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায়ের পর আবার সামনে এসেছে তাঁর প্যারিস ছাড়ার গুঞ্জন। টানা ব্যর্থতার পর এমবাপ্পেকে নিয়ে পিএসজি হাল ছেড়ে দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত প্রতিভাবান তারকা নিয়েও কেন পারল না পিএসজি? রিয়ালের গ্যালাকটিকোসদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয় দলটির রক্ষণ–দুর্বলতা। রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ নাকি রক্ষণভাগের খেলোয়াড় কেনার পেছনে বেশি টাকা খরচ করতে রাজি ছিলেন না।

রামোস–হাকিমিরাও ব্যর্থ

বেতন না বাড়ানোয় ক্লাব ছেড়েছিলেন সে সময়ের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্লদ ম্যাকলেলে। অর্থনৈতিক কারণে কথা আগানোর পরও আর্সেনাল থেকে আনতে পারেনি প্যাট্রিক ভিয়েরাকে। রক্ষণ নিয়ে এই উদাসীনতায় মূলত রিয়ালকে সে সময় শিরোপা লড়াই থেকে পিছিয়ে দিয়েছিল।

একই সমস্যা পিএসজির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। ফরোয়ার্ড লাইনে বিশ্বসেরা তারকা আনলেও মিডফিল্ড এবং ডিফেন্সে যথেষ্ট মানসম্পন্ন খেলোয়াড় নেই। আর যাঁরা আছেন তাঁদেরও অনেকে লড়ছেন চোটের সঙ্গে। যে কারণে বড় ম্যাচে প্রায় নিয়মিতই পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়েছে এবং বেশির ভাগ সময়ে সে পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি ক্লাবটি। এর সর্বশেষ সাক্ষী বায়ার্নের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর দুই ম্যাচ। ভারসাম্যহীন এক দল নিয়ে বায়ার্নের বিপক্ষে তেমন কোনো হুমকিই তৈরি করতে পারেনি তারা। পারেনি ডিফেন্সে শক্ত দেয়াল গড়তেও।

Also Read: কথা বললেই এমবাপ্পে মেসির চেয়ে ভালো, ব্যস ক্লাসরুম শান্ত

দলের তারকাদের নিজেদের মাঝে সমন্বয়হীনতাও পিএসজির ব্যর্থতার আরেরকটি বড় কারণ। ছোট দলগুলোর বিপক্ষে এই সমন্বয়হীনতা চোখে না পড়লেও বড় ম্যাচে দলের তারকারা হয়ে থাকেন একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। মাঠের বাইরে নেইমার–এমবাপ্পের ঝগড়া তখন মাঠেও অদৃশ্যভাবে উপস্থিত থাকে। এর ফলে যে স্পিরিটে একটি দল জেগে ওঠে সেটি পুরোপুরিভাবেই অনুপস্থিত থাকে।

আর সেই স্পিরিটের অভাবই একটি দলকে অন্ধকার টানেলে টেনে নিতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাই চেলসি কিংবদন্তি জো কোলের সেই কথাটি আসলেই সত্যি কি না, তা নিয়ে ভাবতে হয় ‘প্যারিস সেন্ট–জার্মেই প্রজেক্টটি তৈরি হয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের জন্য এবং তারা এর থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছে এটি ব্যর্থ হতে চলেছে।’