Thank you for trying Sticky AMP!!

আর্সেনাল ছুটছে দারুণ ছন্দে

আর্জেন্টিনার পথ ধরে তাদের অপেক্ষার পালাও কি ফুরাবে এবার

একটি বিশ্বকাপ ট্রফির জন্য ৩৬ বছর অপেক্ষায় ছিল আর্জেন্টিনা। গত ১৮ ডিসেম্বর লুসাইলে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরে লিওনেল মেসিরা আর্জেন্টাইনদের সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন। তবে এ মৌসুমে আর্জেন্টিনার পথ ধরে শিরোপা জয়ের দীর্ঘ অপেক্ষার আক্ষেপ মোচন করতে পারে ইউরোপিয়ান ফুটবলের কয়েকটি ক্লাবও।

অপেক্ষার পালা ফুরানোর দলে মৌসুম শেষে যোগ দিতে পারে আর্সেনাল, নাপোলি কিংবা লাঁসের মতো দলগুলো। লম্বা সময় পর শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর তারাও। পাশাপাশি চমক দেখাতে পারে ইউনিয়ন বার্লিনের মতো ‘পুচকে’ দলও।

শিরোপা জয়ের পথে আছে আর্সেনাল

দুই দশক পর আর্সেনালে শিরোপা স্বপ্ন

‘দ্য ইনভিন্সিবল’ বা অপরাজেয় ২০০৩-০৪ মৌসুম থেকে আর্সেনালের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শব্দটি। কিংবদন্তি আর্সেন ওয়েঙ্গারের সেই দলটি কোনো ম্যাচ না হেরেই সেবার লিগ শিরোপা জিতেছিল। ৩৮ ম্যাচে ২৬ জয়ের বিপরীতে ছিল ১২ ড্র। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চেলসির চেয়ে ১১ পয়েন্ট বেশি নিয়ে ট্রফি জিতেছিল ‘গানার’রা।

কে জানত, অপরাজেয় হয়ে শিরোপা জেতার পরের ২০ বছরে আর কোনো লিগ জেতা হবে না দলটির। এর মধ্যে আরেকটি লিগ শিরোপা জিততে না পারার হতাশা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন ওয়েঙ্গারও। তাঁর বিদায়ের আগে-পরে লম্বা সময় ধরে ব্যর্থতায় হাবুডুবু খেয়েছে দলটি। শীর্ষ স্থান দূরে থাক, সেরা চারে থাকাও হয়ে উঠছিল না লন্ডনের ক্লাবটির।

Also Read: চেলসি, সিটি না লিভারপুল—বাকি মৌসুম কোন পথে হাঁটবে আর্সেনাল

ব্যর্থতার সেই লম্বা পথ পেরিয়ে এ মৌসুমে আর্সেনাল যেন বদলে যাওয়া এক দল। মিকেল আর্তেতার জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় এখন শিরোপা স্বপ্নে মজেছে উত্তর লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। ওয়েঙ্গারের বিদায়ের পর থিতু হতে পারেননি কোচ হয়ে আসা উনাই এমেরি।

এরপরই দলে আসেন গার্দিওলার শিষ্য হিসেবে পরিচিত আর্তেতা। লিগে নিজের শুরুটা ভালো হয়নি তাঁরও। তবে আর্তেতার দর্শনে আস্থা রেখেছিল আর্সেনাল কর্তৃপক্ষ। আর এ মৌসুমে দলের খোলনলচে বদলে দিয়েছেন এই স্প্যানিশ কোচ। খেলোয়াড় কেনা থেকে কৌশল সাজানো সব জায়গাতেই দেখিয়েছেন চমক।

Also Read: ভক্তদের ভালোবাসার চাপে ব্লক হয়েছিল মেসির ইনস্টাগ্রাম

বুকায়ো সাকা, মার্টিন ওডেগার্ড কিংবা গ্যাব্রিয়েল জেসুসদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে এনেছেন আর্তেতা। এখন প্রায় দুই দশক পর শিরোপা জেতার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে আর্সেনাল। ১৯ ম্যাচে ১৬ জয়, ২ ড্র ও ১ হারে শীর্ষে থাকা আর্সেনালের পয়েন্ট ৫০। এক ম্যাচ বেশি খেলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ৪৫।

আর্সেনাল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে না হারলে অপরাজেয় থাকার সেই দিন আবার ফেরানোর সুযোগও ছিল তাদের। তবে অপরাজেয় না হোক, দাপট ধরে রেখেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পারলে লন্ডনের লাল অংশে আবার উৎসব ফিরবে। বহুদিন তৃষিত থাকার পর শিরোপা জয়ের উৎসবটাও যে বাঁধনহারা হবে, তা বলাই যায়। এখন মৌসুমের শেষ ভাগে আর কোনো নাটকের মঞ্চায়ন না হলেই হয়!

চলতি মৌসুমে দূরন্ত নাপোলি

আর্জেন্টিনা পেরেছে, নাপোলি কি পারবে

১৮ ডিসেম্বরের আগপর্যন্ত একই সমতলে ছিল আর্জেন্টিনা ও নাপোলি। সেই দিনের আগপর্যন্ত কাকতালীয়ভাবে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় ও নাপোলির সর্বশেষ লিগ শিরোপা জয়ের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল একটি নাম—ডিয়েগো ম্যারাডোনা।

আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো ম্যারাডোনা ইতালির নোংরা, অপরাধপ্রবণ এবং অবহেলিত একটি অঞ্চল নেপলসে এসে তাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছিলেন। ম্যারাডোনার হাত ধরে ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে সর্বশেষ লিগ শিরোপা জিতেছিল নাপোলি। এরপর অপেক্ষার পালা শুধু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে, কাঙ্ক্ষিত শিরোপাটি আর ধরা দেয়নি।

Also Read: ম্যারাডোনার জন্মদিনে আরও এক ‘নতুন ম্যারাডোনা’র গল্প

তবে আর্তেতা যেমন আর্সেনালকে বদলে দিয়েছেন, তেমনই লুসিয়ানো স্পালেত্তি নামের এক জাদুকর বদলে দিয়েছেন নাপোলিকে। ২০২১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর দলকে রোমাঞ্চকর ব্র্যান্ডের ফুটবল খেলাচ্ছেন স্পালেত্তি। ‘ক্যাভারাডোনা’ তথা ‘নতুন ম্যারাডোনা’ খ্যাত খিচা কাভারাস্কেইয়া, পিতর ইয়েলনেস্কি এবং ভিক্তর ওশিমেনদের মতো তরুণ তুর্কিদের দিয়ে মাঠে ফুটিয়ে তুলছেন নিজের ফুটবল দর্শন, যা প্রায় ৩৩ বছর পর আবার শিরোপা স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছে নেপলসদের মনে।

Also Read: পেনাল্টি ঠেকানো নিয়ে দি মারিয়াদের আগেই আশ্বস্ত করেছিলেন মার্তিনেজ

নাপোলির বদলে যাওয়ার আভাসটা আগের মৌসুমেই পাওয়া গিয়েছিল। সেবার অবশ্য দুই মিলানের চেয়ে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় হয়ে লিগ শেষ করতে হয়েছিল নাপোলিকে। এবার শুরু থেকেই দাপট ধরে রেখে এগিয়ে চলেছে নাপোলি। ২০ ম্যাচ শেষে ১৭ জয়, ২ ড্র ও ১ হারে তাদের পয়েন্ট ৫৩। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্টার মিলানের চেয়ে ১৩ পয়েন্টে এগিয়ে আছে স্পালেত্তির দল। অবিশ্বাস্য কোনো নাটকীয়তা ছাড়া এখান থেকে নাপোলির শিরোপা না জেতা সম্ভব নয়, বলে দেওয়াই যায়!

শিরোপ দৌড়ে আছে ইউনিয়ন বার্লিন

স্বপ্ন দেখছে ইউনিয়ন বার্লিন

২০১৯-২০ মৌসুমের আগপর্যন্ত দলটি কখনো বুন্দেসলিগাতে খেলার সুযোগই পায়নি। পূর্ব বার্লিনের প্রথম দল হিসেবে সেবারই প্রথম স্তরের লিগে খেলার সুযোগ পায় ইউনিয়ন বার্লিন। তারা কী চমক নিয়ে আসছে, তখন কেউ বুঝতে পারেনি। সে মৌসুমে লিগ শেষ করেছে ১১ নম্বরে থেকে। পরের দুই মৌসুমে তাদের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৫ ও ৭। উন্নতির সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার ইউনিয়ন বার্লিন স্বপ্ন দেখছে বুন্দেসলিগা জয়ের।

অবিশ্বাস্য হলেও ইউনিয়ন বার্লিন এখন পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষে থাকা ঐতিহ্যবাহী বায়ার্ন মিউনিখের চেয়ে ১ পয়েন্ট পিছিয়ে তারা। ১৮ ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা বায়ার্নের পয়েন্ট ৩৭, ইউনিয়ন বার্লিনের ৩৬। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে কোলনের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় দিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বুন্দেসলিগার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ওঠে তারা। সেই সময় টানা ৭ সপ্তাহ শীর্ষে থাকে ইউনিয়ন বার্লিন। এরপর কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলায় শীর্ষ স্থান ধরে রাখতে পারেনি তারা।

Also Read: বিশ্বকাপ ফাইনালে কেন স্কালোনিকে বিভ্রান্ত মনে হয়েছিল দি মারিয়ার

তবে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন এখনো বেশ ভালোভাবেই বেঁচে আছে তাদের। সর্বশেষ তিন লিগ ম্যাচে জিতে পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের অবস্থানও দৃঢ় করেছে ইউনিয়ন বার্লিন। এই ক্লাবটিকে বদলে দেওয়ার মূল কারিগর কোচ আরস ফিশের। ২০১৮ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর দলকে বদলে দেন এই সুইস কোচ।

মাছ ধরতে পছন্দ করা এই কোচই ইউনিয়ন বার্লিনকে বুন্দেসলিগার ট্রেন ধরিয়ে দেন। কীভাবে ‘অখ্যাত’ একদল খেলোয়াড়কে দিয়ে একটি ক্লাবকে বড় স্বপ্ন দেখানো যায়, তা বেশ ভালোভাবেই দেখিয়েছেন এই সুইস কোচ। এখন বাকি পথটা এমন দাপটের সঙ্গে পার করতে পারলে রূপকথার জন্ম হতেই পারে!

পিএসজিকে চোখ রাঙাচ্ছে লাঁস

মেসি–নেইমার–এমবাপ্পেদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তারা

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজেদের ইতিহাসের একমাত্র লিগ ওয়ানের শিরোপাটি জিতেছিল লাঁস। এরপর ২০০১-০২ মৌসুমে রানার্সআপ হলেও আর কখনো শিরোপার কাছাকাছি যেতে পারেনি তারা। সেই দলটিই কিনা এবার চোখ রাঙাচ্ছে লিওনেল মেসি-নেইমার-কিলিয়ান এমবাপ্পেদের পিএসজিকে।

Also Read: মেসি–এমবাপ্পে–নেইমারদের দলের বিপক্ষে গোল করা কেন সহজ

২০১৪-১৫ মৌসুমে অবনমিত হওয়ার পর ২০২০-২১ মৌসুম পর্যন্ত আর শীর্ষ স্তরে ফেরা হয়নি তাদের। মূলত ২০২০ সালে ফ্রাঙ্কা হাইসি দায়িত্ব নিয়ে বদলে দেন লাঁসকে। তাঁর অধীনে লিগ ওয়ানে ফিরে আসার পর প্রথম দুই মৌসুমে ৭ নম্বরে থেকে শেষ করে ক্লাবটি। আর এবার চোখ রাঙাচ্ছে শিরোপা ধরে রাখার পথে থাকা পিএসজিকে।

২০ ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা পিএসজির চেয়ে মাত্র ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে তারা। এর মধ্যে নতুন বছরের শুরুতে পিএসজিকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে লাঁস। এখন অপেক্ষা ৩ পয়েন্টের ব্যবধান ঘুচিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। ছন্দটা ধরে রাখতে পারলে কাজটা অসম্ভবও নয়।