Thank you for trying Sticky AMP!!

আগামীকাল কাতারের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপে অভিষেক হতে পারে ইকুয়েডরের গোলরক্ষক এরনান গালিন্দেজের।

বিশ্বকাপ অভিষেকের অপেক্ষায় মেসির জীবনের প্রথম গোল খাওয়া সেই গোলকিপার

রাউল ভালবুয়েনা গোলটি খাওয়ার পর থেকে এখনো নিজেকে গর্বিত মনে করেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, ভালবুয়েনা কে? কোন গোলের কথাই–বা বলা হচ্ছে?
তাহলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক।

ভালবুয়েনা হলেন স্প্যানিশ ক্লাব আলবাসেতের সাবেক গোলরক্ষক। আর ন্যু ক্যাম্পে ২০০৫ সালের ১ মে লা লিগার ম্যাচে তাঁকে ফাঁকি দিয়ে যিনি জাল কাঁপিয়েছিলেন, তিনি লিওনেল মেসি! শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলের সেটাই ছিল আর্জেন্টাইন মহাতারকার প্রথম গোল।

সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ভালবুয়েনা বলেছিলেন, ‘ওদের (বার্সায়) দলে একটা বাচ্চা ছেলে আছে। তবে দারুণ খেলে। আসলেই সে দুর্দান্ত খেলল। মাঠে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই গোল করল (মেসি সেদিন বদলি নেমে যোগ করা সময়ে গোল করেছিলেন)। ম্যাচ শেষে বলটা স্মৃতি হিসেবে আমার কাছে রেখে দিলাম।’

মেসির বয়স তখন ১৭ বছর ৩ মাস ২২ দিন। শীর্ষ স্তরের ফুটবলে তাঁর গোল করার সেই যে শুরু, এখনো চলছেই। তবে সেটা নিশ্চয়ই মেসির ‘জীবনের প্রথম’ গোল ছিল না। বার্সার মূল দলে অভিষেকের আগে যে তিনি স্বদেশি দুই ক্লাব গ্রানদোলি ও নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ এবং পরবর্তী সময়ে বার্সার যুব দলে খেলেছেন।

২০২১ কোপা আমেরিকা কোয়ার্টার ফাইনাল। বাঁয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েও ফ্রি কিক থেকে নেওয়া মেসির শট রুখতে পারেননি গালিন্দেজ

তাহলে মেসি ‘জীবনের প্রথম’ গোলটা করেছিলেন কবে? ফিরে যেতে হবে শৈশবে। মেসির প্রথম ক্লাব ছিল গ্রানদোলি। তিনি ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত রোজারিওর ক্লাবটির হয়ে খেলেছেন। সে সময় শিশুদের নিয়ে একটি চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল।

প্রতিটি দলে ছিল ৭ জন করে খেলোয়াড়। ফাইনালে মেসির দলের প্রতিপক্ষ ছিল এস্ত্রেয়া জুনিয়র্স। সেদিন মেসি যে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জাল কাঁপিয়েছিলেন, তাঁর নাম এরনান গালিন্দেজ। আর সেটাই ছিল আর্জেন্টাইন অধিনায়কের ‘জীবনের প্রথম’ গোল।

Also Read: কোথায়, কীভাবে বানানো হচ্ছে মেসি-রোনালদো-নেইমারদের স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফি

এত দিন পর এ তথ্য বেরিয়ে এল কীভাবে? সেই গোলরক্ষক গালিন্দেজের সৌজন্যে। জন্ম আর্জেন্টিনায় হলেও তিনি এখন ইকুয়েডরিয়ান। গোলবারের নিচে দলটির কাছে সবচেয়ে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠা গালিন্দেজের আগামীকাল বিশ্বকাপে অভিষেকও হতে পারে। কাল রাতে স্বাগতিক কাতারের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে ইকুয়েডর।

বিশ্বকাপ খেলতে কাতারে যাওয়ার আগে ক্রীড়াবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইএসপিএনকে গালিন্দেজ বলেছেন, ‘মেসি ওর জীবনের প্রথম গোল দিয়েছে আমার বিপক্ষে। রোজারিওতে আমরা ছিলাম প্রতিবেশী। আমাদের বয়সও একই (৩৫ বছর)। আমরা প্রায়ই মুখোমুখি হতাম।’

Also Read: বিশ্বকাপের সবচেয়ে দামি কোচ কারা

সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে গালিন্দেজ বলেছেন, ‘তখন এস্ত্রেয়া জুনিয়র্সে খেলতাম। মূলত আমি মিডফিল্ডার ছিলাম। কিন্তু ফাইনালে গোলরক্ষক হিসেবে খেলতে হয়েছিল। টুর্নামেন্টে আমরা একটাই গোল খেয়েছিলাম, যেটা করেছিল মেসি। তবে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। পুরস্কার হিসেবে আমাদের ১০টি বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছিল। ডিভিডিতে পরে আমি ম্যাচটি দেখেছি। মনে হয়েছে আমি একটা দানবের মুখোমুখি হয়েছি।’

গালিন্দেজ ইকুয়েডরের নাগরিকত্ব পেলেও তাঁর পরিবার এখনো আর্জেন্টিনায় থাকে

সেদিন গালিন্দেজের এস্ত্রেয়া মেসির দলকে হারিয়ে দিলেও জীবনযুদ্ধে মেসির চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েন এ গোলরক্ষক। পরবর্তী সময়ে আর্জেন্টিনার স্বনামধন্য ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালে খেলার সুযোগ হলেও কখনো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ওঠেনি।

সেই অভিমানেই হয়তো ২০১২ সালে গালিন্দেজ পাড়ি জমান ইকুয়েডরে। নাম লেখান ইউনিভার্সিদাদ কাতোলিকায়। সেই থেকে ইকুয়েডরেই থাকেন গালিন্দেজ। এ বছর কিছুদিন খেলেছেন চিলিয়ান ক্লাব ইউনিভার্সিদাদ দি চিলিতে। মৌসুম শেষে ফিরেছেন ইকুয়েডরে। নাম লিখিয়েছেন সোসিয়েদাদ দেপোর্তিভা অকাস ক্লাবে।

এক দশক ধরে ইকুয়েডরে থাকলেও দেশটির নাগরিকত্ব পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে গালিন্দেজকে। সে কারণে ইকুয়েডরের জার্সি গায়ে পরতে অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেক দিন। অবশেষে গত বছর কোপা আমেরিকায় পেরুর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয়েছে তাঁর। বিশ্বকাপ বাছাইয়েও খেলেছেন ৬টি ম্যাচ।

Also Read: আবেদনে লাভ হলো না চিলির, বিশ্বকাপে ইকুয়েডর

দেরিতে ইকুয়েডরের নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে গালিন্দেজ বেশ আক্ষেপ করেছেন, ‘কর্তৃপক্ষকে ২০১৬ সালে সব কাগজপত্র (ই–মেইলে) পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা নাকি আমার ফোল্ডার পায়নি। এরপর জানায়, আমি তাদের অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছি। তারা আমাকে আর্জেন্টিনা থেকে জন্মসনদ ও চারিত্রিক সনদ এনে জমা দিতে বলে। সব কাজ সম্পন্ন করার পর নাগরিকত্ব পেয়েছি।’

তবে জন্মভূমি আর্জেন্টিনার চেয়ে ইকুয়েডরকেই এখন আপন মনে হয় গালিন্দেজের, ‘ইকুয়েডরে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বছরে ৩৪০ দিন এখানেই থাকি। ১০ বছর ধরে এভাবেই চলছে। আর্জেন্টিনায় খুব অল্প সময়ের জন্য যাওয়া হয়। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে চলে আসি। আর্জেন্টিনায় কদিন থাকলেই কিটোকে (ইকুয়েডরের রাজধানী) মিস করতে শুরু করি। এই শহরের সবকিছু আমি খুব উপভোগ করি।’

Also Read: বিশ্বকাপের সবচেয়ে দামি দল কোনটি

শৈশবে মেসির সঙ্গে প্রায়ই দেখা হলেও পরবর্তী সময়ে দুজনের জীবনের বাঁক বদলে যায়। নিজেকে ‘আজকের মেসি’ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি চলে যান স্পেনে, গালিন্দেজ আরও কয়েক বছর থেকে যান আর্জেন্টিনায়। সর্বশেষ গত বছর কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা–ইকুয়েডর ম্যাচে মুখোমুখি হন তাঁরা।

কাতার বিশ্বকাপেই আবার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে মেসি–গালিন্দেজের। সে ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা–ইকুয়েডর দুই দলকেই উঠতে হবে কোয়ার্টার ফাইনালে। সেটা কি সম্ভব? গালিন্দেজ বিষয়টা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, ‘এটা সহজ নয়। তবে ভাগ্যে থাকলে হতেও পারে। কল্পনা করুন, আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে খেলছি। দেখা যাক, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় কি না।’