Thank you for trying Sticky AMP!!

সবার আগে দরিদ্রদের ভাগ্য ফেরাতে চান লুলা

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ হাসি হেসেছেন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা

ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা–বিতর্কের পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ হাসি হেসেছেন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তাঁর সমর্থকদের মধ্যে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। বিপরীতে জইর বলসোনারোর নির্বাচনী শিবির এখন স্তব্ধ। তবে জয়ের এই আনন্দ ক্ষণস্থায়ী। কেননা, অচিরেই লুলার সামনে দারিদ্র্য, আবাসন ও আমাজন—এই তিন বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রোববার দ্বিতীয় দফার ভোট হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বামপন্থী রাজনীতিক লুলা ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট বলসোনারো পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। আগামী ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন লুলা। এর মধ্য দিয়ে প্রায় এক যুগ পর দেশটিতে ক্ষমতায় ফিরছেন তিনি।

বলসোনারো ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবছরই ব্রাজিলে বন ধ্বংসের পরিমাণ বেড়েছে। তাঁর করপোরেটমুখী উন্নয়ন নীতি এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। এর বিপরীতে লুলার প্রতিশ্রুতি—বনায়ন, জলবায়ু সুরক্ষা এবং সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে ব্রাজিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে। তাই লুলার এবারের মেয়াদে সবার দৃষ্টি থাকবে আমাজন রক্ষা ও আদিবাসীদের নিয়ে নতুন সরকারের নীতির ওপর।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই লুলাকে ওপরের তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দেশের পুনর্গঠন ও দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে তাঁকে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষত বলসোনারোর চার বছরের মেয়াদে ব্রাজিলে যে বিভাজন দেখা দিয়েছে, তার ক্ষত সামলাতে হবে বামপন্থী লুলাকে।

বলসোনারোর আমলে ৩ কোটির বেশি ব্রাজিলবাসী চরম খাদ্যসংকটের ঝুঁকিতে পড়েছে। দরিদ্র হয়েছে ১০ কোটি মানুষ। এ জন্য করোনা মহামারি ও বলসোনারোর নীতিগত ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়। বিশেষত আমাজন বন উজাড়ে বলসোনারোর নীতি বিশ্বজুড়ে ব্রাজিলকে সমালোচিত করেছে।

দেশের লাখ লাখ নারী–শিশু–পুরুষ পর্যাপ্ত খাবার পান না, এটা সাধারণ কোনো বিষয় হতে পারে না।
—লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, ব্রাজিলের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট

নির্বাচনী প্রচারে লুলা এ বিষয়গুলোকে দেশবাসীর সামনে তুলে এনেছিলেন। এমনকি জয় লাভের পর দেওয়া ভাষণেও তিনি বলেছেন, ক্ষমতা নেওয়ার পর ব্রাজিলের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য ফেরানো তাঁর অগ্রাধিকার হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের লাখ লাখ নারী–শিশু–পুরুষ পর্যাপ্ত খাবার পান না, এটা সাধারণ কোনো বিষয় হতে পারে না। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম খাবার উৎপাদনকারী দেশ ও বৃহত্তম প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে... প্রতিদিন ব্রাজিলের প্রত্যেক মানুষের পাতে তিন বেলা খাবার তুলে দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান আমাদের কর্তব্য।’

সাও পাওলোতে নির্বাচনী প্রচারের সময় সমর্থকদের সঙ্গে লুলা দা সিলভা

গত সপ্তাহে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি খোলাচিঠি লিখেছিলেন লুলা। তাতে তিনি তাঁর অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো উল্লেখ করেছিলেন। এই চিঠি উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ভরপুর ছিল। তাই বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেছিলেন, অগ্রাধিকারের এই তালিকা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিশেষত নারী–পুরুষকে সমান মজুরি দেওয়া, হাসপাতালগুলোয় অস্ত্রোপচার ও শারীরিক পরীক্ষার জন্য মানুষের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ঘোচানো এবং সব নবজাতকের জন্য ডে–কেয়ারের ব্যবস্থা করা বেশ কঠিন হয়ে যাবে। যদিও এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায় ও অর্থায়ন নিয়ে লুলা বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে দেশবাসী তাঁর কথায় ভরসা রেখেছেন। প্রায় এক যুগ পর তাঁর ক্ষমতায় ফেরার পথ উন্মুক্ত করেছেন।  

Also Read: ব্রাজিলে লুলার প্রত্যাবর্তন: ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আমাজনের ক্ষত সারবে কি

দারিদ্র্য দূর করার বিষয়ে লুলা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার অনেক কিছুই তিনি নিজের প্রথম মেয়াদে (২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত) বাস্তবায়ন করেছিলেন। তিনি দেশবাসীকে সাধ্যের মধ্যে আবাসন সুবিধা এবং গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও পানির সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে জ্বালানি–পরিবহনসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, কর সংস্কার ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন লুলা।

Also Read: বিশ্বকে বলতে চাই, ব্রাজিল ফিরে এসেছে

লুলা তাঁর প্রথম মেয়াদে ‘বোলসা ফ্যামিলিয়া পোভার্টি–রিলিফ প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছিলেন। এর আওতায় দরিদ্র পরিবারগুলো মাসে ১১০ ডলার করে সরকারি সহায়তা পেত। এ ছাড়া পরিবারে ৬ বছরের কম বয়সী শিশু থাকলে অতিরিক্ত ৩০ ডলার দেওয়া হতো মাসে। করোনা–পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে লুলা এই প্রকল্প কীভাবে এগিয়ে নেবেন, সেটা এখন বড় প্রশ্ন।

Also Read: বলসোনারোকে হারালেন লুলা, বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন

অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে লুলাকে। ব্রাজিলের ন্যাশনাল কংগ্রেসে বলসোনারোর দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। বড় কৃষি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন অনেক কংগ্রেসম্যান নির্বাচনে বলসোনারোকে সমর্থন দিয়েছেন। তাঁরা আমাজন রক্ষায় লুলার যেকোনো উদ্যোগ পার্লামেন্টে আটকে দিতে পারেন কিংবা বাধা তৈরি করতে পারেন।  

Also Read: শেষ মুহূর্তের জরিপেও এগিয়ে লুলা, চূড়ান্ত ভোট গ্রহণ কাল

বলসোনারো ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবছরই ব্রাজিলে বন ধ্বংসের পরিমাণ বেড়েছে। তাঁর করপোরেটমুখী উন্নয়ন নীতি এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। এর বিপরীতে লুলার প্রতিশ্রুতি—বনায়ন, জলবায়ু সুরক্ষা এবং সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে ব্রাজিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে। তাই লুলার এবারের মেয়াদে সবার দৃষ্টি থাকবে আমাজন রক্ষা ও আদিবাসীদের নিয়ে নতুন সরকারের নীতির ওপর।

Also Read: বলসোনারোকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যুক’ বললেন লুলা