ভাসমান পৃথিবীর শিল্পী

এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক কাজুও ইশিগুরো। তাঁকে নিয়ে আয়োজন
এবারের নোবেলজয়ী লেখক কাজুও ইশিগুরো
এবারের নোবেলজয়ী লেখক কাজুও ইশিগুরো

কাজুও ইশিগুরোর নাম এ বছরের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা হওয়ার সময়টাতে আমি ঢাকার এক টিভির স্টুডিওতে, নোবেল কে পেতে পারেন তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যস্ত। হঠাৎই নোবেল পুরস্কার ওয়েবসাইটের লাইভ পর্দায় দেখলাম ইশিগুরো নামটা, আর আমার চেহারায় ফুটে উঠল তীব্র এক খুশির অনুভূতি। কেন? পড়া-লেখক নোবেল পেলেন বলে? অচেনা লেখক নোবেল পেলে অখুশি হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ নেই, বরং তাতেও আমরা, নিবেদিতপ্রাণ বিশ্বসাহিত্যের পাঠকেরা আনন্দিতই হই নতুন এক ভালো লেখকের নাম জানা গেল তাই। তারপরও সিরিয়াস সাহিত্যপাঠ যেহেতু স্বল্পায়তন এই জীবনে আরও স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রতিদিনকার পড়াশোনার সময় বের করে নেওয়ার নিয়ত সংগ্রামেরই অন্য নাম, তাই অনেক পড়া হয়েছে এমন লেখক এত বড় সম্মানটা পেলে মুগ্ধ পাঠকের মনে অন্য এক পুলকের অনুভূতি হবেই, তার মনে হবে নিজের পছন্দ বা শিল্পবোধেরই বুঝি একটা ‘কনফারমেশন’ মিলে গেল। আমার অনুভূতিও ছিল তেমনটাই—না, ১৯৯০ সাল থেকে ইশিগুরো নিয়ে আমার এই মাতামাতির একটা যথার্থতা পাওয়া যাচ্ছে তাহলে!
যেহেতু কাজুও ইশিগুরোকে নিয়ে কথা বলছি, তাই অবশ্যই ‘স্মৃতি’ থেকে বলতে হবে কিছু। আমি প্রথম ইশিগুরো হাতে নিই সেই ১৯৯০-এ। তাঁর ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের অদ্ভুত সুন্দর রিমেইনস্অবদ্যডে শেষ করে স্তব্ধ হয়ে এক টানে পড়ে ফেলি এর আগের উপন্যাস দুটিও—পেইলভিউঅবহিলস্অ্যানআর্টিস্টঅবদ্যফ্লোটিংওয়ার্ল্ড
সে সময় আমাদের জীবনটা ছিল বেশি রকমের শাহবাগকেন্দ্রিক। আমার শাহবাগের বন্ধুরা সবাই জানত, আমি ইশিগুরোর তিন-তিনটে উপন্যাস শুধু পড়েই শেষ করিনি, রীতিমতো ওই লেখকের এজেন্টসুলভ আচরণ করে বেড়াচ্ছি। মনে আছে, পাঠক সমাবেশের সাহিদুল ইসলাম বিজুকে অনেক জোরের সঙ্গে বলেছিলাম ইশিগুরোর তিনটে উপন্যাসই (তখন পর্যন্ত ওই তিনটেই বেরিয়েছে) জলদি ঢাকায় নিয়ে আসতে; কারণ, ‘অনেক চলবে’। আর কবি মারুফ রায়হান সম্পাদিত তখনকার পাঠকপ্রিয় সাহিত্যপত্রিকা মাটিতে ইশিগুরোর প্রথম তিন উপন্যাস নিয়ে বড় একটি লেখাও লিখেছিলাম, সম্ভবত ১৯৯৪ সালে। আরও মনে আছে, কবি সাজ্জাদ শরিফ ও ব্রাত্য রাইসুকে এক সন্ধ্যায় শাহবাগে ব্যাখ্যা করছিলাম ইশিগুরোর সঙ্গে কোথায় কোথায় মিল আছে আমাদের হুমায়ূন আহমেদের। আরও মনে আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষক লেখক-অনুবাদক ফখরুল আলমের সঙ্গে একদিন মোটামুটি বিস্তারিত কথা হয়েছিল রিমেইনস্অবদ্যডে নিয়ে। লর্ড ডারলিংটনের বিরাট ম্যানশনের বাটলার (প্রধান পরিচয়) স্টিভেনসের কৌতুকময় ‘ইংলিশনেস’ নিয়ে কথা বলছিলেন ফখরুল স্যার। আর আমি স্যারকে বলেছিলাম, আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে এই সামান্য বাটলার (সে-ই এর প্রধান চরিত্র) স্টিভেনসের আত্মশ্লাঘার নমুনা দেখে। তার তত্ত্বাবধানে থাকা এই বিশাল বাড়িতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ও জার্মান রাষ্ট্রদূত রিবেনট্রপের মধ্যে সভা হয়েছিল আর এখন স্টিভেনস মনে করছে, যেহেতু সে-ই সভার পুরো আয়োজন, খাওয়াদাওয়া—এসবের দায়িত্ব নিখুঁতভাবে সম্পাদন করেছিল সেদিন, তাই পৃথিবীর ইতিহাসেই এক অনেক বড় অবদান রাখতে পেরেছে সে। তার এই নিজেকে নিয়ে বিনা কারণে গর্বিত হওয়ার বোধটুকুর মধ্যে বিরাট এক কৌতুক আছে—টিপিক্যাল বৃটিশ-মানস পৃথিবীতে তাদের অনেক তুচ্ছ অর্জনকে এমন বড় করেই দেখে, এমনকি ঔপনিবেশিক যুগের অনেক কলঙ্কজনক কাজকেও সভ্যতার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে তারা। মানুষের বিনয়ের নাটকটুকু এবং অন্তঃসারশূন্যতার ফাঁপাটুকু ইশিগুরো এই উপন্যাসে নগ্ন করে দেখিয়েছেন—মঞ্চ নাটকের মতো করে, চোখে আঙুল দিয়ে, কিন্তু কখনোই বেশি কথা না বলে, আমাদের নিজেদের মতো করে বুঝে নিতে দিয়ে। লেখক হিসেবে তাঁর পরিমিতিবোধের সুনাম ছিল প্রচুর (যা পরে তিনি মহা সাড়ম্বরে নষ্টও করেছেন দ্যআনকলসোলড্ উপন্যাসে এসে; সে কথায় পরে আসছি), আর এটার শীর্ষবিন্দু তিনি ছুঁয়েছিলেন রিমেইনস্অবদ্যডেতেই। ১৯৮৯ সালের বুকার পুরস্কার জিতল বইটা, ইশিগুরোকে নিয়ে বিরাট হইচই পড়ে গেল সারা দুনিয়ার পাঠকমহলে। সবাই এ যুগের জেন অস্টেনকে আবিষ্কার করল যেন হঠাৎ। সেই একই বাস্তববাদী ঘরানার লেখা, সম্পূর্ণ সেন্টিমেন্টালিটি বর্জিত, ব্রিটিশ জমিদারকুলের আচার-আচরণ, কপটতা-সংস্কার—এসবের এক ক্ষুরধার ব্যাখ্যা; কিন্তু অস্টেন থেকে আরও স্বল্পায়তনে, মহাবাকসংযম ও পাঠকের স্বাধীন পঠনের ওপর আস্থা রেখে তিনি সূক্ষ্ম হাতে একটানা বুনে গেলেন পরপর তিনটি ‘কমেডি অব ম্যানারস’।

এটুকু বলে শেষ করলে তাঁর প্রতি অন্যায় করা হয়। অস্টেনের সমাজবিষয়ক ধারাবিবরণী যেখানে শেষ, ইশিগুরোর সমাজের প্রবণতাগুলো প্রকাশ্য করার জন্য কার্পেট ধরে টান দেওয়ার সেখানেই শুরু। কার্পেটের নিচে কদর্যতা, সেটা নোংরা এক জগৎ। জেন অস্টেনে আছে আইরনি (বক্রাঘাত) আর ইশিগুরোতে আছে অচঞ্চল, শান্ত-শীতল এক ক্ষমাশূন্যতা। ক্রুর কোনো বিষয়—ওই বিষয়ের নীচতাসহ ফুটিয়ে তুলতে গেলে লেখককেও তা নিয়ে হতে হবে ঔদার্যহীন। ইশিগুরো তা-ই। তিনি রিমেইনস্অবদ্যডেতে প্রায় কিছুই না-বলার মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মনিবের প্রতি ব্রিটিশ ভৃত্যের বিশ্বস্ততার প্রকৃত চেহারা: আত্মপ্রবঞ্চনা। ভৃত্য স্টিভেনসের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় তার মনিব ডার্লিংটনের ভুলটা বোঝা; তাই সে বুঝতেই পারেনি, তার মনিব জার্মান নাৎসি বাহিনীর প্রতি কতটা বন্ধুত্বপরায়ণ ছিলেন, ডানপন্থী উগ্রবাদী এক সংঘটনের সঙ্গে তাঁর কেমন ঘন যোগাযোগ ছিল, কীভাবে দুই ইহুদি পরিচারককে চাকরি থেকে বেরও করে দিয়েছিলেন তিনি। ভয়ংকর! ভয়ংকরতার এই ঘনিয়ে আসা, সবচেয়ে বড় কথা, একবারও সামান্য কোনো বিপৎসংকেত না বাজিয়ে, কোনো দামামা না তুলে—এটা প্রচণ্ড সংযমী ও বিরাট ধীশক্তিসম্পন্ন ইশিগুরোর পক্ষেই কেবল সম্ভব ছিল বাস্তবে রূপ দেওয়া।

একই কাজ তিনি করেছিলেন তাঁর প্রথম দুই উপন্যাসেও—পেইলভিউঅবহিলস্-এ ততটা নয়, যতটা দ্বিতীয় উপন্যাস অ্যানআর্টিস্টঅবদ্যফ্লোটিংওয়ার্ল্ড-এ। পেইলভিউ-তে এক জাপানি মা তসুকো ইংল্যান্ডে একাকীবাসের কালে স্মৃতিচারণা করছে তার ছোট মেয়ের কাছে। মেয়েকে বলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর নাগাসাকিতে তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে থাকার সময়কার কথা। বলছে যে তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিল সে, পরে তার গর্ভে জন্ম নেয় ওই স্বামীর ঘরে তার একমাত্র সন্তান মেয়ে কেইকো। আরও বলছে, তার কী রকম বন্ধুত্ব ছিল সাচিকো নামের এক প্রতিবেশী নারীর সঙ্গে, যার আবার মারিকো নামের মেয়ে ছিল একটা। এটুকু জেন অস্টিনীয় সামাজিক বাস্তববাদ, কিন্তু ভয়ংকরতা হঠাৎ আপনাকে নাড়িয়ে দেবে, যখন আপনি জানবেন, এই প্রতিবেশী সাচিকো বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কায় কীভাবে ধনী এক নারী থেকে একেবারে নিঃস্ব এক মা-তে পরিণত হয়েছে, আর কীভাবে এতসুকো আসলে এগিয়ে যাচ্ছে তার ছোট মেয়েকে তার বড় মেয়ে কেইকোর আত্মহত্যার গল্প বলার দিকে। এটাও যথেষ্ট পাকা হাতের কাজ।

তবে এর চেয়ে বড় কাজ তাঁর অ্যানআর্টিস্ট, যেখানে জাপানে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী এক রাজাকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় আমাদের। সে-ই উপন্যাসের নায়ক, নাম ওনো। ১৯৪৫ সালে বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর ওনো এখন ধিকৃত ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে, যে কিনা ‘দেশটাকে ডুবিয়েছে।’ ‘শিল্পী’, যে থাকবে মানবতার পক্ষে, অশুভের বিপক্ষে, সে দেখা যাচ্ছে শয়তানের সঙ্গে ছিল এক বিছানায়। পুলিশের ইনফরমার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তার আঁকা ছবি তখন ভরা থাকত জাপানি পেইন্টিংয়ের শাশ্বত নান্দনিক ঘরানার বাদ দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রোপাগান্ডার রং, বিন্যাস ও বিষয়বস্তুতে। কিন্তু ইশিগুরোকে আমরা চিনতে পারি ওনোর এই রাজাকারগিরির বিবরণ পড়ে নয়; তাঁকে চেনা যায় সে যখন তার নিজের আঁকা ছবির টেকনিক নিয়ে কথা বলে তখন। রিমেইনস্অবদ্যডের স্টিভেনসের মতোই নিজেকে এ সময় ঠকাতে থাকে ওনো, সে আমাদের বলতে থাকে শুধু তার ছবি আঁকার কৌশলের কথা, যেন বা ছবির বিষয়বস্তু কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। কেন? কারণ তার ছবির থিম ছিল যুদ্ধবাদী, নাৎসিবাদ সমর্থনকারী প্রপাগান্ডা।

তিনটে উপন্যাসই স্মৃতিচারণা, যে কারণে ইশিগুরোকে প্রায়শই তুলনা করা হয় মার্সেল প্রুস্তের সঙ্গে। স্মৃতি অনেক বড় এক প্রতারক—এই কথাটুকুর যদি কেউ নিশ্চিত প্রমাণ চান, তো আপনাকে তাহলে পড়তেই হবে ইশিগুরোর ‘ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড’ বা ভাসমান পৃথিবীর এই বিভ্রান্ত শিল্পীর গল্প, যে নিজেই নিশ্চিত নয় যে স্মৃতি থেকে বলা তার সবগুলো কথা আদৌ সত্য কি না। তখন হয় তাকে মিথ্যাবাদী বলে মনে হবে আপনার, না হয়, বোকার মতো, আপনি ভাববেন যে লোকটা যখন অকপটে তার স্মৃতির গোলমালের কথা আগ বাড়িয়ে স্বীকার করছে, তখন নিশ্চয়ই সে আসলে অনেক ভালো, সৎ একজন মানুষ। ইশিগুরো পাঠককে নিয়ে এই খেলাটা খেলছেন ইচ্ছা করেই। দেখাচ্ছেন যে সবকিছুই ভাসমান—পৃথিবীতে কোনো সত্য, কোনো বক্তব্য, কোনো বিশ্বাসই স্থির ও দৃঢ় নয়, এরা স্রেফ ভাসমান ও বুদ্বুদসদৃশ।

নোবেল কমিটি দেখলাম ইশিগুরোকে আখ্যা দিয়েছে জেন অস্টেন ও ফ্রানৎস কাফকার মিশেল বলে। কথা পুরো সত্য নয়। ইশিগুরোর প্রথম তিন উপন্যাসে কাফকা নেই, একেবারেই নেই। তাঁর কাফকায়েস্ক লেখা মাত্র দুটি—১৯৯৫ সালের দ্যআনকনসোলড্ এবং ২০০৫-এর নেভারলেটমিগো। এ দুটিই ভরা আবছায়া আর রহস্যময়তার মোড়কে এবং হতবুদ্ধি ও হুমকি-পীড়িত মানুষের ভয় জাগানো এক বন্ধুহীন পৃথিবীতে দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকার বিবরণে। এর মধ্যে দ্যআনকনসোলড্ছিল আমার সারা জীবনে পড়া প্রিয়তম পাঁচ-সাতটি উপন্যাসের একটি। প্রায় সাড়ে পাঁচ শ পৃষ্ঠার এক ঢাউস বই, যেটা আমার মাথায় গেঁথে ছিল প্রকাশের মুহূর্ত থেকে এ বছরের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত—টানা বাইশ বছর। দ্বিতীয়বার পড়ার ইচ্ছায় এবার নতুন প্রচ্ছদের পেপারব্যাকটা কিনি আবার। কিন্তু দুই শ পৃষ্ঠার মতো পড়ার পরে আর এগোতে পারিনি আমি, আর কোনো দিন সেই চেষ্টাও করব না। স্বপ্নদৃশ্যের পরে স্বপ্নদৃশ্য, শহরের রাস্তার মধ্যে হঠাৎ ঢুকে যাচ্ছে শৈশবের মেঠোপথ, তোয়ালে জড়িয়ে বক্তা হাজির হচ্ছে খুব বড় ডিনার পার্টিতে ভাষণ দিতে, পাঁচ সেকেন্ডের লিফটের যাত্রায় একজন কথা বলছে টানা চার পৃষ্ঠাজুড়ে, যা বলতে গেলে বাস্তবে কমপক্ষে লাগবে ঘণ্টাখানেক; বাস্তবের এই দুমড়ানো-মোচড়ানো চেহারাকে সাহিত্যিক প্রকরণ হিসেবে বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারলাম না আমি, হয়তো বয়স বেড়েছে বলে, হয়তো আরও অনেক এ রকম পরাবাস্তববাদী কাফ্কায়েস্ক লেখা মাঝখানের বাইশ বছরে পড়া হয়েছে বলে। কিন্তু মানতেই হবে, আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে গেছে এই উপন্যাস, একটানা এতগুলো বছর। এখন আমার আনকনসোলড্কেলেগেছে অতিকথনে ভরা এক অকারণ দীর্ঘ লেখা, কিন্তু কী করে অস্বীকার করি যে জীবনের এতটা বছর এই উপন্যাসকে আমি ভালোবেসে গেছি এক বোরহেসিয়ান নক্ষত্রালোক হিসেবে?

কাজুও ইশিগুরো যখন িগটারে মগ্ন
কাজুও ইশিগুরো যখন িগটারে মগ্ন

তাঁর শেষ উপন্যাস দ্যবেরিডজায়ান্ট-ই শুধু পড়া হয়নি আমার। ড্রাগনে ভরা ফ্যান্টাসি পড়তে ইচ্ছা করেনি। তা ছাড়া ইশিগুরোর এমন কোনো লেখা নেই (তাঁর একমাত্র ছোটগল্পের বই নকটার্নস-এ প্রকাশ হওয়া পাঁচ গল্প এবং নানা সাহিত্য পত্রিকায় ছাপানো আরও পাঁচ-ছয়টাসহ), যা আমার পড়া নেই। এই দীর্ঘ ইশিগুরো অধ্যয়ন থেকে এতটুকুই বলতে পারি, খুব শাণিত বুদ্ধি দিয়ে লেখা কোনো মহাসুখপাঠ্য, কিন্তু একই সঙ্গে অতলস্পর্শী আখ্যান যদি পড়তে চান তো ইশিগুরোর উপন্যাস হাতে নিন। প্রথমে কোনটা পড়বেন তাঁর সাত উপন্যাসের মধ্যে? দ্যআনকনসোলড্। এই উপন্যাস নিয়ে আমার ওপরেরর প্রতিক্রিয়ায় যদিও এখনকার কথাটাকে স্ববিরোধীতার মতো শোনাচ্ছে, তবুও বলব, এই বইটা পড়তে এ সময়ে আমার ভালো লাগুক বা না-লাগুক, ইশিগুরোর ‘মাস্টারপিস’ আসলে এটিই। বিশ্বসাহিত্যে দ্বিতীয় কোনো লেখা নেই তাঁর আনকনসোলড্-এর মতো।

মাটিতে শেকড় ছাড়া, ভাসমান এক পৃথিবীতে, নিশ্চয়তাহীন এক বর্তমানে, মানুষ কতটা কষ্ট থেকে শুধু স্মৃতির ওপরে ভর করে বেঁচে থাকে, তার মানবিক আখ্যান ইশিগুরোর লেখাগুলো।এই সহস্রাব্দে নোবেল কমিটি গত ১৭ বছরে মাত্র পাঁচটা নোবেল দিয়েছে, যাতে তাদের সামান্য কোনো সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়নি। এর একটি এ বছরের কাজুও ইশিগুরো; বাকি চার নাইপল, কুয়েটিস, বার্গাস ঝোসা ও অ্যালিস মুনরো।

অভিবাদন হে আপাত ব্রিটিশ ধাঁচের সাধু-সজ্জন, কিন্তু আদতে সুচতুর তরুণ মহান লেখক।