চলমান উৎসব

১৯২১ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত প্যারিসে বসবাসকালে তরুণ লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
১৯২১ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত প্যারিসে বসবাসকালে তরুণ লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সাত বছর পর ১৯৬১ সালে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে যখন আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসান ঘটান, তখন তাঁর যে চারটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি অসমাপ্ত অবস্থায় ছিল, তার একটি হচ্ছে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত তাঁর স্মৃতিকথা অ্যা মুভেবল ফিস্ট। এটি আদৌ তাঁর স্মৃতিকথা নাকি ফিকশন, সেটা নিয়ে বিতর্ক কখনো শেষ হয়নি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রন্টে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, তারপর সাংবাদিকতা ইত্যাদি কাজ ছেড়ে হেমিংওয়ে যখন প্যারিসে থিতু হয়ে বসে গল্প লেখায় মনোনিবেশ করেন, তখন জেমস জয়েস, এজরা পাউন্ড, স্কট ফিটজেরাল্ড, গারট্রুড স্টাইন প্রমুখ প্রবাসী লেখকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তাঁর। লেখক হিসেবে তখনো তিনি অখ্যাত।

টাকা-পয়সার টানাটানি, তাঁর লেখালেখির কায়দা, ক্রমাগত লিখে যাওয়ার তৃপ্তি ও আনন্দ, লিখতে না পারার হতাশারহিত মনোভাব, প্যারিসবাসী লেখককুলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও স্মৃতিচারণ—এসব নিয়েই হেমিংওয়ের স্মৃতিকথা অ্যা মুভেবল ফিস্ট। একজন নবীন লিখিয়ের পরবর্তী সময়ে কথাসাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাওয়ার ভিতটা যখন রচিত হচ্ছিল, হেমিংওয়ের সেই সময়ের মনোভাব ও অনুভূতি অনেকের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। তিনি লেখেন, ‘একটা গল্প শেষ করার পর আমি শূন্য হয়ে পড়তাম, একই সঙ্গে বিষণ্ন ও সুখী, যেন সঙ্গম করে উঠলাম।’ লেখা শেষের চরম উত্তেজনা এবং পরবর্তী লেখার মাঝখানের সময়টুকুতে তিনি আর লেখা নিয়ে ভাবতেন না। প্যারিসের রাস্তায় হেঁটে মানুষজন, দোকানের বইপত্র, পেইন্টিং—এসব দেখে বেড়াতেন।

প্যারিসের স্মৃতিনির্ভর বইটির কাজ তিনি শুরু করেছিলেন প্যারিস ছাড়ার তিরিশ বছর পর কিউবায়, ১৯৫৭ সালে; অর্থাৎ তাঁর নোবেল পাওয়ার তিন বছর পর। ১৯৫৬-তে স্পেনে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্যারিসে ফিরে এসে উঠেছিলেন পূর্ব পরিচিত রিৎজ হোটেলে। এই হোটেলের বেসমেন্টের মালখানায় রক্ষিত তোরঙ্গ থেকে উদ্ধার হয় স্মৃতিকথা লেখার কাজ শুরু করার প্রয়োজনীয় উপাদান—তিরিশ বছর আগের লেখালেখি এবং ডায়েরি-নোটগুলো। এগুলো তিনি হাতে পান ১৯৫৭ সালের জানুয়ারিতে কিংবা তারও আগে। সে সময় রিৎজ হোটেলের রাইটিং প্যাডে তিনি তাঁর বন্ধু লি স্যামুয়েলসকে লেখেন, তিরিশ বছর ধরে পড়ে থাকা মালমসলাগুলো তিনি খুঁজে পেয়েছেন। এই স্যামুয়েলস ছিলেন একাধারে হেমিংওয়ের ব্যাংকার, বই সংগ্রাহক এবং তাঁর গ্রন্থপঞ্জি প্রণেতা।

এর মধ্যে তিনি পেয়েছেন পুলিৎজার ও নোবেল পুরস্কার, বই বিক্রি হয়েছে লাখ লাখ কপি। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যাও তাঁকে কাবু করে ফেলেছিল। তাঁর একদা বুল ফাইট, শিকার ও সমুদ্রে মাছ ধরা শক্তপোক্ত শরীর আর নিজের বশে ছিল না। বছর দশেক আগে হাঁটু ভেঙেছে গাড়ি দুর্ঘটনায়, মাত্র দুই বছর আগে পরপর দুটি বিমান দুর্ঘটনার প্রচণ্ড অভিঘাতে চিড় ধরা মাথার খুলি, বিযুক্ত হওয়া কাঁধের জোড়, আগুনে পোড়া শরীর, ক্ষতিগ্রস্ত যকৃৎ ও কিডনি—এত সব মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক জখমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তাঁর ইনসমনিয়া, উচ্চরক্তচাপ, বিপজ্জনক মাদকাসক্তি ও বিষাদরোগ।

এ রকম প্রায় ভগ্নদশায় তিনি তাঁর প্যারিস-স্মৃতি গ্রন্থনার কাজ শুরু করেছিলেন ১৯৫৭ সালের মে মাসে স্কট ফিটজেরাল্ডের ওপর একটা লেখা দিয়ে। যদিও প্রায় পঁচিশ বছর আগেকার একটা লেখায় তিনি লিখেছিলেন, ‘যখন তোমার নিজস্ব আর কিছুই সৃষ্টি করার থাকবে না, তখনই কেবল স্মৃতিকথা লেখা যেতে পারে।’ তবে বোঝা যায়, কোনো এক সময় স্মৃতিকথা লেখার ইচ্ছা তাঁর নিশ্চয়ই ছিল। ১৯৪৯-এ তিনি তাঁর প্রকাশক চার্লস স্ক্রিবনারকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে ‘একটা কথা বলা যন্ত্র’ (টকিং মেশিন) কিনে দেওয়ার জন্য, যাতে তিনি সব স্মৃতিকথা বলে যেতে পারেন। তবে শর্ত দিয়েছিলেন, সেখানে উল্লেখিত নারীদের জীবদ্দশায় বইটি প্রকাশ করা যাবে না। আরেক চিঠিতে তিনি স্ক্রিবনারকে লেখেন, তাঁর মা ও জর্জ কাকা বেঁচে থাকা পর্যন্ত তিনি ওক পার্কের বিষয়ে কিছু লিখতে পারবেন না। প্রকৃতপক্ষে বইটি প্রকাশের ব্যাপারে হেমিংওয়ে কিছুতেই মনস্থির করতে পারছিলেন না।

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
আর্নেস্ট হেমিংওয়ে

স্ক্রিবনার তাঁকে একটা টেপরেকর্ডার কিনে দিয়েছিলেন। তখন হেমিংওয়ে তাঁকে লেখেন, ‘কথা বলা যন্ত্রটাতে বলার জন্য চমৎকার কিছু বিষয় আছে। শিরোনাম হিসেবে ‘আমি যা জানি সেসব’ (দ্য থিংস দ্যাট আই নো) কেমন? তবে যেটা দিয়ে কাজ শুরু করেছি, তার চেয়ে আরও ভালো শিরোনাম সব সময় খুঁজে পেয়েছি আমি, অতএব চিন্তা করবেন না।’

স্ক্রিবনার হেমিংওয়ের প্যারিস-স্মৃতি ছাপতে খুবই আগ্রহী ছিলেন, এমনকি পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করতেও রাজি ছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর হেমিংওয়ে তাতে কিছুতেই রাজি হননি, কারণ লেখাগুলোতে এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা ছিল, যার কারণে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে মামলার আশঙ্কা করছিলেন। ১৯৬১-তে হেমিংওয়ে স্ক্রিবনারকে একটা চিঠিতে লেখেন, বইটা যাতে প্রকাশ করা না হয়; কিন্তু তাঁর স্ত্রী মেরি চিঠিটা না পাঠিয়ে সরিয়ে রেখেছিলেন। আরও আগে যখন বইটার বেশ কিছু অধ্যায় লেখা হয়ে গেছে, স্ক্রিবনারের চাপাচাপিতে তিনি কথা দিয়েছিলেন যে তাঁর আয়কর-সংক্রান্ত ঝামেলাগুলো মিটে গেলে বইটার কাজ শেষ করে ফেলবেন। সেই বিবেচনায় ১৯৬০ ও ১৯৬১-তে স্ক্রিবনারের প্রকাশিতব্য গ্রন্থের তালিকায় প্যারিস-স্মৃতির নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু বুলফাইটিংয়ের ওপর লেখা একটা বইয়ের (দ্য ডেঞ্জারাস সামার) কাজ শেষ করতে গিয়ে স্ক্রিবনারের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট সম্পাদনার পর মেরি চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপিটা স্ক্রিবনারের কাছে জমা দিয়েছিলেন হেমিংওয়ের মৃত্যুর দুই বছর পর, ১৯৬৩ সালের জুলাই মাসে।

পাণ্ডুলিপির সঙ্গে পাঠানো মেরির চিঠিতে জানা যায়, লেখাগুলো তিনি (মেরি) কিছুটা সম্পাদনা করেছেন, এমনকি কিছু অধ্যায়ের নামকরণও করেছেন। হেমিংওয়ের বিভিন্ন নোট, ডায়েরি ও খসড়া থেকে গ্রন্থিত করে বইয়ের ভূমিকাটি খাঁড়া করেন মেরি। বইয়ের শিরোনামও মেরির দেওয়া, কারণ হেমিংওয়ের সম্ভাব্য শিরোনামের মধ্যে ‘অ্যা মুভেবল ফিস্ট’ ছিল না, যদিও বাক্যবন্ধটি তিনি তাঁর বিভিন্ন লেখায় বহুবার ব্যবহার করেছেন। হেমিংওয়ে যে নাম ঠিক করেছিলেন, সেটি ছিল ‘দ্য আই অ্যান্ড দ্য ইয়ার’। এখন মনে হয়, যেকোনো বিবেচনায় নামটা ছিল খুবই সাদামাটা।

হেমিংওয়ের মূল খসড়ায় মোট অধ্যায় ছিল উনিশটা। কিন্তু মেরি ও সম্পাদক(রা) ‘নতুন মতের উত্থান’ (বার্থ অব অ্যা নিউ স্কুল) অধ্যায়টি যোগ করেন এবং ‘অনিশেষ প্যারিস’ অধ্যায়টি ষোলো নম্বর থেকে বিশ নম্বরে নিয়ে গিয়ে সেটিকে সমাপ্তিসূচক অধ্যায় হিসেবে পুনর্বিন্যাস করেন। অবশেষে ১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে অ্যা মুভেবল ফিস্ট নামে স্মৃতিকথাটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

অ্যা মুভেবল ফিস্ট-এর প্রচ্ছদ
অ্যা মুভেবল ফিস্ট-এর প্রচ্ছদ

স্মৃতিকথাটি চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রশ্ন দেখা দেয় এসবের কতখানি স্মৃতিকথা আর কতখানি ফিকশন। ১৯৬১-তে হেমিংওয়ে একবার স্বীকার করেন, যা তিনি লিখছিলেন সেসব ফিকশন, ‘কারণ অতীতের স্মরণযোগ্য সবকিছু ফিকশন।’ বইটির ভূমিকা হিসেবে লিখে রাখা বক্তব্যের মধ্যে প্যারিস-স্মৃতিকে একাধিকবার ফিকশন হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। তিনি লেখেন, ‘লেখকের কাছে প্রতিভাত যথেষ্ট সংগত কারণে অনেক জায়গা, লোকজন, পর্যবেক্ষণ ও মনোভাব এ বইয়ে পরিহার করা হয়েছে। কিছু ব্যাপার গোপনীয়, কিছু সবার জানা, আর কিছু ব্যাপার নিয়ে সবাই লিখেছেন এবং নিঃসন্দেহে আরও লিখবেন।...যদি পাঠক মনে করেন, এ বইকে ফিকশন হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু সব সময়ই এই সুযোগ থেকে যায় যে এ-জাতীয় ফিকশনধর্মী গ্রন্থ সত্য হিসেবে লেখা বিষয়ের ওপরও আলোকপাত করতে পারে।’ বইটি ফিকশন কি না, তার পাশাপাশি এই প্রশ্নও ওঠে, এটা কতখানি তাঁর নিজের আর কতখানি মেরির। প্রশ্নটা ওঠার কারণ ছিল মেরির সম্পাদনা ও সংযোজন। প্রশ্ন আরও জোরদার হয় যখন দেখা যায়, ১৯৬০ এবং পরের বছরেও স্ক্রিবনারের প্রকাশিতব্য বইয়ের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ১৯৬৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের আগ পর্যন্ত মেরি স্ক্রিবনারের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠাননি। পাণ্ডুলিপির সঙ্গে লেখা চিঠিতে হেমিংওয়েপত্মী মেরি লেখেন, ‘আপনাদের কাছে রেখে যাওয়া প্রথম খসড়া থেকে পাপার (হেমিংওয়ের ডাকনাম) সংশোধিত এবং আমার হালকা সামান্য সম্পাদিত প্যারিস বই পাঠালাম। এটিই একমাত্র সংশোধিত কপি। কিছু অধ্যায়ের নামকরণ তিনি করে গিয়েছেন এবং বাকিগুলোর নাম পরীক্ষামূলকভাবে আমার দেওয়া।...আপনারা যদি এই খসড়াটিকে মূলটির চেয়ে উন্নতকৃত মনে করেন, খুশি হব।’ হেমিংওয়ের মৃত্যুর পর দুই বছর ধরে নিজের কাছে রেখে পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার বিষয়টি এবং ‘মূলটির চেয়ে উন্নতকৃত মনে’ করার ধারণা থেকে প্রতিভাত হয় যে মেরি বইটির মূল পাণ্ডুলিপি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না।

সে সময়কার আমেরিকান সাহিত্যের এই বরপুত্রের মরণোত্তর বইগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক সমালোচনাও কম ছিল না। কারণ জীবনের উপান্তে পৌঁছে যেসব লেখা তিনি রেখে গিয়েছিলেন, সেসব ছিল এমনই নীরস যে হয়তো হেমিংওয়ে নিজেও সেসব প্রকাশ করতে চাইতেন না। কোনো সমালোচকের মতে, অ্যা মুভেবল ফিস্ট-এর বহু প্রসঙ্গ ও মতামত ব্যক্তিবিশেষের প্রতি নিষ্ঠুরতারই নামান্তর ছিল। তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, বইটির মধ্যে বহু ভালো উপাদান থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ পেয়েছে লেখকের আত্মকেন্দ্রিকতা, দম্ভ, আত্মপ্রশংসা, অতিশয়োক্তি আর লোকদেখানো পৌরুষ। গারট্রুড স্টাইন ও ফিটজেরাল্ড সম্পর্কে সমকামিতার সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও পছন্দ করেননি অনেকেই।

ফরাসি লেখক ও সাংবাদিক মার্ক সাপোর্তা (১৯২৩-২০০৯) অনূদিত বইটির প্রথম ফরাসি সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে পাগি এ ইন্ন ফেৎ (‘প্যারিস এক উৎসব’) শিরোনামে। ২০১৫ সালে প্যারিসের বিভিন্ন জায়গায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে ১৩০ জন মানুষ প্রাণ হারালে বইটি অর্ধশতাব্দী পর যেন পুনর্জন্ম লাভ করে। বিভিন্ন বিপণি থেকে বইটির হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়ে যায়, অনেক জায়গায় শেষ হয়ে পড়ে স্টক। আগে দৈনিক যেখানে ১০ থেকে ১৫টি বইয়ের অর্ডার পাওয়া যেত, এই হামলার পর সেই সংখ্যা দিনে ৫০০-তে পৌঁছায়। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, বইটির ফরাসি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ফোলিও বছরে বিক্রি করত ৬ থেকে ৮ হাজার কপি, হামলার পর ফ্ন্যক ও আমাজন থেকে অর্ডার আসে সাড়ে ৮ হাজার কপির। এই হামলার প্রতিবাদ হিসেবে প্যারিসবাসী পাগলের মতো বইটি কিনতে থাকে হেমিংওয়ের অ্যা মুভেবল ফিস্ট, তাদের কেউ কেউ বিস্ফোরণস্থলে মোমবাতি আর ফুলের তোড়ার সঙ্গে সাজিয়ে রাখে বইটিও। এদের অনেকে হয়তো বইটির নাম সেবারই প্রথম শোনে। বোমা হামলায় স্তব্ধ নগরবাসীর কাছে তাদের প্রিয় শহরটি ক্যাফে, পানশালা ও শিল্পসাহিত্যে সমৃদ্ধ প্রেমে ও পানভোজনে মত্ত এক উৎসবের শহর; ঠিক যেমনটি ছিল হেমিংওয়ের কাছে। ১৯২১ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত প্যারিসবাস প্রসঙ্গে হেমিংওয়ে তাঁর এক বন্ধুকে লিখেছিলেন, ‘যুবা বয়সে প্যারিসে বাস করার মতো ভাগ্যবান যদি তুমি হও, তাহলে পরবর্তী জীবনের বাকি দিনগুলোতে যেখানেই যাও না কেন, শহরটা যেন তোমার সঙ্গেই যাবে, কারণ প্যারিস হচ্ছে চলমান উৎসবের শহর।...আমরা সব সময় এখানে ফিরে এসেছি আমরা কে কিংবা এটা কতখানি বদলে গেছে অথবা এখানে পৌঁছাতে কতটুকু কষ্ট হয়েছে—এসব কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে।’ অন্য জায়গায় হেমিংওয়ে লেখেন, ‘পৃথিবীর দুটোমাত্র জায়গায় আমরা সুখে বসবাস করতে পারি: নিজের বাড়িতে ও প্যারিসে।’