রবীন্দ্রনাথের একটি গানের অগ্রন্থিত আদি লেখন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২৫ বৈশাখ ১২৬৮—২২ শ্রাবণ ১৩৪৮), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২৫ বৈশাখ ১২৬৮—২২ শ্রাবণ ১৩৪৮), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্র (পরে বৈবাহিক সূত্রে কবির আত্মীয়) কুমিল্লার ব্রজেন্দ্রচন্দ্র ভট্টাচার্যকে রবীন্দ্রনাথ একটি গান নিজের হাতে লিখে উপহার দিয়েছিলেন (৫ ফেব্রুয়ারি ১৯২৩)। এখানে প্রকাশিত গানটি হলো, সেই গানের আদি লেখন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কবি যৎসামান্য পরিমার্জন করে গানটি বসন্ত গীতিনাট্যে প্রকাশ করেন এবং বইটি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেন। এই বইয়ে প্রকাশের আগেই গানটির আদি লেখন মুদ্রিত হয়েছিল প্রমথনাথ বিশি সম্পাদিত শান্তিনিকেতন পত্রিকায় (মাঘ ১৩২৯)। (দেখুন: সুপ্তি মিত্র, সাময়িকপত্রে রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ, শান্তিনিকেতন, কলকাতা, টেগো রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ১৯৮০ পৃ. ২৬৪)। বসন্ত-এর পরিমার্জিত পাঠ রবীন্দ্র-রচনাবলি (পঞ্চদশ খণ্ড) ও গীতিবিতান-এ অনুসৃত হয়।

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গানটির ‘পাঠান্তর আছে’ (দেখুন: গীতবিতান/কালানুক্রমিক সূচি; প্রকাশক: উৎপল চৌধুরী, কলকাতা, টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ১৩৯৯, পৃ. ২৫৭)।

 শান্তিনিকেতন পত্রিকায় মুদ্রিত মূল পাণ্ডুলিপিধৃত পাঠের সঙ্গে বসন্ত এবং গীতবিতান-এর পাঠভেদ সামান্য: মধ্যম পুরুষবাচক তিনটি পদ (তুমি, তোমার, তোমায়) প্রথম পুরুষে (সে, তাহার, তারে) পরিবর্তিত হয়েছে মাত্র। প্রথম চরণের তুমি হয়েছে সে কি; দ্বিতীয় চরণের তোমার হয়েছে তাহার; চতুর্থ চরণের ওগো-এর রূপান্তর ঘটেছে সে যে-তে। একাদশ চরণের তোমায় হয়েছে তারে; শেষ চরণের দিলে রূপ পেয়েছে দিল।

চরণ ও স্তবক বিন্যাসেও বসন্ত-এর সঙ্গে গীতবিতান-এর ঈষৎ পরিবর্তন আছে—আদি রূপের ষোলো চরণ গীতবিতান-এ পরিণত হয়েছে আট চরণে। প্রথম লেখনের ও বসন্ত-এর দুই স্তবক গীতবিতান-এ বিন্যস্ত হয়েছে একটি মাত্র স্তবকে। আরেকটি ছোট পরিবর্তন—ঐ হয়েছে ওই; জাগ্‌ল ও আপ্‌নারি শব্দ দুটি থেকে হস্ চিহ্ন বাদ গেছে।

গীতবিতান-এর প্রকৃতি পর্যায়ের ২২০ সংখ্যক গানটির (সে কি ভাবে গোপন রবে লুকিয়ে হৃদয় কারা?) আদি লেখন এ রকম:

তুমি ভাবো গোপন র’বে

          লুকিয়ে হৃদয় কাড়া
তোমার আসা হাওয়ায় ঢাকা
          ওগো সৃষ্টিছাড়া।
হিয়ায় হিয়ায় জাগ্‌ল বাণী,
          পাতায় পাতায় কানাকানি,
“ঐ এল যে, ” “ঐ এল যে”
          পরাণ দিল সাড়া।
এই ত আমার আপ্‌নারি এই
          ফুল-ফোটানোর মাঝে
তোমায় দেখি নয়ন ভরে’
          নানা রঙের সাজে।
এই যে পাখীর গানে গানে
          চরণধ্বনি বয়ে আনে,

বিশ্ববীণার তারে তারে

          এই ত দিলে নাড়া।

  ২২ মাঘ ১৩২৯