ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে নানামাত্রিক ভাষা

‘আমার বিশ্বাসের অন্তরালে’, খোকন চন্দ্র সরকার
‘আমার বিশ্বাসের অন্তরালে’, খোকন চন্দ্র সরকার

চতুর্থবারের মতো আয়োজিত জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে মোট কাজের সংখ্যা ১১৭। ৯৮ জন শিল্পীর নির্মাণে এ সংখ্যা বেশ আশাব্যঞ্জক বলা যায়। এ ছাড়া আমন্ত্রিত ১১ শিল্পীর সঙ্গে প্রয়াত ৪ শিল্পীর ভাস্কর্য আমাদের দিকনির্দেশনা দেয়।

প্রদর্শনীতে ভাস্কর্যের মাধ্যম উন্মুক্ত ছিল। ফলে শিল্পীরা তাঁদের ইচ্ছেমতো মাধ্যম বাছাই করে কাজ করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ভাস্কর্য চর্চার বাইরেও কোনো কোনো শিল্পী তাঁদের কাজকে অব্যাহত রেখে নিয়মিত নিরীক্ষা করে যাচ্ছেন। সে দক্ষতার ছাপ এ প্রদর্শনীর কোনো কোনো কাজে দেখা যায়। পুরস্কারপ্রাপ্ত কাজগুলোই শুরু করা যাক আলোচনা।
জাতীয় ভাস্কর্য পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী খোকন চন্দ্র সরকারের কাজে দেখা যায়, কাটা গরুর মাথার জমিনে যুদ্ধবিমান, ফুলের কলি আর বন্দুক আঁকা হয়েছে। পাশাপাশি পূজা-অর্চনায় ব্যবহৃত মূর্তির গায়েও একই ফর্ম বারবার ব্যবহার করেছেন। চলতি বিশ্বে হানাহানি আর মানুষের মাঝে বৈরী সম্পর্কের কারণগুলোই চিহ্নিত করতে চেয়েছেন তিনি। খোকন তাঁর কাজের শিরোনাম দিয়েছেন ‘আমার বিশ্বাসের অন্তরালে’।
পলাশ সাহা পানির টেপ ও পাইপের মাধ্যমে জনজীবনের সংকটকে প্রধান করে দেখেছেন। তাঁর কাজের শিরোনাম ‘সংকট’।
কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তৈরি করেছেন ‘ফ্রাগমেন্ট ইউনিটি’ অর্থাৎ ভঙ্গুর একতা। মানবজীবন তথা সমগ্র বিশ্বের সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের মনস্তাত্ত্বিক অবয়ব তুলে ধরেছেন সালাউদ্দিন আহমেদ। অনেকগুলো কাঠিকে একসঙ্গে জোড়া দিয়ে তিনি তৈরি করেন কাঠের ঐক্য। প্রত্যেক কাঠে নানান ইমেজ আটকে দিয়ে তিনি চোখে বিভ্রম তৈরি করেছেন। আর অলোক কুমার সরকারের ‘সম্পর্ক’-এর মধ্যে দেখা যায় ফর্মের সরলীকরণ। মানুষে মানুষে অথবা বস্তুতে বস্তুতে সম্পর্কের রূপ হয়তো এমনই।
শিমুল দত্তের ‘চাপ সামলাও’ ভাস্কর্য দুটিতে প্লাস্টারে গড়া মানব দেহের মুখে গুঁজে দেওয়া হয়েছে পেরেক খণ্ড। কাজগুলোতে একধরনের দ্রোহের বার্তা প্রকাশ পায়।
প্রদর্শনীতে কাঠ, প্লাস্টার, লোহা, তামা, দস্তা, সিসা, সিমেন্ট, মাটি, ফাইবার গ্লাস, কাগজের মণ্ডসহ নানা মাধ্যমে গড়া ভাস্কর্যের মাঝে বাস্তবধর্মী ভাস্কর্যের উপস্থিতি সংখ্যায় কম। কিছু কাজে মানুষের সূক্ষ্ম অনুভূতির প্রকাশ দেখা যায়। এ ছাড়া নিরীক্ষাধর্মী কাজের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো আসিফ-উজ-জামানের রূপান্তর, আনিসুজ্জামান সোহেলের ‘ছদ্মবেশী’, অসীম হালদার সাগরের ‘এক্সজিটেন্স ইন দ্য ন্যাচার-৩’, জয়শীষ আচার্য্যের ‘সময়ের স্বপ্নভঙ্গ-৩’, তেজস হালদারের জসের ‘রান’।
১১৭টি শিল্পকর্মের কাজের মধ্যে বেশ কিছু কাজে পরম্পরাগত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তাতে হয়তো অতীত ভাস্কর্যচর্চার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে করে শিল্পের ধারাবাহিক অতীতকে চেনা সহজ হয়। বলে রাখা দরকার, এখানে এমন কিছু কাজ আছে, যেটা না থাকলেই বোধ করি প্রদর্শনী সমৃদ্ধ হতো।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রকলায় ৯ মে শুরু হওয়া এটি শেষ হবে ৭ জুন।