পেছন ফিরে দেখা

ফি বছর বুকার পুরস্কারকে ঘিরে কম শোরগোল হয়নি। এই এত আলোচনার কারণও আছে—কারণটা হলো পুরস্কারটির গুরুত্ব। নাদিন গর্ডিমার, ভি এস নাইপল, জে এম কোয়েটজি, উইলিয়াম গোল্ডিং, অ্যালিস মানরো, কাজুও ইশিগুরোদের নোবেল চেনার বহু আগেই চিনতে পেরেছিল বুকার। ডরিস লেসিং নোবেল জয়ের আগে তিনবার ছিলেন বুকারের সংক্ষিপ্ত তালিকায়। আবার ডিবিসি পিয়েরে, অরবিন্দ আদিগা, অরুন্ধতী রায়, কেরি হিউম—এই ঔপন্যাসিকেরা তাঁদের প্রথম উপন্যাসেই পেয়েছিলেন বুকার পুরস্কার।

শিন্ডর্লাস লিস্ট, লাইফ অব পাই, দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে, দ্য ইংলিশ পেশেন্ট—আলোচিত এই সব চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে বুকারজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে।

১৯৬৮ সালে মান বুকার পুরস্কার যখন শুরু হয়, তখন এর নাম ছিল বুকার-কনেল পুরস্কার। তবে প্রথম থেকে এটি  বুকার পুরস্কার নামেই বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে। ২০০২ সালে টাইটেলে পুরস্কারের স্পনসরশিপ যায় বদলে। নতুন স্পনসর মান গ্রুপ পুরস্কারে মান শব্দটি যুক্ত করে এবং বুকার অংশটি বাদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন থেকে এর নাম হয় মান বুকার। এ বছর একই সঙ্গে পুরস্কারটির অর্থমূল্য ২১ হাজার পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার পাউন্ড করা হয়। এর আগে ১৯৭৮ সালে আরেক দফা বৃদ্ধি করা হয়েছিল অর্থমূল্য—৫ হাজার থেকে ১০ হাজার পাউন্ড।

২০০৫ সাল থেকে মান গ্রুপ আরেকটি পুরস্কার তথা ‘ইন্টারন্যাশনাল মান বুকার’ পুরস্কার দেয়। মান বুকার থেকে এটি ভিন্ন। এ পুরস্কার দেওয়া হয় দুই বছর পরপর। এখানে বই আহ্বান করা হয় না, বিচারকেরা নিজেরাই প্রস্তুত করেন মনোনয়নের তালিকা।

এ পর্যন্ত বুকারজয়ী গ্রন্থগুলোর মধ্যে এবারের বিজয়ী অ্যানা বার্নসের সবচেয়ে পছন্দের ১৯৭০ সালের ‘লস্ট মান বুকার’জয়ী জে জি ফারেলের ট্রাবলস। ১৯৭১-এ নিয়ম করা হয়, আগের বছর নয়, যে বছরের বুকার, সেই বছরের প্রকাশিত বই-ই পুরস্কারের জন্য বিবেচ্য হবে। ফলে ১৯৭০ সালে প্রকাশিত কোনো বই বুকার পায়নি। এই হারানো বছরটির পুরস্কার ২০১০ সালে দেওয়া হয়। আর এটিই সেই ‘লস্ট মান বুকার’।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নানা বিতর্কের মুখোমুখি হয়ে বুকার কেবল আলোচনাতেই থেকেছে কম-বেশি। এই কথাই যেন ২০১১-তে বুকারজয়ী দ্য সেন্স অব অ্যান এন্ডিং-এর রচয়িতা জুলিয়ান বার্নস বলেছেন একটু অন্যভাবে, ‘বুকার সবাইকেই পাগল করে তোলে—প্রকাশককে আশায়, বইয়ের দোকানদারকে লোভে, প্রতিযোগিতার বিচারকদের ক্ষমতায়, বিজয়ীকে গর্বে আর যাঁরা বুকার পেলেন না, তাঁদের হিংসে আর হতাশার যন্ত্রণায়।’

শুরুতে বুকার ছিল শুধু ব্রিটেন, কমনওয়েলথ, আয়ারল্যান্ড রিপাবলিক এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া লেখকদের জন্য। ২০১৪ সাল থেকে সব দেশের ইংরেজি লেখকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তবে বই প্রকাশিত হতে হবে যুক্তরাজ্য থেকে। এক্ষণে চলুন এই পুরস্কারসংক্রান্ত আরও দু-একটি তথ্য চকিতে দেখে নেওয়া যাক:

১৯৭২ সালের বুকারজয়ী জন বার্জার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বুকার কনেলির (বুকার পুরস্কারের উদ্যোক্তা) ১৩০ বছরের ব্যবসা ও শোষণের প্রতিবাদস্বরূপ তাঁর পুরস্কারের অর্থের অর্ধেকটা ব্রিটিশ ব্ল্যাক প্যান্থার আন্দোলনে দান করেন।

ছোটগল্পের সংকলন হিসেবে এখন অবধি বুকারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আসা একমাত্র বই হচ্ছে অ্যালিস মানরোর দ্য বেগার মেইড (১৯৮০)।

মান বুকারের ৫০ বছরের ইতিহাসে এবার ২০১৮ সালেই সর্বাধিক ১৭১টি প্রকাশনা জমা দেওয়া হয় বিবেচনার জন্য।

মাইকেল ওনডাটজের দ্য ইংলিশ পেশেন্ট সাধারণ মানুষদের ভোটে ২০১৮ সালে মান বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত সব গ্রন্থের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে নির্বাচিত হয় এবং ‘গোল্ডেন মান বুকার’ পুরস্কার পায়।

কিরণ দেশাইয়ের দ্য ইনহেরিটেন্স অব লস সব বুকারজয়ী বইয়ের মধ্যে পুরস্কার জয়ের আগপর্যন্ত সবচেয়ে কম বিক্রি হয়েছিল (২ হাজার ৩৯৭ কপি)। পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত অবশ্য বইটির ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

বুকারের সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত সর্বকনিষ্ঠ লেখক হলেন ব্রিটেনের ডেইজি জনসন। মাত্র ২৭ বছর বয়সী এই কথাসাহিত্যিক স্থান করে নিয়েছিলেন এবারের বুকারের তালিকায়।

২০০১ সালের আগে দীর্ঘ তালিকাভুক্ত মনোনীতদের নাম প্রকাশ করা হতো না জনসাধারণের সামনে।

৫০ বছরের পরিক্রমায় এবারই প্রথমবারের মতো বুকারের দীর্ঘ তালিকায় স্থান পেয়েছিল একটি গ্রাফিক নোবেল।