অজান্তে অমিত রায়ের স্থানে নিজেকে ভেবেছি

>

ক্রিকেট জামিলুর রেজা চৌধুরীর খুব প্রিয় খেলা, তিনি নিজেও ক্রিকেট খেলতেন একসময়। ছবি: প্রথম আলো
ক্রিকেট জামিলুর রেজা চৌধুরীর খুব প্রিয় খেলা, তিনি নিজেও ক্রিকেট খেলতেন একসময়। ছবি: প্রথম আলো

জামিলুর রেজা চৌধুরী। জাতীয় অধ্যাপক ও এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। শিল্প–সাহিত্যের নানা বিষয়ে আগ্রহ আছে তাঁর। তিনি একজন নিমগ্ন পাঠক, চলচ্চিত্র দেখেন নিয়মিত। তিনি লিখেছেন তাঁর প্রিয় ৫ বিষয়ে।

১. প্রিয় বই

‘শেষের কবিতা’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম

প্রিয় বই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা। সম্ভবত ১৯৫৯-৬০ সালের দিকে বইটি আমি প্রথমবার পড়েছিলাম। তখন আমি বুয়েটে থাকতাম, বয়স ১৬-১৭ বছর। তখন অমিত রায় চরিত্রটি—তার বিলেত থেকে ফিরে আসা, স্যুট পরা, লাবণ্যর সঙ্গে দেখা হওয়া—এই সব বিষয় মনে রোমাঞ্চ সৃষ্টি করেছিল। হয়তো অজান্তে অমিত রায়ের স্থানে নিজেকে ভেবেছি। আমি বেশ কয়েকবার শিলং গিয়েছি। আজও সেখানে গেলে এই উপন্যাসের প্লট এবং চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে ভেসে ওঠে আমার চোখে।

সাহিত্য নিয়ে তুলনামূক বিবেচনায় আমি যাব না। তবে একজন পাঠক হিসেবে বলব, সেই সদ্য কৈশরোত্তীর্ণ বয়সে শেষের কবিতা পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।

২. প্রিয় চরিত্র

ইন্দ্রনাথ খুবই সাহসী একটি চরিত্র

শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত উপন্যাসের ইন্দ্রনাথ আমার প্রিয় চরিত্র। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শ্রীকান্তকে ছাপিয়ে ইন্দ্রনাথ চরিত্রটি প্রিয় হওয়ার কারণ সম্ভবত এই যে ইন্দ্রনাথ খুবই সাহসী একটি চরিত্র। ১৯৫৩ সালের কথ। আমাদের বাংলা শিক্ষক শ্রীকান্ত উপন্যাসের কিছু অংশ ক্লাসে পাঠ করে শোনাতেন আমাদের। আর এ কথাও বলতে হবে, শ্রীকান্তু আমার জীবনের প্রথম উপন্যাস, যেটি আমার পাঠ করার সুযোগ হয়েছিল। সেই কিশোর বয়সে—তখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি—মনে আছে, উপন্যাসের ইন্দ্রনাথ চরিত্রটি মনে গভীর দাগ কেটেছিল। সে সময় ইন্দ্রনাথের সাহসী কার্যকলাপ আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল বলেই হয়তো পরিণত বয়সে এসেও ইন্দ্রনাথকে আমি ভুলিনি।

অপুর সংসার ছবির দৃশ্য
অপুর সংসার ছবির দৃশ্য

৩. প্রিয় গান

মৃত্যুর পরেও ভালো কাজের জন্য সবাই যেন তাকে মনে রাখে

আমার প্রিয় গানের তালিকা বেশ দীর্ঘ। এই বয়সে এসে প্রিয় গানের কথা যদি বলতে হয় তো বলব, রবিঠাকুরের ‘যখন পড়বে না মোর পা’য়ের চিহ্ন এই ঘাটে’ গানের কথা। গানটি যদিও দুঃখের, তবু ইদানীং এটিই আমি শুনি। কেন শুনি সে ব্যাখ্যা যদি দিতে হয় তাহলে বলব, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি এই যে সে চায় যেন মৃত্যুর পরেও ভালো কাজের জন্য সবাই তাকে মনে রাখে। জীবনের গোধূলি লগ্নে মানুষ তাই ফিরে তাকায় নিজের ফেলে আসা জীবনপথে, উঁকি দিয়ে দেখতে চায় যাপিত জীবনের অলি-গলিতে। ভাবে অজস্র প্রাণের আসা-যাওয়ার এই ঘাটে যখন তার পায়ের চিহ্ন আর পড়বে না, তখন কি সে বিস্মৃত হবে, নাকি মানুষ তাকে মনে রাখবে?

৪. প্রিয় চলচ্চিত্র

কাজল আছে বলেই অপর্ণা নেই

আমার প্রিয় চলচ্চিত্র সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার। ছবিটি দেখেছিলাম সম্ভবত ১৯৬১-৬২ সালে। সম্ভবত ইন্ডিয়ান ইনফরমেশন সার্ভিসে ছবিটি প্রথমবার দেখেছিলাম আমি। ছবিটি আমার মনে দাগ কেটেছিল গভীরভাবে। বিশেষভাবে এখানে বলব অপু চরিত্রটির কথা। যখন ছবিটি দেখি, আমার বয়স ছিল ১৮-১৯ বছর। এই ছবির একটি সংলাপ মনে ভীষণভাবে দাগ কেটেছিল এবং আমার ধারণা, ওই সময় বা এখনো এই সংলাপ দর্শকের মনে দাগ কাটবে। সংলাপটি ছিল: ‘কাজল আছে বলেই অপর্ণা নেই।’ শুধু সংলাপটি শুনে এর গুরুত্ব বা মর্মান্তিকতা উপলব্ধি করা যাবে না, ছবিটি দেখতে হবে, অপুর সংসার দেখতে হবে।

৫. প্রিয় শখ

এক ম্যাচে দশ উইকেট নিয়েছি

আমার প্রিয় শখ খেলাধুলা। ছাত্রজীবনে বুয়েটে আমি শ্রেণিকক্ষে যতটা সময় দিয়েছি, খেলাধুলায় বোধ হয় তার সমান সময় দিয়েছি। স্কুলজীবনে ফুটবল খেলেছি। মনে আছে, যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়তাম, একবার স্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাই। কিন্তু স্কুলের পরে আর ফুটবল তেমন একটা খেলা হয়নি। তবে আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট। দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলেছি আমি। শিক্ষক হিসেবেও খেলেছি। ক্রিকেটে আমার একটি আন-অফিশিয়াল রেকর্ড আছে—এক ম্যাচে আমি দশ উইকেট নিয়েছিলাম। লেফট আর্ম স্পিন করতাম আমি। এখনকার অনেক ক্রীড়া সাংবাদিক আছেন, যাঁরা আমার বোলিং সম্বন্ধে জানেন।