'নির্ঝর' অজানা কথা

সুস্থাবস্থায় কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রায় ৫০টি গ্রন্থের মধ্যে ১০টি গ্রন্থ বাজেয়াপ্তের জন্য চিহ্নিত হয়। পাঁচটি গ্রন্থ (যুগবাণী, বিষের বাঁশী, ভাঙার গান, প্রলয় শিখা ও চন্দ্রবিন্দু) বাজেয়াপ্ত হয় এবং আর পাঁচটি গ্রন্থ (অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা, ফণীমনসা, সর্বহারা ও রুদ্রমঙ্গল) নিষিদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াধীন ছিল, কিন্তু বাজেয়াপ্ত হয়নি। শুধু তা-ই নয়, এই ১০টি গ্রন্থ ছাড়াও কবির প্রায় ২৫টি গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৪২-১৯৪৫) প্রকাশিত হয়নি। বাছাই করা কয়েকটি বই-ই বারবার মুদ্রিত হয়েছে। আরও লক্ষ করা যায়, নজরুলের বাজেয়াপ্ত করা এবং বাজেয়াপ্তের জন্য সুপারিশ করা প্রায় নয়টি গ্রন্থেরই প্রকাশক এবং ক্ষেত্রবিশেষে মুদ্রকও ছিলেন স্বয়ং নজরুল। অর্থাৎ অন্য কেউ গ্রন্থগুলো প্রকাশ করতে চাননি অথবা প্রকাশক বা মুদ্রক হিসেবে তাঁদের নাম প্রদানে অনিচ্ছুক ছিলেন।নজরুল ইসলামের নির্ঝর বইকে আমার কাছে একটি ভাগ্যবিড়ম্বিত বই বলে মনে হয়েছে। যার পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হয়েছিল ১৯২৬ সালে। অধিকাংশ রচনা পত্রপত্রিকায় ১৯২৪-২৫-এর মধ্যে প্রকাশিত হয়। নির্ঝর-এর কবিতাসমূহ নজরুলের কাব্যচর্চার হাতেখড়ি-পর্বের হলেও এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে কবির কাব্যচর্চার প্রায় শেষ পর্যায়ে—১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। এ গ্রন্থ প্রকাশে নজরুল-পরবর্তী স্বত্বাধিকারীদের অনীহা বা অবহেলাই প্রধানত এ জন্য দায়ী। এ গ্রন্থ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানা যায়। নজরুল ১৯২৬ সালে যখন ঢাকায় গিয়েছিলেন, তখন তিনি ঢাকার কয়েকজন উদীয়মান তরুণ সাহিত্যিকের সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ কাসেম, আবদুল কাদির, আবদুল মজিদ সাহিত্যরত্ন প্রমুখ। মোহাম্মদ কাসেম ঢাকা থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশের ইচ্ছা জানালে নজরুল পত্রিকাটির নামকরণ করেন অভিযান। কবি ‘অভিযান’ নামে একটি কবিতা লিখে দেন এবং পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় তা ছাপা হয় (আবদুল কাদির, ঢাকায় নজরুল)। অনুমান করা যায়, মোহাম্মদ কাসেম কবির একটি গ্রন্থ প্রকাশে আগ্রহ প্রকাশ করন। সে সূত্রেই নজরুল নির্ঝর কাব্যের পাণ্ডুলিপি কিছু টাকার বিনিময়ে মোহাম্মদ কাসেমকে হস্তান্তর করেন।কিন্তু সাংসারিক ও আর্থিক নানা সংকটে পড়ে তাঁর সে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়নি। ১৯২৯ সালে মোহাম্মদ কাসেম কলকাতায় দৈনিক ছোলতান পত্রিকায় যখন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন, তখন চৌধুরী শামসুর রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। চৌধুরী শামসুর রহমান সাপ্তাহিক হানাফী পত্রিকার প্রধান সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হলে ১৯৩০-৩১ সালের দিকে পাণ্ডুলিপিটি নিয়ে মোহাম্মদ কাসেম কলকাতায় তাঁর আস্তানায় যান। চৌধুরী শামসুর রহমান তাঁর স্মৃতিকথায় এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, গ্রন্থটির ‘নির্ঝর’ নামকরণ নজরুলই করেছিলেন। তিনি আরও জানান, এমদাদ আলী সাহেবের প্রেসে নির্ঝর-এর মুদ্রিত ফর্মাও তিনি দেখেছিলেন। ছাপা শেষ হওয়ার পরও বইটি প্রকাশিত হয়নি। কেন হয়নি, তা আমাদের কাছে অজ্ঞাত। আমার বাবা মোহাম্মদ কাসেমের কাছে বাঁধাই করা প্রচ্ছদবিহীন নির্ঝর-এর একটি কপি ছিল। পিতৃবন্ধু মাহফুজুর রহমানের কাছে নাম-পৃষ্ঠাসহ পেপার-বাঁধাই আর এক কপি নির্ঝর দেখেছিলাম। প্রচ্ছদে টাইপে মুদ্রিত গ্রন্থের নাম ও লেখকের নাম ছিল। লেখকের নাম মুদ্রিত হয়েছিল ‘কবি নজরুল ইছলাম’। নামের এই বানানটি নজরুল দেননি। নামের এই বানান ও তার আগে কবি অভিধা যুক্ত করা সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশকের কীর্তি। তা ছাড়া লেখা ছিল প্রকাশকের নাম: ‘মোহসিন এণ্ড কোং’ এবং গ্রন্থমূল্য ‘এক টাকা’। পরবর্তী পৃষ্ঠায় ছিল: ‘প্রকাশক/মৌলবী ইমদাদ আলি খান/ প্রোঃ মোহসিন এণ্ড কোং/ ৬৬-১এ বৈঠকখানা রোড, কলিকাতা’।

এ পৃষ্ঠার নিচে লেখা ছিল ‘মুদ্রাকর-শ্রীতারাপদ বানার্জ্জি/ দি মডেল লিথো এণ্ড প্রিন্টিং ওয়ার্কস/ ৬৬-১এ, বৈঠকখানা রোড, কলিকাতা/ প্রকাশক কর্ত্তৃক সর্ব্বস্বত্ব সংরক্ষিত’। এ ছাড়া এ পৃষ্ঠার নিচে এক কোণে লেখা ছিল: ‘প্রকাশক কর্ত্তৃক সর্ব্বস্বত্ব সংরক্ষিত’। এ পৃষ্ঠারই মাঝখানে মুদ্রিত হয় প্রকাশকাল ‘১৩৪৫’।

নাম-পৃষ্ঠাসহ সম্পূর্ণ মুদ্রিত নির্ঝর গ্রন্থ পরবর্তীকালে বাজারে বের হয়নি। কেন হয়নি, সে সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করব। লক্ষ করা যায়, বিক্রয়ের জন্য নির্ঝর বাজারে প্রচারিত না হলেও গ্রন্থটি অপ্রকাশিত থাকেনি। গ্রন্থ-প্রকাশ ও গ্রন্থ-বিপণনের জন্য ‘সরকারি গ্রন্থ-রেজিস্ট্রেশন’ প্রক্রিয়ায় নির্ঝর প্রকাশিত হয়। গ্রন্থ রেজিস্ট্রেশনের তালিকায় ১৯৩৯ সালের ২৩ জানুয়ারি গ্রন্থটির প্রকাশকাল চিহ্নিত হয়। (দ্রষ্টব্য—বেঙ্গল লাইব্রেরি ক্যাটালগ, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ম ত্রৈমাসিক খণ্ড, ক্রমিক সংখ্যা ১৯৯৫, পৃষ্ঠা-১০৯)। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত যে নির্ঝর-এর প্রকাশকাল ১৯৩৯, ২৩ জানুয়ারি।

নির্ঝর কাব্যগ্রন্থে মুদ্রিত হয় নজরুলের ২৫টি কবিতা: ১. অভিমানী, ২. বাঁশীর ব্যথা, ৩. আশায়, ৪. সুন্দরী, ৫. মুক্তি, ৬. চিঠি, ৭. আরবি ছন্দের কবিতা, ৮. প্রিয়ার দেওয়া শরাব, ৯. মানিনী বধূর প্রতি, ১০. গান (আজ নূতন করে পড়ল মনে মনের মতনে), ১১. গরিবের ব্যথা, ১২. তুমি কি গিয়াছ ভুলে, ১৩. হবে জয়, ১৪. পূজা-অভিনয়, ১৫. চাষার গান, ১৬. জীবনে যাহারা বাঁচিল না, ১৭-২৪. ‘দীওয়ান-ই-হাফিজ’: ৮টি গজল, ২৫. নমস্কার।

এই গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘মুক্তি’ নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কবিতা। হাবিলদার কবি নজরুল ইসলাম করাচি থেকে কবিতাটি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ‘ক্ষমা’ নামে প্রেরণ করেন। কবিতাটির শিরোনাম বদলে ‘মুক্তি’ রাখা হয় এবং ওই পত্রিকার শ্রাবণ ১৩২৬ সংখ্যায় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের জন্য নির্ধারিত পৃষ্ঠায় আত্মপ্রকাশ করে। কবিতাটি নতুন লেখকদের জন্য স্বতন্ত্র ‘কোরক’ শীর্ষক পৃষ্ঠায় স্থান পায়নি দেখে নজরুল বিস্মিত হন। পত্রিকার তদানীন্তন সম্পাদক মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে পত্র দেন। মুদ্রিত কবিতার পাদটীকায় মন্তব্য ছিল—‘ইহা সত্য ঘটনা। ১৯১৬ সালে এপ্রিল মাসে এই দরবেশের কথিত-রূপ শোচনীয় মৃত্যু ঘটে। তাহার পবিত্র সমাধি এখনও “হাত-বাঁধা ফকিরের মাজার শরিফ” বলিয়া কথিত হয়।—লেখক’

রচনার দুর্বলতা যাই থাকুক, প্রথম প্রকাশিত কবিতা বলে এর ঐতিহাসিক মূল্য কম নয়। এ কবিতায় নজরুলের গল্প-রস-সৃষ্টির কুশলতার ইঙ্গিতও লক্ষ করা যায়।

নির্ঝর-এর অন্তর্ভুক্ত ‘আশায়’ হাফিজের আধ্যাত্মিক কবিতার ভাবানুবাদ। নজরুল ইতিপূর্বে ‘আশায়’ কবিতাটি সবুজপত্র-এ প্রকাশের জন্য করাচি থেকে প্রেরণ করেন। পত্রিকায় কবিতাটি মনোনীত না হওয়ায় চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবাসীতে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। লেখকের অনুমতি না নিয়েই অন্য পত্রিকায় কবিতাটি ছাপানোর জন্য সৌজন্য রক্ষার্থে প্রবাসীর সহকারী সম্পাদক চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নজরুলকে একটি পত্র দেন। প্রত্যুত্তরে নজরুল একটি সুন্দর পত্র প্রেরণ করেন। এই পত্রে হাফিজের গুণমুগ্ধ নজরুল একজন সাহিত্য-সমালোচকের মতো নিজেই তাঁর কবিতার রসোপলব্ধির পরিচয় দিয়েছেন সুললিত ভাষায়।

নির্ঝর কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত আর একটি কবিতা ‘বাঁশীর ব্যথা’। করাচি থেকে প্রেরিত এই কবিতার শিরোনামের নিচে বন্ধনীতে লেখা হয়েছিল—‘রুমীর অনুবাদ’। যে জালালুদ্দিন রুমির সুফি ‘তাসাউফ’ শাস্ত্রানুগত্য, নজরুল তার যথাযথ ভাবপ্রকাশে যথেষ্ট কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এটি নজরুলের প্রথম প্রকাশিত রুমির কবিতার ভাবানুবাদ।

নজরুল ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে বেঙ্গল রেজিমেন্ট লোপ পেলে করাচি থেকে সরাসরি কলকাতা এসে হাজির হন। প্রথমে বন্ধু শৈলজানন্দের আস্তানায় আশ্রয় নেন। পরে সুহূদ মুজাফ্ফর আহমদের ওখানে গিয়ে ওঠেন। কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে একটি কামরায় থাকতেন। সেখানে থাকাকালীন মুজাফ্ফর আহ্মদের উৎসাহে নজরুলের সাহিত্যচর্চা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। লক্ষণীয়, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৭ সংখ্যায়ই কবির দুটি কবিতা ও তিনটি নিবন্ধ আত্মপ্রকাশ করে। এ সংখ্যায়ই নজরুলের ফারসি কাব্যের অনুবাদ-ধারায় প্রকাশিত হয় হাফিজের একটি কবিতার ভাবানুবাদ ‘প্রিয়ার দেওয়া শরাব’। কবিতাটির পাদটীকায় লেখা ছিল—হাফিজের ‘জুলফে আ-শাফতা ও থুয়ে জর্দা ও যান্দানে লবেমস্ত’ শীর্ষক গজলের ভাবাবলম্বনে—নজরুল। নির্ঝর কাব্যগ্রন্থে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত হয়।

উল্লেখ্য, কবি হাফিজের কাব্যের সঙ্গে নজরুলের প্রকৃত পরিচয় ঘটে ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, যখন তিনি করাচির বাঙালি পল্টনে ছিলেন। বাঙালি পল্টনে একজন পাঞ্জাবি মৌলবি সাহেব থাকতেন, যাঁর মুখে ‘দীওয়ান-ই-হাফিজ’-এর কয়েকটি কবিতা শুনে নজরুল মুগ্ধ হন। বিমুগ্ধ নজরুল সেই মৌলবি সাহেবের কাছে ফারসি ভাষার তালিম নেন। এ প্রসঙ্গে নজরুল লিখেছেন, ‘তাঁরই কাছে ক্রমে ফার্সি কবিদের প্রায় সমস্ত বিখ্যাত কাব্যই পড়ে ফেলি। তখন থেকেই আমার হাফিজের দীওয়ান অনুবাদের ইচ্ছে হয়।’ ‘দীওয়ান-ই-হাফিজ’ শিরোনামে কবি হাফিজের আটটি গজলও নির্ঝর কাব্যগ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়।

নজরুল বাল্যকালেই আরবি ভাষা শিক্ষা করেন। তিনি আরবি ছন্দ বিষয়েও বিশেষ অভিজ্ঞ ছিলেন।

‘আরবি ছন্দের কবিতা’ প্রবাসীতে প্রকাশিত হওয়ার পর বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকায়ও পুনর্মুদ্রিত হয়। এটি নির্ঝর কাব্যগ্রন্থেরও অন্তর্ভুক্ত।

লক্ষণীয়, নির্ঝর-এর অন্তর্গত কবিতাসমূহ দেশের বিভিন্ন লব্ধপ্রতিষ্ঠ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। উদীয়মান একজন কবির পক্ষে এটি কম গৌরবের বিষয় নয়। এ পত্রিকাগুলো হচ্ছে প্রবাসী, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা, বঙ্গনূর, সওগাত, সহচর, মোসলেম ভারত ও স্বদেশ।

অনেকের মতে, নির্ঝর-এর মূল পাণ্ডুলিপিতে মোট ১৪টি কবিতা ছিল। কিন্তু মুদ্রিত গ্রন্থে ২৫টি কবিতা স্থান পায়। সম্ভবত এ কারণেই কাব্যখানি বাজারে বের হতে পারেনি। কিন্তু আমার মতে, এর মূল রহস্য অন্যত্র।

‘নজরুলের পাঁচখানি বাজেয়াপ্ত করা গ্রন্থের অন্যতম প্রলয় শিখা প্রকাশিত হয় ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে। মুদ্রাকর ও প্রকাশক হিসেবে নজরুলের নামে মুদ্রিত হয়। গ্রন্থটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তা রাজরোষে পতিত হয় এবং ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর বাজেয়াপ্ত হয়। শুধু তা-ই নয়, ‘রাজদ্রোহ’ অভিযোগে নজরুলকে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পরে অবশ্য গান্ধী-আরউইন চুক্তির পর মামলা থেকে তিনি মুক্তি পান। তবে নজরুল মুক্তি পেলেও প্রলয় শিখার ওপর বাজেয়াপ্ত আদেশ বহালই রইল। বাজেয়াপ্ত হওয়ার পর সরকার প্রলয় শিখার প্রচার বন্ধে তৎপর হলেন’ (শিশির কর—নিষিদ্ধ নজরুল, পৃষ্ঠা: ৪২)।

প্রলয় শিখা (১৯৩১) কাব্যগ্রন্থে মোট ২০টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে চারটি উল্লেখযোগ্য কবিতা রয়েছে। যথা: নমস্কার, হবে জয়, পূজা-অভিনয় ও চাষার গান। আরও লক্ষণীয়, নজরুলের নির্ঝর কাব্যগ্রন্থেও (১৯৩৯) এই চারটি কবিতা রয়েছে। কবিতা চারটির অন্তর্ভুক্তি সম্ভবত লেখকের অজ্ঞাতসারেই ঘটেছে। কারণ, এর পরিণতি সম্পর্কে নজরুলের অবশ্যই অবহিত থাকার কথা। নজরুলকে সম্ভবত কেউ সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তাই নির্ঝর সম্পূর্ণ মুদ্রিত হওয়া সত্ত্বেও কাব্যটি বাজারে অপ্রকাশিত থাকে।

১৯৪৫ সালে প্রলয় শিখা কাব্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে তা পুনর্মুদ্রিত হয়। নজরুলের গ্রন্থস্বত্বের উত্তরাধিকারী খিলখিল কাজীর অনুমতিক্রমে নজরুল ইনস্টিটিউট নির্ঝর কাব্যগ্রন্থের তিনটি সংস্করণ প্রকাশ করে (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭, জুলাই ২০০১ ও জানুয়ারি ২০০৮ সালে)।