পাহাড়ি কাশ

ফুটে আছে পাহাড়ি কাশফুল, হিমছড়ির পাহাড় থেকে তোলা ছবি l লেখক
ফুটে আছে পাহাড়ি কাশফুল, হিমছড়ির পাহাড় থেকে তোলা ছবি l লেখক

এক পাশে সমুদ্র। যেখানে ঢেউয়েরা আছড়ে পড়ছে, সেই আছড়ে পড়া ঢেউয়ের বিজ্ঞাপনে মানুষের মনও ঝুঁকে পড়ে বেলাভূমির কাছের জলে। অন্য পাশে উঁচু পাহাড়। যেখানে ভাঁজে ভাঁজে দোলা দেয় গাছের পাতা, নরম ঘাসের কাণ্ড। এ দুয়ের মধ্যে পথচলা। একজন জীববৈচিত্র্য গবেষক যখন পথ চলেন, তখন তাঁকে সব দিকে খেয়াল রাখতে হয়। জল, স্থল, শ্যামল প্রকৃতি—সব জায়গাতেই তাঁর উপাদান। সেটা হতে পারে পাখি, কাঁকড়া কিংবা কোনো বুনো ফুল।
শরতের শেষ বিকেলে সূর্যটা হেলে পড়েছে পশ্চিমের আকাশে। তার গোলাকার রক্তিম আলোকধারা কিছুক্ষণ বাদেই মিলিয়ে যাবে দূরের সাগরে। তবে কিছুটা আলো তখনো লেগে আছে পাহাড়চূড়ায়। এ এক অপরূপ আলোর আভা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গোলাপি-রুপালি রঙের বুনো ফুল। মিষ্টি এ ফুলের নাম পাহাড়ি কাশ। বাতাসে দুলছে সে ফুলের মঞ্জরি। পাহাড়ি কাশফুলের রং নদীর চরে ফোটা কাশের থেকে আলাদা। তবে শেষের দিকে সেও কিছুটা ফ্যাকাশে সাদা হয়ে যায়। পাহাড়ে যখন কাশ ফোটে, তখন সবুজ নরম আলো ছড়ায়।
পাহাড়ি কাশ ঘাস পরিবারের ফুল। প্রধানত পাহাড়ের ঢালে, টিলায় এ উদ্ভিদ দেখা যায়। সমতলে এদের উপস্থিতি বিরল। পাহাড়ের মাটির স্বাদগুণে এরা সমতলের ভূমিতে অভিযোজিত হতে পারেনি। তবে পাহাড়ি নদীর কাছে এলিয়ে পড়া কোনো উপত্যকায় মাঝে মাঝে চোখে পড়ে।
পাহাড়ি কাশের বৈজ্ঞানিক নাম saccharum arundinaceum। ইংরেজি নাম Pin-reed grass। পরিবার Poaceae। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকার পাহাড়ে এটি বেশি দেখা যায়। তবে ফুল না ফুটলে এ ঘাসের দিকে কেউই তাকাবে না।
পাহাড়ি কাশ লম্বা কাণ্ডের ঘাস, যাতে ধূসর-সবুজ পাতা থাকে। উচ্চতা ১০-১৫ ফুট। পাতার মাঝখানে সাদা বর্ণের মধ্যশিরা থাকে। অক্টোবরের শুরুতে কাণ্ডের মাঝখান থেকে মঞ্জরি বের হয়, তাতে ফুল ধরে। ফুলের মঞ্জরি বেড়ে গিয়ে পাতা থেকে ২-৩ মিটার ওপরে চলে আসে। পাহাড়ি কাশ বহুবর্ষজীবী। গুচ্ছাকারে বা ঝাড় আকারে বেড়ে ওঠে। ঝাড় কোনো বাধা না পেলে চারদিকে বিস্তৃত হয়। পাহাড়ের যেখানে পানি জমে থাকে না সেখানকার শিলা, পাথর ও বালুযুক্ত মাটিতে ভালো জন্মে। এটি ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারেও দেখা যায়। এ প্রজাতি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয়। তারা এটি দিয়ে ঝাড়ু, ঘরের বেড়া, চাল ও ঝুড়ি তৈরি করে। পাহারে ভূমিক্ষয় রোধে এটি খুবই কাজে লাগে। তবে অত্যধিক আহরণের ফলে পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বীজ থেকে চারা গজায়। বাতাসের মাধ্যমে এ ঘাসের বীজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।