হারিয়ে গেল সুগন্ধি মধুমাধবী!

মধুমাধবী ফুল, লাউয়াছড়া বন থেকে তোলা ছবি l লেখক
মধুমাধবী ফুল, লাউয়াছড়া বন থেকে তোলা ছবি l লেখক

লাউয়াছড়া অরণ্যের রেলপথ ধরে হেঁটে চলছি উত্তরের দিকে। হাঁটতে হাঁটতে একটি ছড়ার কাছে প্রবল সুগন্ধি বনফুলের সৌরভ ভেসে এল। হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলাম। মৌমাছি ও প্রজাপতির ওড়ার দিকে নজর দিলাম। এমন মাতাল সুবাসের ফুলের দিকে কীটপতঙ্গ নিশ্চয়ই উড়ে আসবে। অবশেষে এক বনবৃক্ষের কাণ্ডে জড়িয়ে থাকা মধুমাধবীকে খুঁজে পাওয়া গেল। বুনোফুলের এমন তীব্র ঘ্রাণ খুব কম ফুলেই থাকে। তখন ছিল বসন্তকাল। মৃদ বাতাসে সে ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছিল বনমাঝে। লাউয়াছড়া অরণ্যের অনেক অলিগলি চষে বেড়িয়েছি। কিন্তু একবারই মধুমাধবীর দেখা পেয়েছি। জানামতে রেমাকেলেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যেও এটি আছে। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা জানিয়েছেন, তিনি ছেলেবেলায় অঢেল দেখেছেন মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়ে এবং তাঁর গ্রামের আনাচকানাচের ঝোপের কাছে, রেললাইনের পাশে। কিন্তু এখন একটিও টিকে নেই! কাটা পড়েছে মানুষের বসতি বিস্তার, জ্বালানির চাহিদা মেটাতে ও বন বিনাশের ফলে।

ভারতের আসামে এটি মধুমালতী নামে পরিচিত। সুগন্ধি ফুল হিসেবেই তার বেশ কদর। যে কারণে বাড়ির বাগানেও এটির বিস্তার ঘটেছে ভারতের কিছু রাজ্যে। আমাদের দেশে মধুমালতী নামের একটি কাষ্ঠল লতা আছে। সে কারণে এ উদ্ভিদটির নামকরণ করা হয়েছে মধুমাধবী, অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মাও এ নামটির পক্ষে মত দিয়েছেন।

মধুমাধবীর বৈজ্ঞানিক নাম stixis suaveolens। পরিবার Capparidaceae। মধুমাধবী একটি বিপন্ন উদ্ভিদ। বনের পরিবেশে টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি এক্স-সিটু কনজারভেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটিকে টিকিয়ে রাখা যেতে পারে। বাড়ির বাগানে, উদ্ভিদ উদ্যানে রোপণ করা যেতে পারে।

মধুমাধবী আরোহী কাষ্ঠল লতা বা গুল্ম। ঘন জঙ্গল, খোলা বন, পাহাড়ের পাদদেশে জন্মে। ভারতে প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতায় দেখা যায়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে আছে।

ভারতের সিকিম, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে জন্মে। তা ছাড়া নেপাল, ভুটান, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারের বনে দেখা যায়।

 মধুমাধবী প্রায় ১৫ মিটার লম্বা হয়। শাখা-প্রশাখা হালকা খয়েরি থেকে ধূসর। দৈর্ঘ্য ১৫-২৫ সেন্টিমিটার। ছোট ফুলে ৫-৬টি পাপড়ি থাকে। ফুল হালকা হলুদ, সুগন্ধি। ফল পাকলে কমলা রঙের হয়। ভারতের আদিবাসীরা এটির ফল খায়। ফুল ফোটে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত, থাকে আগস্ট-অক্টোবর মাস পর্যন্ত। বীজ থেকে চারা গজায়। উদ্ভিদবিজ্ঞানী উইলিয়াম রক্সবার্গ এ উদ্ভিদের প্রথম নমুনা সংগ্রহ করেন।