বরগুনা পৌরসভার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি বিশাল আবর্জনার স্তূপ (ডাম্পিং স্টেশন) আছে। সেখানে প্রতিদিন পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। এসব আবর্জনা দিনরাত পোড়ানো হচ্ছে। এর ধোঁয়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। ধোঁয়ায়, দুর্গন্ধে এবং মশা-মাছির উপদ্রবে ওই এলাকার বাসিন্দাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
ওই ডাম্পিং স্টেশনের চারপাশে মাইঠা, দক্ষিণ সোনাখালী, ছোট লবণগোলা ও কড়াইতলা গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করে। গ্রামগুলোর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় দুই একর জায়গায় পৌরসভার এই ভাগাড়। এর ৫০ গজের কম দূরত্বে রয়েছে ১০টি পরিবার। তা ছাড়া আশপাশে আছে তিনটি মসজিদ, দুটি বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা। ময়লার দুর্গন্ধে ও ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার অনেকে ঘরবাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছেন। অন্যরা জমি বিক্রি করতে চান, কিন্তু ক্রেতা নেই।
পৌর কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ডাম্পিং স্টেশনে ৮ থেকে ১০ টন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা রাস্তার ওপরে ফেলে রাখা হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দিনরাত ময়লা পোড়ানো হচ্ছে। এর ধোঁয়া আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে লোকজন নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সোনাখালী এলাকার বাসিন্দা মো. জসীম বলেন, ময়লা পোড়ানোর ধোঁয়ায় এলাকার মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসে। দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উপদ্রবে এলাকার মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। একই এলাকার কৃষক আবু সালেহ বলেন, ‘আমাদের কৃষিকাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। এ ছাড়া দূষিত পানিতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এখন আবার রবি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।’
ময়লার স্তূপটি থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে একটি আধা পাকা বাড়ি। এর মালিক মাহবুব রহমান বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনেই বিশাল ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধ, মশা-মাছি, আর দিনরাত ভাগাড়ের বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়ায় আমাদের জীবন অতিষ্ঠ। ঘরের দরজা-জানালা সারা দিনই বন্ধ রাখতে হয়।’
ভাগাড়টির লাগোয়া পূর্ব দিকের একটি বাড়ির গৃহবধূ সাহিদা বেগম বলেন, ‘ময়লার দুর্গন্ধে আমাদের বাড়িতে থাকা দায়। শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
মাইঠা গ্রামের বাসিন্দা সুলতান আহম্মেদ বলেন, ‘২০-২৫ বছর ধরে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা এই এলাকায় এনে ফেলা হচ্ছে। দিনরাত ময়লা পোড়ানো হচ্ছে। ধোঁয়ায় আমরা আর টিকতে পারছি না। আমাদের এই এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুখ-বিসুখে ভুগছেন।’
মোটরসাইকেলচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাগাড় এলাকা অতিক্রম করার সময় নিশ্বাস বন্ধ রাখতে হয়। এভাবে সড়কের পাশে ময়লা ফেলে রাখায় পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক সঞ্জিব চন্দ্র রায় বলেন, জায়গা কম, এ কারণে বাধ্য হয়ে পাশে সড়কে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, আবাসিক এলাকা, গ্রাম ও জনবসতিপূর্ণ স্থানে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় করার কোনো বিধান নেই।
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এই ডাম্পিং স্টেশন সরিয়ে নেওয়া হবে। এ জন্য সদর ইউনিয়নের পিটিআই এলাকায় পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, এ বছর ওই জমির চারপাশে দেয়াল তুলে নতুন ভাগাড় চালু করতে পারব।’