মুখ চিনে চিনে মারা হয়েছে: আইভী

বুধবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। নগর ভবন, ১৭ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
বুধবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। নগর ভবন, ১৭ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জে চাষাঢ়ায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বুধবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। বেলা তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জ নগর ভবনে আইভী অভিযোগ করেছেন মুখ চিনে চিনে মারা হয়েছে।

মেয়র আইভী আবারও মঙ্গলবার ইটবৃষ্টি ও হামলার ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমি নিজেও পায়ে ব্যথা পেয়েছি। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল, গুলি ছোড়া হয়েছে। মামলা হবে না? আমি তো নিরস্ত্র ছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল মানুষ ফুটপাতে হাঁটবে আর হকাররা মার্কেটে থাকবে—ব্যাপারটি গণমাধ্যমকে জানানোর জন্য। আমি তো কারও বিরুদ্ধে যাইনি। আমার দুই গজ সামনেই পিস্তল বের করেছে।’

এটা দুই পরিবারের দ্বন্দ্বের ফল কি না, এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত নারী সিটি মেয়র বলেন, ‘এটা পারিবারিক দ্বন্দ্ব না। বড় দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। আমি কোনো দিনই আগ বাড়িয়ে কারও সঙ্গে লাগতে যাইনি। পারিবারিক সংঘর্ষ না। তবে মঙ্গলবার যাঁরা আহত হয়েছেন, প্রায় সবাই আমার মামা, ভাই। মুখ চিনে চিনে মারা হয়েছে। আমার দুঃখ আমার কর্মীদের পেটানো হয়েছে। একজন কর্মীকেও মারের হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি। আমার সঙ্গে যারা ছিল, সবাই অসহায়।’

আইভী বলেন, ‘হকার বিষয়ে সাংসদ সেলিম ওসমান চিঠি দিয়েছিলেন। উল্লেখ করেছিলেন বিকল্প জায়গায় ব্যবস্থা করার। পরে আমরা চারটি জায়গা উল্লেখ করেছিলাম। এমন না যে তাদের পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করেছি। আমরা হকারদের বিভিন্ন গলির মধ্যে জায়গা করে দিচ্ছি। এখন হকার দেড় হাজারেরও বেশি। নারায়ণগঞ্জ এক রাস্তার সড়ক। এখানে এত হকার বসলে কীভাবে মানুষ চলাচল করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফুটপাতে নগরবাসী হাঁটতে না পারা আমার জন্যও ডিসক্রেডিট। সাংসদ তো বলতে পারতেন হকারদের জায়গার ব্যাপারে। আমরা সরকারের কাছে হকারদের জন্য টাকাও চেয়েছি।’

এটা শামীম ওসমান ও আইভী পক্ষের সংঘর্ষ কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, ‘আমি তো কাউকে ডেকে নিয়ে আসিনি। এক পক্ষ মারল। আর আরেক পক্ষ মার খেল। এখানে তো দুপক্ষের আধিপত্য বিস্তারের কিছু ঘটেনি। উনি তো আগের দিন ঘোষণাই দিয়েছেন। আদেশ করেছেন। ১৫০ লোক আহত হলো। এ রকম ঘটনার ইঙ্গিত প্রশাসন আমাকে জানাল না কেন।’

মেয়র বলেন, ‘সাংসদ চিঠি দিয়েছেন, আমি জবাব দিয়েছি, হকাররা আমার সঙ্গে আলোচনা করে গেছে। এখনো সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। তাহলে এটা কেন ঘটানো হলো। নিয়াজুল কে, সেটা বের হলেই তো সব বের হয়ে যাবে। এর পেছনের ইন্ধনদাতা কে, বের হবে।’

হঠাৎ পুলিশ হকারদের ওপর মারমুখী কেন—এর জবাবে মেয়র আইভী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন প্রায়ই হকার উচ্ছেদ করে। এবার মূলত পুলিশ বড় দিন থেকে উচ্ছেদ শুরু করেছে। তারা কেন মারমুখী ছিল, সেটা জানি না।’

হকারদের ভবিষ্যতে কী হবে—এর উত্তরে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘সামনে হকাররা আগের মতো বসবে না। ডিসি-এসপির সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরাও এটা নিয়ে চিন্তা করছেন। এ ঘটনার পর দমে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জনস্বার্থ ও মানবিক দিক দেখতে হবে। তবে কেউ কেউ আবার অতিমানবিক হয়ে যায়।’

ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সাংসদ শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। চাষাঢ়ার সায়েম প্লাজা থেকে আইভীর লোকজনের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পিস্তল উঁচিয়ে ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে সড়কে পড়ে যান সেলিনা হায়াৎ আইভী। তাঁর পায়ে ইটের আঘাত লাগে। সেখান থেকে তিনি সায়েম প্লাজার পাশে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশে এ হামলা চালানো হয়েছে।