এটা হকার বনাম আইভীর দ্বন্দ্ব: শামীম ওসমান

শামীম ওসমান
শামীম ওসমান

মঙ্গলবারের হামলা ও সংঘর্ষ হকার বনাম নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর দ্বন্দ্ব বলে দাবি করেছেন এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাংসদ শামীম ওসমান। বুধবার বিকেল চারটার দিকে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ার রাইফেলস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শামীম ওসমান বলেন, ‘নিয়াজুল ছিল আমাদের কর্মী। সে একা হেঁটে যাচ্ছিল। মারার পরই সে তার অস্ত্র বের করে।’

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে অথবা প্রকৃত সত্য না জেনেই অনেক গণমাধ্যম সংঘর্ষটিকে শামীম ওসমান বনাম আইভীর সংঘর্ষ বানানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এটি না। এটা হকার বনাম আইভীর দ্বন্দ্ব। গরিব বনাম গরিবদের বিপক্ষদের দ্বন্দ্ব।

শামীম ওসমান বলেন, ‘মঙ্গলবার আমি শুনি উনি (আইভী) লোকজন নিয়ে চাষাঢ়া আসবেন। তাহলে ২৫ দিন তিনি কী করলেন? তিনি যদি ভোটের আগে সবার কাছে গিয়ে বাবা-ভাই বলতে পারেন, তাহলে এখন তাদের পেটে লাথি মারবেন কেন? শান্তিপূর্ণভাবে হেঁটে আসলে সুফিয়ানের কোমরে পিস্তল কেন? সঙ্গে আরও ছিল বিএনপির ক্যাডার সুমন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি, যুবদলের আহ্বায়ক খোরশেদসহ হাসান এ মজিদের হত্যার আসামি বিভা। তারাই প্রথমে হকারদের মারল।’

আমি চাষাঢ়ায় না গেলে অনেকের অস্তিত্বও থাকত না
শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার দলের সাধারণ সম্পাদক আমাকে ফোন করে জানালেন সেখানে এখনই যাও, এগুলো থামাও। নির্দেশ পেয়েই আমি দৌড়ে সেখানে যাই এবং পরিস্থিতি শান্ত করি। আমি সেখানে না গেলে অনেকের অস্তিত্বও থাকত না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটাই অপরাধ করেছি। আর সেটা হলো গরিব মানুষের পক্ষে কথা বলেছি। আমি আগেই বিষয়টি পরিষ্কার করেছি যে ফুটপাতে হকার থাকুক, বস্তি থাকুক এটা আমিও চাই না। কিন্তু আমি চাই সবার মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকুক।’

মারধরের পরই নিয়াজুল অস্ত্র বের করেছে
শামীম ওসমান বলেন, ‘নিয়াজুল ছিল আমাদের কর্মী। নিয়াজুল আমাদের প্রয়াত সাহসী নেতা নজরুল ইসলাম সুইটের ভাই। নিয়াজুল এখন একটা মার্কেটের মালিক। সে একা সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। প্রথমে ১০ মিনিট ধরে তিন দফা তাকে মারা হয়েছে। এরপর সে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র বের করেছে। তাকে মারার পর তার লাইসেন্স করা অস্ত্রও নিয়ে গেছে। পরে এই অবস্থা দেখে তার মামা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সেখানে যান। পরে তার সঙ্গে আরও লোক সেখানে যান। এরপরও আমি সেখানে যাইনি।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই কোনো নোটিশ ছাড়াই বেধড়ক পিটিয়ে হকারদের সরিয়ে দেয় ও মালামাল জব্দ করে। তারা তো দোকানদারি করে, অবৈধ কিছু করে না। তারা পরে আমার কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ে। হকাররা কয়েকবার মেয়রের কাছে গেলেও কোনো ফল পায়নি। পরে আমি ওই এলাকার সাংসদকে বিষয়টি বলি। সাংসদ মেয়রকে সরাসরি চিঠি পাঠান। কিন্ত মেয়র সেখানে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে হকার বসানোর কথা উল্লেখ করে চিঠির উত্তর দেন। তখন হকাররা আবার আমার কাছে আসে। আমি ১৫ জানুয়ারি তাদের সমাবেশে গেলে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাদের বিকল্প কিছু থাকলে ২৫ দিন রাস্তায় পড়ে থাকত না। তখন আমি ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে সিটি করপোরেশনের উদ্দেশে বলি হকারদের জন্য কিছু একটা করার জন্য।’

নিয়াজুল দোষী হলে পুলিশ ব্যবস্থা নিক
শামীম ওসমান বলেন, ‘নিয়াজুল যদি দোষী হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশকে বলব তদন্ত করুক, ব্যবস্থা নিক। নিয়াজুল তার হারানো অস্ত্রের ব্যাপারে জিডি করতে গিয়েছিল। সেটাও পুলিশ নেয়নি। প্রশাসন ও পুলিশ যদি আমার কথায় চলে, তাহলে জিডি নিল না কেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন আগে পুনর্বাসন পরে উচ্ছেদ। আপনার (আইভী) ভুলের জন্য দল গালি খাবে কেন? আমি এখনো বলব হকারদের বিকল্প ব্যবস্থা করেন। আলোচনায় বসেন।’

এভাবে কত দিন দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চলবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে শামীম ওসমান বলেন, ‘দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব মেটাতে হলে তো দুপক্ষের সমান মানসিকতা থাকতে হবে। আইভীর প্রয়াত বাবা নাজিমুদ্দিনের কাছে বিপুল ভোটে হেরেছিলেন। কিন্তু ছাত্ররাজনীতিবিদ হিসেবে আমি তাঁর পাশে ছিলাম। অথচ আমার ছেলের বিয়েতে ২৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি বলে বেড়াচ্ছেন। পরিবার নিয়ে তো এভাবে কথা বলা ঠিক না। দলের কাছে অনুরোধ করব, ঘটনা তদন্ত করে যে দোষী ব্যবস্থা নেন।’

ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সাংসদ শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। চাষাঢ়ার সায়েম প্লাজা থেকে আইভীর লোকজনের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পিস্তল উঁচিয়ে ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে সড়কে পড়ে যান সেলিনা হায়াৎ আইভী। তাঁর পায়ে ইটের আঘাত লাগে। সেখান থেকে তিনি সায়েম প্লাজার পাশে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশে এ হামলা চালানো হয়েছে।