ঘর পেলেন সেই কালাকচু

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার জোড়াব্রীজ গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাঁশের পণ্যের কারিগর কালাকচু চাকমা (৫৩) নতুন ঘর পেয়েছেন। আট বছর বয়সেই দৃষ্টিশক্তি হারান কালাকচু। স্ত্রী, এক ছেলে তিন মেয়ে নিয়ে থাকতেন। সম্প্রতি প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর কালাকচু চাকমাকে নতুন ঘর নির্মাণ, সৌরবিদ্যুৎ ও আত্মনির্ভরশীলতার জন্য তিনটি ছাগল দিয়েছে সেনাবাহিনী।

১৪ জানুয়ারি কালাকচু চাকমাকে নতুন ঘর বুঝিয়ে দিয়েছেন খাগড়াছড়ি ২০৩ ব্রিগেডের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।

সরেজমিন জোড়াব্রীজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কালাকচু চাকমার স্ত্রী নিরতা চাকমা নতুন ঘরের জিনিসপত্র ঘোছানোর কাজ করছেন। নতুন ঘর পেয়ে অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে বৃষ্টি হলে সবাইকে ঘরের একটি কোণে বসে থাকতে হতো। অন্ধ স্বামীর বাঁশের তৈরি করা কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রি করে টানাপোড়েনের সংসার। প্রথম আলোতে আমাদের কষ্টের কথা প্রকাশিত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোন আমাদেরকে নতুন ঘর তৈরি করে দিয়েছে।’

স্ত্রী নিরতা চাকমা জানান, তাঁদের সংসারে এক ছেলে, তিন মেয়ে। ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা পৃথক। ছোট দুই মেয়ে নিয়ে তাঁদের এখন চারজনের সংসার। তিনি পাহাড় থেকে বাঁশ কেটে এনে দেন। আর সে বাঁশ থেকে বেত তুলে স্বামী কাল্লুং তৈরি করেন। সেগুলো বাজারে বিক্রি করেন তিনি। সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয়টি কাল্লুং বানাতে পারেন। সেগুলো প্রতিটি দেড় শ থেকে দুই শ টাকায় বিক্রি করেন। এ টাকায় তাঁদের সংসার চলে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কালাকচু চাকমা বলেন, ‘ঘর করার সামর্থ্য ছিল না। ভাঙা ঘরে কোনে রকম জীবন কাটাতাম। আমার চাওয়া ছিল একটি নতুন ঘর। ঘর পেয়ে খুব খুশি লাগছে। আগে ভাঙা ঘরে বৃষ্টি হলে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর ঘুমের কষ্ট হবে না।’

খাগড়াছড়ি ২০৩ পদাতিক ব্রিগেডের আঞ্চলিক অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, ‘সংবাদপত্র মানবকল্যাণে কাজ করে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে মানবিকতা জাগ্রত হয়। প্রথম আলোতে প্রকাশিত দৃষ্টিহীন কালাকচুর জীবনসংগ্রামের সচিত্র প্রতিবেদন মানবিকতাকে জাগিয়ে দিয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনের কল্যাণে আমরা কালাকচু চাকমার পাশে দাঁড়াতে পেরেছি।’

দীঘিনালা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়া উদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালাকচু চাকমার কষ্টের কথা প্রথম আলোতে প্রকাশিত হওয়ার পর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডারের নির্দেশনায় আমরা দুই লাখ টাকা ব্যয় করে কালাকচু চাকমাকে টিনের নতুন ঘর, শৌচাগার নির্মাণ করে দিয়েছি।’