পাখিদের জন্য গাছে গাছে মাটির কলস

আটিয়া গ্রামে পাখির জন্য গাছে গাছে মাটির কলস ঝুলিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় যুবকেরা l প্রথম আলো
আটিয়া গ্রামে পাখির জন্য গাছে গাছে মাটির কলস ঝুলিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় যুবকেরা l প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া গ্রামের তরুণ-যুবকেরা মিলে পাখি রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল তৈরির উদ্দেশ্যে গাছে গাছে বেঁধে দিয়েছেন মাটির কলস। পাখিরা বাসা বাঁধছে সেখানে। মাত্র চার মাসেই গ্রামটিতে পাখির আনাগোনা বেড়ে গেছে।

টাঙ্গাইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে আটিয়া গ্রাম। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গাছগাছালির ছায়ায় ঘেরা এ গ্রামে একসময় নানা প্রজাতির অনেক পাখি দেখা যেত। কিন্তু দিন দিন কমছে পাখির সংখ্যা। অনেক পাখি এখন এ গ্রামে আসেই না। বিষয়টি নজরে আসে গ্রামের মীর কামাল হোসেনের। ৪০ বছর বয়সী কামাল রাজধানী ঢাকায় ব্যবসা করেন। গত বছর কোরবানির ঈদে বাড়ি এসে গ্রামের যুবকদের নিয়ে বসেন। বিষয়টি ওই যুবকদেরও ভাবিয়ে তোলে। পরে তাঁরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, যে যা পারেন চাঁদা দিয়ে মাটির কলস কিনে গ্রামের গাছে গাছে ঝুলিয়ে দেবেন। এতে পাখিদের বাসা বাঁধা সহজ হবে। পাখির সংখ্যা বাড়বে। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। বৈঠকে উপস্থিত সবাই ৫০ থেকে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে গত সেপ্টেম্বরে আড়াই শ কলস কিনে গাছে ঝুলিয়ে দেন।

মাত্র চার মাস যেতেই ভালো ফল পেতে শুরু করেন উদ্যোক্তারা। তাঁরা জানান, এখন বেশির ভাগ কলসেই পাখিরা বাসা বেঁধেছে।

সরেজমিনে গত শুক্রবার আটিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাছের ডালে ডালে ঝুলছে মাটির কলস। সেটি ঘিরে পাখির যাওয়া-আসা। গ্রামের মানুষও খুশি পাখির কলকাকলিতে।

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি জয়নাল আবেদিন জানান, নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে পাখিরা বাসা বাঁধছে। এখন গ্রামে আগের চেয়ে বেশি পাখি দেখা যায়।

একই গ্রামের ইলিয়াস আলী জানান, অনেক পাখিই এখানে আসা ছেড়ে যাচ্ছিল। কলসে বাসা বেঁধে দেওয়ায় নিরাপত্তা পেয়ে পাখিগুলো আবার আসতে শুরু করেছে।

এই কর্মসূচির মূল উদ্যোক্তা কামাল হোসেন জানান, ‘গ্রামে এসে ছেলেমেয়েদের পাখি দেখাতে গিয়ে দেখি, দেশীয় অনেক পাখিই আর সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলতে গাছে গাছে মাটির কলস ঝুলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। প্রথম পর্যায়ে তিন শ কলস ঝুলিয়ে দিয়ে ভালো ফল পাওয়া গেছে। তাই আরও দেড় হাজার কলস ঝোলানোর কাজ শুরু করা হয়েছে।’

উদ্যোক্তাদের অন্যতম এ গ্রামের যুবক খন্দকার মনিরুজ্জামান জানান, ঝুলিয়ে দেওয়া কলসগুলো তাঁরা নিয়মিত দেখাশোনা করেন। বেশির ভাগ কলসেই পাখি বাস করছে।

সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মল্লিক জানান, পাখির প্রতি যুবকদের এই ভালোবাসা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। এতে গ্রামটিতে পাখি আগের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) টাঙ্গাইল অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা সোমনাথ লাহিড়ী জানান, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।

দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, আটিয়া গ্রামের যুবকদের এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহায়তা করবে।