ভিসিকে উদ্ধারে ছাত্রলীগের তাণ্ডব

ছাত্রলীগের কর্মীদের লাথি থেকে রেহাই মেলেনি আন্দোলনরত ছাত্রীদেরও। ছবি: সাজিদ হোসেন
ছাত্রলীগের কর্মীদের লাথি থেকে রেহাই মেলেনি আন্দোলনরত ছাত্রীদেরও। ছবি: সাজিদ হোসেন

ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারের দাবিসহ চার দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে ‘উদ্ধার’ করেছেন ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হন।

বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মী, ডাকসুর নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ৭ সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অপরাজেয় বাংলার সামনে জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি টিএসসি, কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ঘুরে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে আসে। তাঁদের আসার খবর পেয়ে আগে থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। 

উপাচার্যের কার্যালয়ের ফটক ভাঙছেন বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মী, ডাকসুর নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ৭ সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: ফোকাস বাংলা
উপাচার্যের কার্যালয়ের ফটক ভাঙছেন বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মী, ডাকসুর নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ৭ সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: ফোকাস বাংলা

শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক কার্যালয়ের একাধিক ফটক ভেঙে বেলা দেড়টা থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ের দরজার সামনের করিডরে অবস্থান নেন। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত উপাচার্য তাঁর কক্ষেই আটকা থাকেন। বেলা সাড়ে তিনটায় এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা থাকলে উপাচার্য পেছনের ফটক দিয়ে বের হন। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ঘিরে আটকে রাখেন।

এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে সংগঠনের ২০-২৫ জনের একটি দল উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যান। তাঁরা উপাচার্যকে কক্ষে পাঠিয়ে আন্দোলনকারীদের করিডর থেকে সরিয়ে দেন। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের কয়েক শ কর্মী এসে জড়ো হন। এরপর তাঁরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। শিক্ষার্থীরা বের হওয়ার সময় বিভিন্ন ফটকের সামনে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা দফায় দফায় রড, লাঠি, ইটপাটকেল, লাথি, কিল, ঘুষি মেরে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।

মারধরে অংশ নেন ছাত্রলীগের নারী কর্মীরাও। ছবি: সাজিদ হোসেন
মারধরে অংশ নেন ছাত্রলীগের নারী কর্মীরাও। ছবি: সাজিদ হোসেন

ছাত্রলীগের এই হামলায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা, ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মাসুদ আল মাহদী রয়েছেন।

ছাত্রলীগের মারধরে একাধিক সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মীর আরশাদুল হকের মাথা ফেটে গেছে।

আন্দোলনকারীরা যখন বের হচ্ছিলেন, তখন দফায় দফায় তাঁদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছবি: সাজিদ হোসেন
আন্দোলনকারীরা যখন বের হচ্ছিলেন, তখন দফায় দফায় তাঁদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছবি: সাজিদ হোসেন

হামলা শেষে মধুর ক্যানটিনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে ও মীমাংসা করতে সেখানে গিয়েছিল। উপাচার্যের সম্মান রক্ষার্থে ছাত্রলীগ তাঁদের সরিয়ে দিয়েছে।’

রড হাতে তেড়ে আসেন ছাত্রলীগ কর্মী। ছবি: সাজিদ হোসেন
রড হাতে তেড়ে আসেন ছাত্রলীগ কর্মী। ছবি: সাজিদ হোসেন

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ দাবি করেছে, তাদের ১২ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৫ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রদের হুমকি-ধমকি ও ছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন করে আন্দোলন নস্যাৎ করে দেন। এর প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা ১৭ জানুয়ারি প্রক্টর কার্যালয়ের ফটক ভেঙে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করেন। পরদিন অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

হামলায় আহত লিটন নন্দীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: ফোকাস বাংলা
হামলায় আহত লিটন নন্দীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: ফোকাস বাংলা

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্র প্রতিনিধিসহ ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনার তদন্ত করা, অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাদের বহিষ্কার করা ও প্রশাসনের করা মামলা তুলে নেওয়া।