গাছের আত্মা রইল গাছেই

☼ পশ্চিমবঙ্গের আদলে সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে
☼ আপাতত মহাসড়ক মেরামত ও মজবুত করা হবে
☼ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিদ্ধান্ত

যশোর-বেনাপোল সড়কে সারি সারি শতবর্ষী গাছ। ঝিকরগাছা মহিলা কলেজ এলাকা, যশোর, ১৫ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
যশোর-বেনাপোল সড়কে সারি সারি শতবর্ষী গাছ। ঝিকরগাছা মহিলা কলেজ এলাকা, যশোর, ১৫ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

গাছ না কেটেই যশোর রোড বলে পরিচিত যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বেনাপোলের ওপারে ভারতীয় অংশের যে সড়কে গাছ রেখে সম্প্রসারণ করা হয়েছে, তা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এই সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশোধিত এ প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

তবে আপাতত ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি মেরামত ও মজবুত করা হবে। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

জানুয়ারির শুরুতে যশোর জেলা প্রশাসন আয়োজিত এক বৈঠকে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে যশোর পর্যন্ত সড়ক চার লেনে সম্প্রসারণের জন্য দুই পাশের কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। শুরু থেকেই ওই গাছগুলো রক্ষায় পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। গাছগুলোকে না কেটেই যশোর রোড চওড়া করা যেতে পারে বলে মত দেন পরিবেশবিদ ও স্থানীয় মানুষেরা।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশবিদদের পরামর্শ ও জনমতকে গুরুত্ব দিয়েই আমরা গাছ না কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গাছগুলো রক্ষা করে কীভাবে মহাসড়ক সম্প্রসারণ করা যায় তা দেখতে আমরা বেনাপোলের ওপারে ভারতে রাস্তা দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা সেখানে যাব।’

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, অনুমতি ছাড়াই যশোর রোডের ২ হাজার ৩১৩টি গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রচলিত আইনে এমন প্রকল্প নেওয়ার আগে অবস্থানগত ছাড়পত্র, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) এবং গাছ কাটার জন্য অনুমোদন লাগে। এর কোনোটিই করাহয়নি।

 জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ৩২৯ কোটি টাকা এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়। কলকাতা ঘুরে এসে প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই লেনের প্রশস্ততা বাড়ানোর কথা থাকলেও গাছ রেখেই তা চার লেন করা যায় কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের যশোর রোড চওড়া করার জন্য শতাব্দীপ্রাচীন গাছগুলো কেটে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছিল সেখানকার সরকার। ওই সড়কের দুই পাশে দুই শর বেশি গাছ রয়েছে, যেগুলোর বয়স দেড় শ বছরের বেশি। পরিবেশবাদী এবং স্থানীয় মানুষের বিরোধিতায় সেটি আদালতে গড়ায়।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশেও যশোর রোডের চার হাজারের বেশি শতবর্ষী গাছ কাটার ওপর ছয় মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন উচ্চ আদালত।