হালদা নদীতে আবার মৃত ডলফিন

হালদা নদীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়ন এলাকায় আরও একটি মৃত ডলফিন পানিতে ভাসছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ওই ইউনিয়নের নদীর ডুমখালি আজিমের ঘাটা থেকে ডলফিনটি উদ্ধার করে ডাঙায় তোলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কর্মকর্তারা। গত এক মাসে হালদা নদীতে এটিসহ চারটি ডলফিন মারা গেল। ছবি: প্রথম আলো।
হালদা নদীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়ন এলাকায় আরও একটি মৃত ডলফিন পানিতে ভাসছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ওই ইউনিয়নের নদীর ডুমখালি আজিমের ঘাটা থেকে ডলফিনটি উদ্ধার করে ডাঙায় তোলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কর্মকর্তারা। গত এক মাসে হালদা নদীতে এটিসহ চারটি ডলফিন মারা গেল। ছবি: প্রথম আলো।

• গত এক মাসে হালদায় চারটি ডলফিন মারা গেছে
• হালদায় যে ডলফিন দেখা যায়, তা স্থানীয়ভাবে উতোম বা শুশুক নামে পরিচিত
• ড্রেজার দিয়ে হালদা থেকে বালু তোলা এবং সেই বালু ইঞ্জিনচালিত নৌযানে পরিবহন করায় ডলফিনের বিচরণ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।
• হালদা নদীতে এখনো ১৫০টির বেশি ডলফিন রয়েছে।

চট্টগ্রামের হালদা নদীতে আবারও মৃত ডলফিন ভেসে উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপেজলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের ডুমখালি আজিমের ঘাটা এলাকায় হালদা নদী থেকে ডলফিনটি উদ্ধার করা হয়।

এ নিয়ে গত এক মাসে হালদা নদীতে চারটি ডলফিন মারা গেল। আগে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আরও একটি মরা ডলফিন পাওয়া যায়। প্রতিটি ডলফিনের শরীরে ক্ষতের চিহ্ন ছিল। হালদাপারের বাসিন্দারা বলছেন, নদীতে চলাচল করা বালুবাহী নৌযান এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রপেলারের (পানির নিচে থাকা ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত পাখা) আঘাতে এসব ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে।

হালদায় যে ডলফিন দেখা যায়, তা স্থানীয়ভাবে উতোম বা শুশুক নামে পরিচিত। মিঠাপানির স্তন্যপায়ী এই প্রাণী গেঞ্জেস বা গাঙ্গেয় ডলফিন। সাধারণত দূষণমুক্ত পরিষ্কার পানিতে এটি বিচরণ করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীতে ডলফিন মারা যাওয়ার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ডলফিনটি উদ্ধার করি। এটি লম্বায় সাড়ে চার ফুট। ডলফিনটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কী কারণে হালদায় ডলফিন মারা যাচ্ছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে।’ নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচলের সময় ধাক্কা লেগে ডলফিনগুলো মারা যাচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে তিনি ধারণা করছেন।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক বলেন, হালদা নদীতে একটি ডলফিন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পরীক্ষার মাধ্যমে নদীতে ডলফিন মারা যাওয়ার কারণ জানা যাবে।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ছত্তার খালের মুখ থেকে হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট পর্যন্ত নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা ডলফিনের মূল বিচরণক্ষেত্র। এই এলাকার মধ্যেই মরা ডলফিনগুলো পাওয়া গেছে।
গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে ১৬টি ডলফিন মারা গেছে বলে জানান হালদা নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ড্রেজার দিয়ে হালদা থেকে বালু তোলা এবং সেই বালু ইঞ্জিনচালিত নৌযানে পরিবহন করায় ডলফিনের বিচরণ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। হালদা নদীতে এখনো ১৫০টির বেশি ডলফিন রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ডলফিনের এই প্রজাতিটিকে অতি বিপন্ন (লাল তালিকাভুক্ত) হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

হালদা দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র। সরকার ২০১০ সালে চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাকে জলজ প্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করে।