খালেদা এখনো সাধারণ কয়েদি: বিএনপি

কারাগারের পথে খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
কারাগারের পথে খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বিএনপি অভিযোগ করে বলেছে, খালেদা জিয়াকে কারাগারে সাধারণ বন্দীর মতো রাখা হয়েছে। যে খাবার দেওয়া হয়েছে, তা মুখে দেওয়ার মতো নয়। একটি পরিত্যক্ত ভাঙা বাড়িতে তাঁকে একাকী রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষ নেই।

তবে সরকার বলছে, ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর মতো সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে চৌকি, কম্বল, টেলিভিশন এবং পত্রিকা দেওয়া হয়েছে। শুধু বাইরে থেকে খাবার নিতে দেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পরে খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা ডিভিশনের জন্য কোনো আবেদন করেননি বলে জানা গেছে। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, তারপরেও সামাজিক মর্যাদা, বয়স ও অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

এ নিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তারা ওই দিনই ডিভিশন চেয়ে দরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। আজ আবারও দরখাস্ত দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ডিভিশনের বন্দীরা যেসব সুবিধা পেয়ে থাকেন তার সবই তাকে দেওয়া হচ্ছে। সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে তিনি এসব পান না। কিন্তু তিনি দুইবার প্রধানমন্ত্রী এবং সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় তাকে এসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে নিরাপত্তার কারণে তাকে বাইরের খাবার দেওয়া হচ্ছে না। কারাগারের ভেতরেই রান্না করে তার জন্য খাবার দেওয়া হচ্ছে।

 পাঁচ আইনজীবীর অভিযোগ

বৃহস্পতিবার থেকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন খালেদা জিয়া। কারগারকে কেন্দ্র করে চারদিকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে কারাগারের ভেতরে খালেদা জিয়া ভালো নেই বলে দাবি করেছেন তাঁর পাঁচ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। গতকাল তাঁরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পরে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে সাধারণ বন্দীর মতো রাখা হয়েছে। যে খাবার দেওয়া হয়েছে, তা মুখে দেওয়ার মতো নয়। রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপি (সার্টিফায়েড কপি) পাওয়ার পর আজ-কালের মধ্যে তাঁরা আপিল করবেন বলে জানান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কারাগারে আসার পর থেকে তিনি খুব চুপচাপ আছেন। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। কারাগারে বন্দীদের জন্য নির্ধারিত খাবারই তাঁকে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বিশেষ কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। তাঁর ঘরে কোনো টিভিও নেই। কারাগারে আসার পর নিয়ম অনুসারে তাঁর জন্য কয়েদিদের শাড়িসহ কিছু কাপড়চোপড় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো তিনি পরছেন কি না কারা কর্মকর্তারা তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

খালেদা জিয়া কারাগারে আসার পর থেকেই কারাফটকের কাছাকাছি স্থানে সাংবাদিকেরা অবস্থান করছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রায়ই সেখানে আসছেন। তবে জোরদার নিরাপত্তা থাকায় তাঁরা কারাগারের ফটক পর্যন্ত যেতে পারছেন না। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সেখানে আসেন পাঁচ আইনজীবী ও বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান ও এ জে মোহাম্মদ আলী। দুই ঘণ্টা পর তাঁরা দেখা করার অনুমতি পান। তাঁরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে সোয়া এক ঘণ্টা পরে বেরিয়ে আসেন।

পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার বাইরে প্রচার করছে যে তাঁকে (খালেদা জিয়া) ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। ওনার সেবিকা অ্যালাউ করা হয়েছে, এ সবই অসত্য। দেখে আসলাম একটি পরিত্যক্ত ভাঙা বাড়িতে নির্জন কারাবাসে তাঁকে একাকী রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষ নেই।’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। অথচ তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক সাংসদ এবং একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। কারাবিধিতে এ রকম ১৮ ক্যাটাগরি আছে। যাঁরা ‘এ ক্যাটাগরি’তে আছেন, তাঁরা ডিভিশন পাবেন। এটি কার্যকর করতে কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই, কারা কর্তৃপক্ষ তা দিতে পারে। কিন্তু সে নিয়ম ভঙ্গ করে এবং কারাবিধি অমান্য করে বিএনপির চেয়ারপারসনকে সাধারণ কয়েদি হিসেবে রাখা হয়েছে।

মওদুদ আহমদ বলেন, রোববার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পেলে সোম বা মঙ্গলবার আপিল করা হবে। তখন জামিনের জন্যও দরখাস্ত করা হবে। প্রয়োজনে তাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবেন। কারণ, এতে সরকারের হাত রয়েছে।

মওদুদ আহমদ বলেন, সাধারণ কয়েদিকে যে খাবার দেওয়া হয়, সেটা বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেওয়া হচ্ছে, যা অখাদ্য। বাড়ি থেকে খাবার আনতে দেওয়া হয় না। বিএনপির চেয়ারপারসন বলেছেন, ফাতেমা ছাড়া এক কদম চলতে পারেন না। গৃহকর্মী ফাতেমা ১৫-২০ বছর ধরে বিএনপির চেয়ারপারসনকে সেবা দিচ্ছেন। এর মধ্যে আছে তাঁকে ওষুধপত্র দেওয়া, দুটি হাঁটুতে সার্জারি হওয়ায় চলাচলে সহায়তা করা ইত্যাদি। এ ধরনের সেবা তাঁকে অন্য কেউ দিতে পারবেন না। কিন্তু তাঁর গৃহকর্মী রাখার অনুমতি কারা কর্তৃপক্ষ দেয়নি।

এর আগে বেলা দুইটার দিকে বিএনপিপন্থী চার আইনজীবী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও তাঁকে ডিভিশন দেওয়ার জন্য একটি আবেদন নিয়ে কারাফটকে আসেন। তাঁরা পুলিশকে তা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। কর্তব্যরত পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার বজলুর রশীদ বলেন, এটা কারা প্রশাসনের ব্যাপার। এ কথা শোনার পর আইনজীবীরা তাঁদের আবেদন কারা অধিদপ্তরে জমা দিতে যান।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সহসম্পাদক পরিচয় দেওয়া কাওছার জাহান ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষক ফারিয়া আক্তার ফলের ডালি সাজিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের দেখা করার অনুমতি দেয়নি।