হারাচ্ছে হরেকরকম দেশীয় মাছ

হাওরে নেমে পলো দিয়ে মাছ শিকার চলছে। শুকনো মৌসুমে এসব এলাকায় এ উৎসব চলে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
হাওরে নেমে পলো দিয়ে মাছ শিকার চলছে। শুকনো মৌসুমে এসব এলাকায় এ উৎসব চলে। প্রথম আলো ফাইল ছবি

এক যুগ আগেও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নদী, বিভিন্ন খাল-বিল ও মজাপুকুরগুলোতে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। অথচ এখন খুব সামান্যই পাওয়া যায় সেসব মাছ।

রায়গঞ্জ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এক যুগ আগেও এ অঞ্চলে প্রায় ৭০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে ৫৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।

উপজেলার ধানগড়া, ব্রহ্মগাছা, পাঙ্গাসী, ঘুড়কা ও নলকা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ১০ জন মৎস্যজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ফুলজোড় ও ইছামতী নদীসহ বিভিন্ন খাল-বিল ও পুকুরে এখন আর আগের মতো দেশীয় জাতের মাছ পাওয়া যায় না।

বর্তমানে এ অঞ্চলে ‘মহাবিপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে টাটকিনি, ঘারুয়া, বাগাড়, রিঠা, পাঙাশ, চিতল, মহাশোল ও সরপুঁটি মাছ। ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে বাচা, ছেপ চেলা, ঢেলা, বাঁশপাতা, নাপতে কই, রায়েক, ফলি, গুজি ও আইড় মাছ। ‘বিপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে গোলসা, দাড়কিনা, পাবদা, বড় বাইম, গজার, তিতপুঁটি, নামা চান্দা, কালিবাউস, তিলা শোল, খলিশা, মেনি, রায়েক ও মাগুর মাছ।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার প্রধান বাজারে সম্প্রতি দেড় কেজি ওজনের টাকি মাছ ধরা পড়ে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার প্রধান বাজারে সম্প্রতি দেড় কেজি ওজনের টাকি মাছ ধরা পড়ে। প্রথম আলো ফাইল ছবি

উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের নলছিয়া জিয়ানিপাড়ার আবদুল কুদ্দুস, আবদুল মান্নান ও আকবর আলী জানান, বংশানুক্রমে মাছ ধরা ও বিক্রি পেশার সঙ্গে যুক্ত তাঁরা। এক যুগ আগেও উপজেলার দুটি নদী ও বিভিন্ন খাল-বিল থেকে যেসব মাছ ধরতেন এখন তার কিছুই নেই। বেশির ভাগ দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে তাঁরা জানান।

জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে কয়ড়া বিল, জুগিদহ, হাসিলদহ, বুড়িবিলসহ বেশ কিছু খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয় রয়েছে। এসব উৎস থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ আহরণ করা হয়। বছর দশেক আগেও মাছের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ মিলত এসব জলাশয়ে। কিন্তু এসব মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

আগের মতো নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি না থাকা, ‘পাইল ফিশিং’ (দুই-তিন বছর নির্দিষ্ট স্থানে মাছ না ধরা ) না হওয়া এবং নদী ও খাল-বিলে নতুন পানি আসার সময় সূক্ষ্ম জাল দিয়ে অবাধে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরার কারণে দেশি প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কিছুদিন পর দেশি প্রজাতির আরও অনেক মাছ হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে উপজেলা মৎস্য কার্যালয়।

তাজা তাজা মাছ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
তাজা তাজা মাছ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

এ বিষয়ে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, দেশি মাছের উৎপাদন ও বিলুপ্তি ঠেকাতে উপজেলার জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মা মাছের নির্বিঘ্নে বড় হওয়া ও প্রজননের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এ জন্য প্রতিটি উন্মুক্ত জলাশয়, খাল-বিল ও নদীতে অভয়াশ্রম তৈরি করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান। এক কথায় দেশি মাছের প্রজনন ও নিরাপদ বিচরণস্থল নির্মাণ না করতে পারলে কোনোভাবেই এসব মাছের বিলুপ্তি রোধ করা যাবে না বলে তিনি জানান।

এসব মাছ রক্ষায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? জানতে চাইলে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) ইকবাল আখতার বলেন, দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যশোরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লিতে মাছের রেণু (এক দিন বয়সী) ও পোনা (ছোট মাছ)। প্রথম আলো ফাইল ছবি
যশোরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লিতে মাছের রেণু (এক দিন বয়সী) ও পোনা (ছোট মাছ)। প্রথম আলো ফাইল ছবি