৯ জেলায় বজ্রপাতে ২০ জনের মৃত্যু

বজ্রপাত। ছবি: এএফপি
বজ্রপাত। ছবি: এএফপি

বজ্রপাতে আজ বুধবার শুধু হবিগঞ্জেই ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া আরও আট জেলায় প্রাণ গেছে ১৪ জনের। সিলেট, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, গাইবান্ধা, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, নরসিংদী ও সুনামগঞ্জে এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বুধবারসহ নয় দিনে অন্তত ১০৬ জন প্রাণ হারালেন।

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :

হবিগঞ্জে ছয়জনের মৃত্যু
হবিগঞ্জে বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি হাওরে প্রতিদিনের মতো ধান কাটতে যান স্বপন দাস। বেলা ১১টার দিকে হাওরে বজ্রপাতে তিনি প্রাণ হারান। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলায়। একই সময়ে বানিয়াচংয়ের মাইচ্ছার বলি হাওরে বজ্রপাতে মারা যান শ্রমিক জয়নাল মিয়া। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া হাওরে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন কৃষক চকি মিয়া। তাঁকে হবিগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলার বৈলাকিপুর হাওরে বজ্রপাতের ঘটনায় প্রাণ হারান নারায়ণ পাল ও আবু তালিব নামের দুই শ্রমিক। এ ছাড়া একই সময়ে জেলার মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম হাওরে বজ্রপাতে ধানকাটা শ্রমিক জহর লাল সরকারের মৃত্যু হয়।

সিলেট : সিলেটে পৃথক বজ্রপাতে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা ও বেলা তিনটার দিকে সিলেট শহরতলির জাঙ্গাইল ও গোয়াইনঘাট উপজেলার কামার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত দুজন হলেন সুনামগঞ্জ দোয়ারাবাজারের নুরপুর গ্রামের এখলাস উদ্দিনের ছেলে তাজুদ আলী (২০) ও কোম্পানীগঞ্জের মোরারগাঁও গ্রামের চন্ডু মিয়ার ছেলে নূরুল হক (৩০)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থেকে বালুবাহী ট্রাকে করে সিলেটের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তাজুদ আলী। পথে বৃষ্টি ও ঝড়ের কবলে পড়ে বালুবাহী ট্রাকটি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে তাজুদ আলী মারা যান।

বুধবার বেলা তিনটার দিকে গোয়াইনঘাটে কামার গ্রামে মামাবাড়ি যাওয়ার পথে বজ্রপাতের শিকার হন নূরুল হক। তিনি কোম্পানীগঞ্জ থেকে গোয়াইনঘাটে রুস্তমপুর গ্রামে মামার বাড়ি যাচ্ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম ও গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খালেদুর রহমান।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ও পাকুন্দিয়ায় পৃথক বজ্রপাতে দুজন মারা গেছেন। আজ বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন মো. শাহজালাল মিয়া (২৫) ও দীপালি রাণী বর্মণ। শাহজালাল নিকলীর ছাতিরচর গ্রামের মাইন উদ্দিনের ছেলে। দীপালি পাকুন্দিয়া উপজেলার আশুতিয়া পাড়ার সুধীর চন্দ্র বর্মণের স্ত্রী।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শাহজালাল ছাতিচর হাওর থেকে বেলা একটার দিকে ধানবোঝাই ট্রাক্টর নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

অপর দিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির রান্নাঘরে রান্না করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান দীপালি।

ঘটনা নিশ্চিত করেছেন নিকলীর ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন ও পাকুন্দিয়ার সুকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল হামিদ।

জামালপুর : জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের মৌলভীর চর গ্রামে বুধবার সকালে বজ্রপাতে মারা যান হাবিবুর রহমান (৫৬)। বেলা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ধানখেতে কাজ করতে যান হাবিবুর। এ সময় বজ্রপাত হলে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের পশ্চিম ছালুয়া গ্রামের চরে ধান কাটতে গিয়ে বুধবার মহর আলী (৩৫) বজ্রপাতে মারা গেছেন। মহর আলী একই উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের চর কাবিলপুর গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে।

উদাখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, বুধবার বারজন কৃষিশ্রমিক ওই চরে আবদুর রউফ মিয়ার জমির বোরো ধান কাটছিলেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে তাঁরা কাজ ফেলে নিরাপদ স্থানের সন্ধানে দৌড় দেন। তাঁদের মধ্যে মহর আলী দৌড়াতে গিয়ে উল্টে পরে যান। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত ঘটলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান।

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় বুধবার বজ্রপাতে এক শিশুশিক্ষার্থীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আটজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বজ্রপাতে মারা গেছেন দৌলতপুরের বাচামারা ইউনিয়নের হাসাদিয়া গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী শেখ (৪৮) এবং কলিয়া ইউনিয়নের তালুকনগর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে অন্তর (১২)।

আহত শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, বেলা দেড়টার দিকে তালুকনগর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাওয়ার জন্য টিফিন দেওয়া হয়। এ সময় বৃষ্টি না হলেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। বেলা পৌনে দুইটার দিকে বিদ্যালয়টি মাঠের এক পাশে দোকান থেকে চানাচুর ও বিস্কুট কিনে খাচ্ছিল শিশুরা। এ সময় বজ্রপাত হলে ১২ শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় সাইফুল ইসলামে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, নিহত ছাত্রকে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি নিয়ে গেছেন। আহত ১০ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী : রাজশাহীতে বজ্রপাতে কলেজছাত্রসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে জেলার তানোর উপজেলার দুবইল ও বাতাসপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও দুই কৃষক আহত হয়েছেন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

মৃত দুই ব্যক্তি হলেন বাতাসপুর গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে আনসার আলী (৪০) ও দুবইল নামোপাড়া গ্রামের মো. শামসুদ্দিনের ছেলে সোহাগ আলী (১৮)।
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম জানান, সকালে বাতাসপুর গ্রামের মাঠে কয়েকজন মিলে ধান কাটছিলেন। এ সময় বজ্রপাত হলে কৃষক আনসার আলীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আর আহত হন আনন্দ সাহা ও লিটন সাহা। পরে তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অপর দিকে একই সময় দুবইল মাঠে জমিতে সেচ দিতে গিয়েছিলেন কলেজছাত্র সোহাগ আলী। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এঁরা হলেন জেলার শাল্লা উপজেলার আলমগীর মিয়া (২২) ও ধরমপাশা উপজেলার জুয়েল মিয়া (১৮)। আহত হয়েছেন আরও একজন। এ নিয়ে গত ১১ দিনে সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হলো।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাল্লা উপজেলার কালিয়াগুটা হাওরে ধান কাটছিলেন উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের আলমগীর মিয়া। বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

একইভাবে হাওরে কাজ করার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন ধরমপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্বাকান্দা গ্রামের জুয়েল মিয়া। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে বেলা একটার দিকে তিনি মারা যান। জুয়েলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধরমপাশা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম আহমদ।

নরসিংদী : নরসিংদীতে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে নরসিংদীর মাধবদী ও মনোহরদীতে এ ঘটনা ঘটে।

একতলা বাড়ির ছাদে ধান শুকাতে গিয়ে মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫) নামের এক কৃষক বজ্রপাতে মারা গেছেন। তিনি মাধবদীর নূরালাপুর ইউনিয়নের বলভদ্রদী গ্রামের শাহেদ আলীর ছেলে। অন্যদিকে মনোহরদীতে বাড়ির উঠোনে কাজ করার সময় বজ্রপাতে পিয়ারা বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূ মারা গেছেন। তিনি উপজেলার বড়চাপা ইউনিয়নের চরতারাকান্দী গ্রামের কাজল মিয়ার স্ত্রী।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস এবং মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফকরুদ্দীন ভূইয়া।