বিবিসির অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকায় সেই হৃদয়ের মা

হৃদয় সরকার ছোটবেলা থেকে হাঁটতে পারেন না৷ ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার দিন মায়ের কোলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসেন তিনি। ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া
হৃদয় সরকার ছোটবেলা থেকে হাঁটতে পারেন না৷ ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার দিন মায়ের কোলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসেন তিনি। ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া

বিবিসির করা বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন সীমা সরকার। তাঁর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হৃদয় সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মায়ের কোলে উঠে ভর্তি পরীক্ষা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান হৃদয়।

বিবিসির তালিকায় ৮১তম স্থানে রয়েছেন সীমা সরকার। বিশ্বের ৬০টি দেশের ১৫ থেকে ৯৪ বছর বয়সী বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীদের নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনে ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

ওই তালিকায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মেয়ে চেলসি ক্লিনটন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড (৩৬) ও পাকিস্তানের প্রথম হিন্দু নারী সিনেটর কৃষ্ণকুমারীর (৪৮) মতো নারীরা। চেলসি ২০, গিলার্ড ৩৬ ও কৃষ্ণকুমারী ৪৮তম অবস্থানে আছেন। এই তালিকায় সবার ওপরে স্থান পেয়েছেন নাইজেরিয়ার সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা উদ্যোক্তা ৩৩ বছর বয়সী আবিসোয়ে আজেয়ি আকিনফোলারিন। তাঁর পরে আছেন যথাক্রমে বাহরাইনের এসরা আল সাফেই ও রাশিয়ার এসভেতলানা আলেকসিভা। এসরা আল সাফেই অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। আর রুশ এসভেতলানা আলেকসিভা একজন মডেল।

বাংলাদেশি সীমা সরকার গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দিন ছেলে হৃদয়কে কোলে করে নিয়ে যান পরীক্ষার হলে। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ভর্তি পরীক্ষায় হৃদয় সরকার বাংলা অংশে ৯ দশমিক ৩০, ইংরেজি অংশে ১৪ দশমিক ৪০ ও সাধারণ জ্ঞান অংশে ২৭ দশমিক ৯০ নম্বরসহ মোট ১২০ দশমিক ৯৬ নম্বর পেয়ে ৩ হাজার ৭৪০তম হন ৷ প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তির আবেদন করেছিলেন হৃদয় ৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী কোটার বিধিমালা অনুযায়ী শুধু দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিবন্ধী কোটা প্রযোজ্য ছিল ৷ তাই হৃদয় সরকারের ভর্তি নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা ৷ এ নিয়ে ‘হৃদয়ের হাহাকার’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটার বিধিমালায় সংস্কার এনে শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরও যুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ তৈরি হয় হৃদয় সরকারের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুগের চাহিদা মেটানো ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য আমরা আমাদের প্রতিবন্ধী কোটার বিধিমালায় সংস্কার এনেছি ৷ আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু দৃষ্টি, শ্রবণ আর বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিবন্ধী কোটা প্রযোজ্য ছিল ৷ এর সঙ্গে আমরা শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরও যুক্ত করেছি, যাতে ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ছেলেমেয়েরা মেধার স্বাক্ষর রাখলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় ৷ অবস্থাদৃষ্টে বাস্তবতার নিরিখে এটি করা হয়েছে৷’