হৃদয়ের হাহাকার!

হৃদয় সরকার ছোট বেলা থেকে হাঁটতে পারে না৷ খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার দিন মায়ের কোলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসেন তিনি। ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া
হৃদয় সরকার ছোট বেলা থেকে হাঁটতে পারে না৷ খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার দিন মায়ের কোলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসেন তিনি। ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন প্রতিবন্ধী হৃদয় সরকার। তাঁর সিরিয়াল নম্বর ৩ হাজার ৭৪০। কিন্তু ‘খ’ ইউনিটে মোট আসন ২ হাজার ৩৮৩।

নেত্রকোনার ছেলে হৃদয়ের স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। প্রতিবন্ধী কোটায় আবেদন করেছিলেন তিনি। এই কোটায় আসনও ফাঁকা ছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে প্রতিবন্ধী কোটায় শুধু দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী হলেই কোটা প্রযোজ্য হবে ৷ অন্য কোনো ধরনের প্রতিবন্ধীরা কোটায় ভর্তি হতে পারবেন না ৷

হৃদয় ছোটবেলা থেকেই হাঁটতে পারেন না। মায়ের কোলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা হৃদয়ের ওই দিনের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

গত ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে হৃদয় সরকার বাংলা অংশে ৯ দশমিক ৩০, ইংরেজি অংশে ১৪ দশমিক ৪০ ও সাধারণ জ্ঞান অংশে ২৮ দশমিক ৯০ নম্বরসহ মোট ১২০ দশমিক ৯০ নম্বর পেয়ে ৩ হাজার ৭৪০তম হন ৷ প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তির আবেদন করেছিলেন হৃদয় ৷ সমাজসেবা অধিদপ্তর হৃদয় সরকারকে প্রতিবন্ধী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে ৷

হৃদয় সরকার প্রথম আলোকে বলেন, 'আমি ও আমার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কলা অনুষদের ডিন স্যারের কাছে গিয়েছিলাম ৷ তাঁরা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু দৃষ্টি, শ্রবণ আর বাকপ্রতিবন্ধীদের কোটা সুবিধা দেওয়া হয় ৷ অন্য কোনো ধরনের প্রতিবন্ধীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটায় ভর্তির ব্যবস্থা নেই৷'

‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দিন সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হৃদয় সরকার ও তাঁর মায়ের একটি ছবি ব্যাপক সাড়া ফলে ৷ ওই ছবিতে দেখা যায়, হৃদয় সরকারকে কোলে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল থেকে পরীক্ষার হলে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর মা ৷

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ও ‘খ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা অমানবিক নই ৷ প্রতিবন্ধী পরিচয় ব্যবহার করে অনেকে অনৈতিক সুবিধা নেয় ৷ আমাদের বিধিতে দৃষ্টি, শ্রবণ আর বাকপ্রতিবন্ধীদের কোটা সুবিধা দেওয়ার কথা বলা আছে ৷’

‘খ’ ইউনিটের এবারের পরীক্ষায় ৩৩ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন ৷ তাঁদের মধ্যে ৪ হাজার ৭৪৭ জন ন্যূনতম পাস নম্বর পান ৷