বিটি বেগুনে পোকার আক্রমণ বন্ধ হয়নি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) থেকে বিটি বেগুনের চারটি জাত ছাড় করার সময় বলা হয়েছিল এটি ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধী জিন সমৃদ্ধ। এই বেগুন চাষ করলে ওই দুইটি পোকার আক্রমণ হবে না। এতে কীটনাশকের ব্যবহারে সাশ্রয় হবে। কিন্তু খাদ্য নীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) গবেষণায় দেখা গেছে, দেশি অন্য জাতের বেগুনের তুলনায় ওই দুই পোকার আক্রমণ ৯০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু এখনো ১০ শতাংশ বেগুনে পোকার আক্রমণ হচ্ছে। একই ভাবে ৪৭ শতাংশ বেগুন গাছের পাতা ভক্ষণকারী পোকা, প্রায় ৫০ শতাংশে সাদা ফড়িং জাতীয় পোকা ও প্রায় ৩৬ শতাংশে পাতা পোকার আক্রমণ বন্ধ হয়নি। তবে সামগ্রিকভাবে পোকার আক্রমণ কিছুটা কমেছে।

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিটি বেগুনের ওপরে করা ওই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন ইফপ্রি, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আখতার আহমেদ। ওই কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ দেশের বিশিষ্ট কৃষি গবেষক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যের উৎপাদন জরুরি। হালনাগাদ কৃষি নীতিতে জৈবপ্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষিতে নারীর ক্ষমতায়নেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আধুনিক জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকার জিএমওসহ কৃষি রূপান্তর, হাইব্রিড জাত নিয়ে এসেছে।

‘বাংলাদেশে কৃষির রূপান্তর: জৈবপ্রযুক্তি ও পুষ্টিকর কৃষি’ থেকে পাওয়া প্রমাণ শীর্ষক ওই কর্মশালায় কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে উদ্ভাবিত বিটি বেগুন কৃষক-ভোক্তা সবাই গ্রহণ করেছে। এর উৎপাদন ভালো এবং বেশ লাভজনক। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাত নিয়ে বিরোধিতা করছে। তারা কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কথা বলছে। এসব ফসলে কোনো ক্ষতিকর কিছু নেই। আমাদের কৃষকেরা এসব উন্নত জাতের স্বত্ব হারাবে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তাও ঠিক নয়।’

কর্মশালায় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর বলেন, ‘ভারত ও ফিলিপাইনে বিটি বেগুন চাষে সফলতা পাওয়া যায়নি। কিন্তু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। কিন্তু আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, ভোক্তারা যেন সচেতনভাবে এই বেগুন কিনতে পারে। এ জন্য এর গায়ে লেবেল থাকার কথা। এই বেগুন চাষের সময় জমির চারপাশে অন্য ফসলের গাছ থাকতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি থেকে এটি সঠিকভাবে অনুমোদন পেল কিনা, তাও দেখা উচিত। বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য রক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কার্টেহানা প্রটোকলে সাক্ষর করেছে। এই বেগুন চাষের ক্ষেত্রে ওই চুক্তির ধারাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক জনাব ড. মো. আবুল কালাম আযাদ, ইউএসএআইডি-এর ভারপ্রাপ্ত মিশন ডিরেক্টর জিনাহ সালাহী প্রমুখ।