ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে হাইকোর্টের ক্ষোভ

ধুলায় আচ্ছন্ন ঢাকার বাতাস। তৈরি হচ্ছে মানুষের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য জটিলতা। ফাইল ছবি
ধুলায় আচ্ছন্ন ঢাকার বাতাস। তৈরি হচ্ছে মানুষের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য জটিলতা। ফাইল ছবি

ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জানাতে আগামী ১০ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) তলব করেছেন আদালত।

বায়ুদূষণ নিয়ে দায়ের করা এক রিটের শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করে এবং দূষণ রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজিকে নির্দেশও দেন আদালত। আদালত বলেন, ‘বায়ুদূষণ রোধে নেওয়া পদক্ষেপ আমাদের হতাশ করেছে। আমরা ক্ষুব্ধ।’

রিটের শুনানিতে আদালত আরও বলেন, ‘মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ যেসব এলাকায় চলছে, সেসব এলাকায় প্রচুর ধুলাবালি পরিবেশকে দূষিত করছে। আমাদের মেট্রোরেল প্রয়োজন। কিন্তু একই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধও জরুরি। আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে হলে এসব (বায়ুদূষণ) বন্ধ করতে হবে।’

ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করা হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

বিশ্বে সবচেয়ে বায়ুদূষণের কবলে থাকা শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শহরের অবস্থান ১৭তম। আর রাজধানী শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এই শহরের বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তু কণিকার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়ালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘বিশ্ব বাতাসের মান প্রতিবেদন ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে থাকা শহরগুলোর তালিকাটি এয়ারভিজ্যুয়ালের ওয়েবসাইটে ৫ মার্চ প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের ৭৩টি দেশের বায়ুর মানের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার আয়তনে বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তু কণিকার পরিমাণ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

ক্ষুদ্র বস্তু কণিকার আকার ২ দশমিক ৫ মাইক্রন বা মাইক্রোমিটার। মানুষের চুলের সঙ্গে তুলনা করলেই এই আকার সম্পর্কে সহজে ধারণা পাওয়া যায়। চুলের ব্যাস গড়ে ৬০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। অর্থাৎ একটি চুলকে চিরে ২৪ ভাগ করলে যে ব্যাস পাওয়া যাবে, ক্ষুদ্র কণিকার আকার তার সমান। অত্যন্ত ক্ষুদ্র হওয়ায় এসব কণিকা খুব সহজেই মানুষের শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে পুরো শরীরে ছড়িয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি করে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাতাসে ক্ষুদ্র কণিকার গড় মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম বেঁধে দিয়েছে। অথচ ঢাকার বাতাসে এই কণিকার মাত্রা ২০১৮ সালে ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৭ সালে এই মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৯ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ ওই বছরের তুলনায় গত বছর ঢাকার বাতাস আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।