বালু নদের তীরে উচ্ছেদ হলো ৫৫ স্থাপনা

বালু নদের তীরে বহুতল ভবনে উচ্ছেদ অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএ। গতকাল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইছাপাড়া এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
বালু নদের তীরে বহুতল ভবনে উচ্ছেদ অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএ। গতকাল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইছাপাড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

বালু নদের তীরে অভিযান চালিয়ে গতকাল সোমবার ছোট-বড় ৫৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ সময় নদী ভরাটের অভিযোগে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে এক একর জমি। চলমান অভিযানের ৩৫তম দিন ছিল গতকাল।

রাজধানীর উত্তরখান থানার মাউছাইদ এলাকা থেকে খিলক্ষেত থানার ইছাপুরা বাজার পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি না নিয়ে নির্মাণকাজ করার কারণে ইছাপুরা এলাকায় একটি সরকারি সেতুর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সকাল সাড়ে ৯টায় উত্তরখান থানার তেরমুখ এলাকায় তিনটি বালু ও পাথরের গদি অপসারণ করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ সময় বালু ও পাথরের গদি নিলাম ডেকে বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সেখান থেকে মহর হোসেন দেওয়ান নামের এক ব্যক্তিকে নদী ভরাটের অভিযোগে আটক করা হয়। অবশ্য দুই ঘণ্টা পর ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তেরমুখ সেতু অতিক্রম করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার তালিয়া ও খিলক্ষেত থানার কড়াইতলী এলাকায় কয়েকটি জমি দখল করে তৈরি করা সীমানাদেয়াল ও বহুতল ভবন উচ্ছেদ করা হয়।

 বেলা ২টার দিকে খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকায় নির্মিত এনডিই নামে একটি রেডিমিক্স কংক্রিট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে অভিযান শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটি নদী ভরাট করায় খালেদুল ইসলাম নামের তাদের এক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। পরে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ইছাপুরা এলাকায় গিয়ে কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, ইছাপুরা এলাকায় গত বছরও অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে দখলদারেরা আবারও সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। গতকালের অভিযানে বালু নদের দুই তীরে অবৈধ স্থাপনা ছিল কম। নদ ভরাট ছিল বেশি।

বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, গতকালের অভিযানে দুটি তিনতলা, তিনটি দোতলা, ছয়টি একতলা ও তিনটি আধা পাকা ভবন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১২টি সীমানাদেয়াল ও ২৯টি টিনের ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও একটি সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ

গতকালের অভিযানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নির্মাণাধীন একটি সেতুর কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। বিকেল চারটার দিকে ইছাপুরা বাজার এলাকায় ওই সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে তুরাগতীরে গাজীপুরের টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি ও কামারপাড়া এলাকায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন একটি সেতুর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিআইডব্লিউটিএ বলছে, নদ-নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করতে হলে বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এদের কেউ অনুমতি নেয়নি।

গতকাল বিকেলে ইছাপুরা এলাকায় সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিনিধি বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন, তাঁরা নিয়ম মেনেই সেতু নির্মাণ করছেন। তখন ওই ব্যক্তির কাছে বিআইডব্লিউটিএর অনাপত্তিপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। পরে ওই ব্যক্তিকে আজ সকাল ৯টায় সেতু নির্মাণে বিআইডব্লিউটিএ থেকে নেওয়া অনুমতিপত্র দেখানোর নির্দেশ দেয় বিআইডব্লিউটিএ।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাঝেমধ্যে প্রতিবন্ধকতা আসছে, তবু আমরা শতভাগ অঙ্গীকারবদ্ধ এই কাজটিকে আমরা সুচারু ও সুন্দরভাবে শেষ করব।’ তিনি বলেন, অভিযান শেষ হলে ঢাকার চারপাশে নদ–নদীর তীরে হাঁটাপথ নির্মাণ করা হবে। নদ-নদীর সুরক্ষার জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ আছে, সব নেওয়া হয়েছে।