ফণীর প্রভাবে বাগেরহাটে বৃষ্টি, বাঁধ উপচে গ্রাম প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে শুক্রবার দুপুর থেকে বাগেরহাটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। থেমে থেমে দমকা বাতাসে আতঙ্ক বাড়ছে উপকূলে। নদ-নদীতে জোয়ারের পানির চাপ বেড়েছে। জেলার শরণখোলা উপজেলায় আগে থেকে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশে বলেশ্বর নদ উপচে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ঝড়ের আগেই এমন পরিস্থিতি সিডর ও আইলায় বিধ্বস্ত এই জনপদে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, সাতঘর ও দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের শতাধিক পরিবার এরই মধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

শরণখোলা উপজেলায় আগে থেকে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে পানি ঢুকে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
শরণখোলা উপজেলায় আগে থেকে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে পানি ঢুকে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

ওই এলাকার বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁধ নিয়ে সব সময় ভয়ে থাকি। সিডর ও আইলার পর সবাই বলছে বাঁধটা ঠিক করে দেবে। প্রতিবছর এখানে ভাঙে, সরকার কিছুই করে না। এখন কী হবে, আল্লাহ জানে। আমরা তো আশ্রয়কেন্দ্রে যাব। কিন্তু ঘরবাড়ি, সম্পদ কীভাবে রক্ষা হবে।’

শরণখোলার স্থানীয় সংবাদকর্মী নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে মেঘ ঘন হওয়ার পর বাতাসের বেগ হালকা বেড়েছে। লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় এরই মধ্যে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, বলেশ্বর নদের বগী এলাকার বেড়িবাঁধের একটি অংশ উপচে গ্রামের বসতবাড়িতে ঢুকে পড়েছে। এতে বেশ কিছু ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।

শরণখোলার তিনটি গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ছবি: প্রথম আলো।
শরণখোলার তিনটি গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ছবি: প্রথম আলো।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপকূলীয় বাগেরহাটের কিছু এলাকায় সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাগেরহাটের মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে সুন্দরবন–সংলগ্ন শরণখোলা ও রামপাল উপজেলার নদী–তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। এসব এলাকায় প্রায় ৬ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শরণখোলা ও মোংলা উপজেলাতে ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী উপকূলবর্তী বাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলা, রামপাল এবং মোরেলগঞ্জে আঘাত হানার আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন। তাই এসব এলাকার বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট ও রোভার স্কাউটের প্রায় দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন। এ কাজে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি সহযোগিতা করবে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পশুর, মোংলা, বলেশ্বর, ভৈরব ও পানগুছিতে পানির চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পানি আরও বাড়তে পারে। জোয়ারের পানির চাপে শরণখোলা বাঁধের একটি নিচু অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানলে সুন্দরবন–সংলগ্ন চারটি উপজেলায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তাই এসব উপজেলার জানমালের ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রশাসন কাজ করছে। এসব এলাকায় প্রায় চার শ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শরণখোলা ও রামপাল উপজেলার নদী–তীরবর্তী এলাকার কিছু বাসিন্দাকে সরিয়ে আনার কাজ আমরা শুরু করেছি। শরণখোলা ও মোংলা উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’