হঠাৎ আসতে পারে বন্যা

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিলেও এর প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ধানভান্ডার হিসেবে পরিচিত হাওরসহ এসব এলাকার মাঠের পাকা ধান।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশ অতিক্রম করে ফণী ভারতের হিমালয় পাদদেশের রাজ্য মেঘালয় ও আসামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে ঝড়টির বাতাসের গতি কমে গিয়ে দুর্বল হলেও এর সঙ্গে থাকা বিপুল জলীয় বাষ্প বিশাল মেঘমালা সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উজানে ভারতের ওই দুই রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ২৭৬ মিলিমিটার ও শিলংয়ে ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব এলাকার উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামের ওই ভারী বৃষ্টিপাতকে আমলে নিয়ে আকস্মিক বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে সিলেট বিভাগের সুরমা-কুশিয়ারা, কংস, যাদুকাটা ও উত্তরাঞ্চলের তিস্তার পানি আকস্মিক বেড়ে যেতে পারে। এতে ওই নদীগুলোর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে আকস্মিক বন্যা হতে পারে।

গতকাল রোববার সকাল নয়টা পর্যন্ত বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল কংস নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার, যাদুকাটা ৫৭ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন ২৮ সেন্টিমিটার ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে স্থাপন করা কেন্দ্রের ৩৯টি স্টেশনের মধ্যে ৩৩ টির পানি বেড়েছে।

এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বছরের এই সময়টাতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বেড়ে আকস্মিক বন্যা হয়ে থাকে। এবার ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বন্যার তীব্রতা বেশি হতে পারে। একই সঙ্গে তিস্তা নদীর উজানে ভারতীয় অংশে একই সময় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় সেখানেও এ ধরনের বন্যা হতে পারে। তবে এই বন্যার স্থায়িত্বকাল খুব বেশি হবে না।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর তীরবর্তী জেলাগুলো হচ্ছে দেশের শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা। আর তিস্তা অববাহিকার জেলাগুলো হচ্ছে দেশের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী এলাকা রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলা। এসব জেলার প্রধান ফসল বোরো ধানের বড় অংশ এখনো মাঠে রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের মধ্যেই হাওরের ৯৫ শতাংশ ধান কেটে ফেলা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় ধান কাটা চলছে। তবে এখনো ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ এলাকায় ধান মাঠে রয়ে গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ৮০ শতাংশ পেকে যাওয়া ধান দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই আমরা ধান-চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত আছি। আর ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।’ যেসব এলাকায় ধান বাতাস ও বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে, তা দ্রুত কেটে গোলায় এনে শুকানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এখন সারা দেশে বেশ ভালো রোদ উঠেছে। ফলে যেসব ধান ও অন্যান্য ফসল কাটা হয়নি, তাও দ্রুত কেটে ফেলতে হবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতকাল দুপুর নাগাদ সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বেশ কয়েকটি স্থানে পানি নদী উপচে হাওরে প্রবেশ করেছে। আসামে বেশি বৃষ্টি হওয়ায় সেখান থেকে নেমে আসা পানিতে ব্রহ্মপুত্র নদী ও মেঘনায় আজ ও আগামীকাল পানি বাড়তে পারে। অনেক স্থানে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জের দিকে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে এই পানি দু-তিন দিনের বেশি থাকবে না বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে হওয়া বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে সামনে কী ধরনের ঝুঁকি আছে, তা জানতে চাইলে সরকারের ট্রাস্টি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) উপনির্বাহী পরিচালক মমিনুল হক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, হাওর এলাকায় আকস্মিক বন্যার পানি দ্রুত চলে যাবে। তবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক স্থানে দুর্বল বেড়িবাঁধ আরও দুর্বল হয়ে গেছে। সেগুলো দ্রুত মেরামত না করলে যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচিত হবে বেড়িবাঁধগুলো মেরামতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া।