বন্যায় ৭ জেলায় বেশি ক্ষতি

বন্যার পানিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। ঢাকার আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। ঈদের দিনে কোরবানির মাংস নিয়ে কোমরপানি ভেঙে চলছেন দুজন। বিকেলে নবাবগঞ্জের দোহার উপজেলার মধুরচর ইউনিয়নে।  ছবি: হাসান রাজা
বন্যার পানিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। ঢাকার আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। ঈদের দিনে কোরবানির মাংস নিয়ে কোমরপানি ভেঙে চলছেন দুজন। বিকেলে নবাবগঞ্জের দোহার উপজেলার মধুরচর ইউনিয়নে। ছবি: হাসান রাজা

এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা বন্যায় কঠিন সমস্যার আবর্তে মানুষ। ঈদের ছুটির মধ্যে বন্যার পানি আরও বেড়েছে। মোট আক্রান্ত জেলা ৩৩টিতে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা এখন ৫৫ লাখ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় দৈনিক দুর্যোগ প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে।

তবে জাতিসংঘ থেকে বাংলাদেশের চলমান বন্যার ক্ষয়ক্ষতির ধরন, কারণ ও ক্ষতিপূরণের একটি রূপকল্প তৈরি করে সরকারকে দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যায় বাংলাদেশের সাতটি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, সুনামগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই সাতটি জেলা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বন্যার্ত মানুষকে ন্যূনতম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত লেগে যাবে। এই সময়ের মধ্যে এই জেলাগুলোর অধিবাসীদের বন্যায় ভেঙে পড়া অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, সেবা খাতগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ত্রাণসহায়তা চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলনে, এই বন্যা দেশের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। তবে বন্যাকবলিত এলাকায় ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো দ্রুত মেরামত করতে না পারলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও সাধারণ মানুষের ক্ষতি চলতে থাকবে। কারণ, বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়লে সেখানে আর কোনো স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় না। ফলে এ ধরনের ক্ষতি কমাতে হলে দ্রুত বাঁধ মেরামতের প্রস্তুতি নিতে হবে।

শুধু এই সাতটি জেলার বন্যার্তদের ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত সহায়তা দিতে মোট ৩৩০ কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে দরকার হবে বলে জাতিসংঘ থেকে হিসাব করা হয়েছে। এ জন্য জাতিসংঘ থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বানও জানানো হয়েছে। তবে এরই মধ্যে সরকারের পাশাপাশি জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত সংস্থাগুলো কিছু প্রাথমিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছে।

ঈদের দিন শনিবার সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় সুরেশ্বর দরবার শরিফের প্রতিরক্ষা বাঁধটি ধসে গেল। বাঁধের ৫৫ মিটার জায়গা পদ্মার তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে গেল নিমেষে। বাঁধটির আরও ৩০০ মিটার অংশ ভাঙনের মুখে পড়েছে। সে অংশ রক্ষায় নদীর তলদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মীরা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছেন।

শুধু শরীয়তপুর নয়, মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। পদ্মার তীব্র স্রোতে ঈদের দিন ভাঙন শুরু হয়। এক দিনেই ৫৭ মিটার এলাকা আড়িয়াল খাঁ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। আরও কিছু এলাকা ভাঙনের মুখে পড়েছে। পাউবো থেকে এরই মধ্যে দুই হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। আরও ছয় হাজার ব্যাগ ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করছে। তবে যমুনা ও পদ্মার পানি স্থিতিশীল আছে। এই দুই অববাহিকার তীরবর্তী জেলাগুলোতে বন্যার পানি কিছুটা নামার সময় নদীভাঙন তীব্রতর হবে। তবে উজানে ভারতীয় অংশে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে বন্যার পানি আরেক দফা বাড়তে পারে। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে বন্যার পানি দেশের বেশির ভাগ এলাকা থেকে নেমে যেতে পারে।

পানি নামার ওই সময়টাতে ভাঙন আরও তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, পদ্মা অববাহিকায় এবার ভাঙন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি হতে পারে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব আগস্টের শেষ সপ্তাহে গিয়ে বোঝা যাবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা বন্যার পানি চার দফা বেড়েছে ও কমেছে। এতে ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মা–তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে।