গোলমরিচের কথা

খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে তরকারির স্বাদ পাল্টে দেওয়া মসলা গোলমরিচ l ছবি: লেখক
খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে তরকারির স্বাদ পাল্টে দেওয়া মসলা গোলমরিচ l ছবি: লেখক

ঝাল, মসলাদার ও লোভনীয় কিছু রান্নায় গোলমরিচ দেবেন না, তা কি হয়? ছোট্ট কালো গোল এই মসলাটি দিলে তরকারির স্বাদ যে পাল্টে যায়, তা ভোজনরসিকেরা জানেন। একরত্তি অথচ প্রবল তেজি এই মসলাটি নিজের গুণেই রন্ধনশালায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। 
এমন গুরুত্বপূর্ণ ও উপাদেয় এই মসলার চাষ আমাদের দেশে হয় না। কিন্তু কোথাও কোথাও এই মসলার দু-একটি গাছের খবর মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে পূর্বদিকে আড়াই কিলোমিটারের পথ। রাস্তার বাঁ দিকে ২৫-৩০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের চূড়ায় পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কার্যালয়। সেই কেন্দ্রের গেস্ট হাউস ভবন সড়কের ডান পাশ দিয়ে যেতে একটি লতাজাতীয় গাছে চোখ আটকে গেল। গাছটি ২০-২৫ ফুট উঁচু একটি মান্দার গাছের শরীর পেঁচিয়ে কিছুটা ওপরে উঠে গেছে। আর তাতে থোকায় থোকায় সবুজ রঙের ছোট ছোট অজস্র ফল ধরে আছে। জানা গেল, এটি গোলমরিচের গাছ। আর ফলগুলো হলো গোলমরিচ।
কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুর রউফ জানালেন, ১৪ বছর আগে এই গাছটি লাগানো হয়। তিন বছর পর থেকে প্রতিবার ফল এসেছে গাছটিতে। মসলাজাতীয় অর্থকরী ফসল এই গোলমরিচের গাছ পরাশ্রয়ী। অর্থাৎ এর বেড়ে ওঠার জন্য মান্দার ছাড়াও আম, সুপারি, কাঁঠাল, তেঁতুল, নারিকেল ইত্যাদি গাছের সহায়তা বা আশ্রয় প্রয়োজন হয়। piperaceae পরিবারভুক্ত গোলমরিচের বৈজ্ঞানিক নাম piper nigram। ইংরেজি নাম black pepper। গোলমরিচ এ দেশে বাণিজ্যিকভাবে কোথাও উৎপাদন হয় না। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে গোলমরিচের মাত্র দুটি গাছ আছে। সিলেটে আছে একটি। আর বগুড়ায় কয়েকটি। ১৪ বছর আগে সিলেট থেকে একটি চারা এনে পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রে রোপণ করা হয়। সেই চারাটিই এখন নিয়মিত ফল দিচ্ছে।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা জানান, চারা রোপণের তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল ধরা শুরু করে। একটি পূর্ণ গাছ ২০ বছর পর্যন্ত ভালো ফলন দেয়। ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা গুচ্ছে খুব ছোট হলুদ ফুল ফোটে। সেই ফুল পরে ফলে রূপান্তরিত হয়। ডিসেম্বরের শেষ ভাগে দু-একটি ফল লাল রঙের হলেই সম্পূর্ণ গুচ্ছটি কেটে নিতে হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছে প্রতিবার চার থেকে পাঁচ কেজি গোলমরিচ ফলন দেয়। প্রক্রিয়াজাতকরণ ও শুকানোর পর তা গড়ে দাঁড়ায় দেড় কেজিতে।
গাছ থেকে সংগ্রহের পর ফলগুলো গুচ্ছ থেকে আলাদা করে একটি পাত্রে জমা করতে হবে। তারপর দানাগুলো ফুটন্ত পানিতে ১০ মিনিট সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে ফুলগুলো রোদে শুকাতে হবে। যে পানিতে দানাগুলো সিদ্ধ করা হয়েছে, সেই পানি কিছুক্ষণ পর দানাগুলোর ওপর ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে শুকনা গোলমরিচের রং সুন্দর হয়, সুগন্ধ ও ঝাল অটুট থাকে। এভাবে ছয় থেকে সাত দিন ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করা যায়।
খাগড়াছড়ি খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের সহকারী উদ্যানতত্ত্ববিদ ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনো বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষ শুরু হয়নি। বিদেশ থেকে আমদানি করে এর চাহিদা পূরণ করা হয়। এটি চাষের জন্য বিশেষ কোনো মাটি বা স্থান প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির পাহাড় গোলমরিচ চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। বসতবাড়ির উৎপাদশীল বনজ গাছে এটি চাষ করা যায়। এটি চাষের ব্যাপারে মানুষকে আগ্রহী করে তোলার এখনই সময়।