'রোয়ানু'র প্রভাবে চার জেলায় ব্যাপক ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে l প্রথম আলো
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে l প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ও এর প্রভাবে বৃষ্টিতে ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে মাঠের পর মাঠের উঠতি ফসল। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি।
গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত এসব ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে। প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রতিনিধিরা।
ভোলা: জেলার সাত উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ২০টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি। ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে আট শতাধিক ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার, চারটি পাথর-বালু বহন করা জাহাজ নিখোঁজ রয়েছে।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, হাজিপুর ও সৈয়দপুর ইউনিয়নে, চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, কুকরিমুকরি, তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা, সোনাপুর, মনপুরা উপজেলার কলাতলি, চরফৈজুদ্দিন, চরনিজামসহ অর্ধশতাধিক চরে ৩-৪ হাত পানি উঠেছে। এ ছাড়া ভোলা শহরের বিভিন্ন এলাকায়ও ২-৩ হাত পানি উঠেছে। এসব এলাকায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি উঠতি ফসল তলিয়ে গেছে। জেলার তজুমদ্দিন উপজেলায় বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০০ ঘরবাড়ি। উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশীগঞ্জ বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কয়েক কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। দৌলতখান উপজেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাটামারা এলাকায় একটি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক সেলিম উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভোলায় বৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হচ্ছে। আশ্রিত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ৫৫ টন চাল ও ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে।
পিরোজপুর ও ঝালকাঠি: পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর এসেছে।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সেখ জানান, মঠবাড়িয়া উপজেলায় তিন থেকে চারটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিল থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পিরোজপুর সদরের বাদুরা গ্রামের মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আকন জানান, সমিতির সদস্য মনির গাজীর ‘এমভি রিপা’ নামের একটি ট্রলার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১৩ জন মাঝিমাল্লাসহ নিখোঁজ রয়েছে।
ঝালকাঠি জেলায় ঝড়ে গাছপালা ও কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার চার উপজেলায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রয়েছে। কাঁঠালিয়া উপজেলার রগুয়ার চর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আশপাশের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার, ৪৫ মেট্রিক টন চাল এবং ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাউফল (পটুয়াখালী): বাউফল উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১৩৪টি কাঁচা-পাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বিস্তর ফসলের খেত। ভেসে গেছে এক হাজারের বেশি পুকুরের মাছ। তেঁতুলিয়া নদীতে মমিনপুর, তালতলি ও বগী এলাকায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়ক কাম বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। ভেঙে বা উপড়ে পড়েছে হাজারো গাছ।
উপজেলার নদীবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ, নাজিরপুর, কাছিপাড়া, কেশবপুর ও ধুলিয়া ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের সঙ্গে উপজেলার সড়ক ও নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গতকাল বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ ছিল।