নাসায় রুবাব

নাসায় তিন বছর গবেষণা করবেন রুবাব খান
নাসায় তিন বছর গবেষণা করবেন রুবাব খান
রুবাব খান
রুবাব খান

বাংলাদেশের ছেলে রুবাব খান এখন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায়। সেখানে তিনি পোস্ট ডকটোরাল ফেলো হিসেবে কাজ ও গবেষণা করবেন মোট তিন বছর (আগস্ট ২০১৪-জুলাই ২০১৭)।
এক ই–মেইল সাক্ষাৎকারে রুবাব জানান, এখন তাঁর দায়িত্ব ওয়াশিংটন ডিসিতে, নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে। তিনি ও তাঁর দল মূলত কাজ করছেন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নিয়ে। এটি নাসার পরবর্তী প্রজন্মের মহাকাশ পরিদর্শক, যেটিকে ২০১৮-১৯ সালে মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করা হবে। রুবাবের কাজের মধ্যে আছে হাবল, স্পিটজার ও হার্শেল—এই তিনটি টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা, যা মহাজাগতিক বস্তুর দৃশ্যমান হওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝতে আরও সহায়ক হবে। তাঁর এ গবেষণা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের উৎক্ষেপণ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
রুবাব দেশে বরাবরই বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকার উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি আর নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি। পড়ালেখায় সব সময়ই ভালো, অংশগ্রহণ করেছেন বিতর্ক, কুইজসহ নানা সহশিক্ষা কাজে। রুবাবের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নূরুর রহমান খান। এইচএসসির পর তাঁর বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে দেশেই ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুন। কিন্তু ছেলের মনে যে আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন, দূর নক্ষত্ররাজির রহস্য ভেদ করার লক্ষ্য। তাই তো তিনি বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে থাকেন। আর বাবা-মায়ের ইচ্ছেমতো দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বৃত্তিসহ অ্যাস্ট্রোফিজিকস (জোতির্পদার্থবিজ্ঞান) বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
রুবাবের অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল মুহম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন ও আবদুল্লাহ আলমুতীর বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ পড়ে। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক ভাগ্যবান, কেননা বাবা-মা আমার ওপরে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন চাপিয়ে দেননি। তাঁরা আমাকে সব সময়ই সাহায্য করেছেন, যাতে আমি আমার নিজের স্বপ্নের পথে হাঁটতে পারি। গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজিতে আমার শিক্ষার শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছে উদয়ন স্কুল ও নটর ডেম কলেজ। এই দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে আমি ঋণী। স্নাতকে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির উন্নত গবেষণার সুবিধা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে নাসার মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার।’
রুবাবের মতে, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও কম্পিউটার বিষয়ে এ দেশের পাঠ্যপুস্তক আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু এ দেশের পরীক্ষাপদ্ধতির ত্রুটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল স্বপ্নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এখানে শিক্ষার্থীদের কিছু গৎবাঁধা বা একই ধাঁচের প্রশ্নের উত্তর করতে হয়, যেটা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়ে আমি দেখলাম, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের যত জ্ঞান থাকা দরকার, তা আমার আছে। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে যেসব প্রশ্ন দেওয়া আছে, পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। উচ্চশিক্ষার জন্য যাঁরা দেশের বাইরে আসতে চান, তাঁদের উচিত একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে রাখা। বিশেষ করে যাঁরা এইচএসসি শেষ করে বিদেশে আসতে চান, তাঁদের উচিত দেশের সব ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। এতে মা-বাবার সম্মতি আদায় করা সহজ হবে।
আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসার সিদ্ধান্ত নিই, তখন থেকেই স্যাট-১, স্যাট-২ এবং টোয়েফল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। এর সঙ্গে সঙ্গে নটর ডেম কলেজে আমার শিক্ষকদের কাছ থেকে সুপারিশপত্র (রিকমেন্ডেশন লেটার) সংগ্রহ করে রাখি। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৃত্তিসহ ভর্তির আবেদন করা আমার জন্য সহজ হয়। এ ছাড়া বিতর্ক, কুইজ ও নানা ধরনের সহশিক্ষাক্রমিক কাজে যুক্ত থাকায় আমার আবেদন প্রতিটি কলেজেই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়।’
নাসায় রুবাব খান মোট তিন বছর গবেষণা করবেন। এর পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘নাসায় কাজ শেষ করে আমার দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা আছে। কিন্তু সত্যি কথা হলো, অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে গবেষণার ভালো সুযোগ আমাদের দেশে নেই। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত দেশ রেখে যেতে হলে আমাদের এখনই এ ধরনের গবেষণা শুরু করা উচিত।’ রুবাব চান অ্যাস্ট্রোফিজিকসের গবেষণায় তাঁর জ্ঞানকে কাজে লাগাতে।

নতুনদের জন্য পরামর্শ
 স্নাতক পর্যায়ে স্যাট ও টোয়েফল পরীক্ষা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আর্থিক সুবিধাসহ ভর্তির জন্য আবেদন করা।
 পদার্থবিজ্ঞান/ ফলিত পদার্থবিজ্ঞান/ গণিত বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন হলে, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আবেদনের জন্য জেনারেল জিআরই এবং ফিজিকস জিআরই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ও ভালো ফল করা।
 পিএইচডি গবেষণার জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে গবেষণার ভালো সুযোগ রয়েছে, প্রয়োজনে সে সুবিধা গ্রহণ করা।
 বিতর্ক, কুইজ ও অন্যান্য সহশিক্ষাক্রম খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। তাই স্কুল কলেজেই সহশিক্ষা কার্যক্রমে নিজেকে যুক্ত রাখা।