এই রাহুলকে কেউ দেখেনি আগে!

পার্লামেন্টে বক্তব্য দেওয়ার পর হুট করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আলিঙ্গন করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত
পার্লামেন্টে বক্তব্য দেওয়ার পর হুট করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আলিঙ্গন করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত

এই রাহুল গান্ধীকে আগে কেউ দেখেনি। কংগ্রেস সভাপতি যে এমন করতে পারেন, কারও কল্পনাতেও তা আসেনি। শুক্রবার ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মধ্যে ভাষণ শেষে রাহুল যা করলেন, তা ছিল তাক লাগানো। ভারতীয় সংসদের ইতিহাসে সম্ভবত বিরলতম ঘটনা।

কংগ্রেসের পক্ষে রাহুলই ছিলেন প্রথম বক্তা। দুধসাদা কুর্তা পরে তাঁর ঠিক উল্টো দিকে বসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত চার বছরে মোদি সরকারের গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনার মধ্যে রাহুল বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার চোখে চোখ রাখতে পারছেন না। সম্ভবত তাঁর সংকোচ হচ্ছে। আমি জানি, আপনি আমাদের সহ্য করতে পারেন না। আমাকে পাপ্পু বলেন। ঘৃণা করেন। অনেক রাগ আমাদের ওপর। আমরা কিন্তু আপনাদের ওপর ক্ষিপ্ত নই। বরং আপনাদের ভালোবাসি। কৃতজ্ঞও। কারণ, প্রধানমন্ত্রীজি আপনি, আপনার দল বিজেপি এবং আরএসএস ভারতের আসল চরিত্র কী রকম তা আমাদের আরও ভালোভাবে বুঝতে শিখিয়েছেন। আপনাদের মনে যে হিংসা রয়েছে, আমরা তা ভালোবাসায় পরিবর্তন করব। আমরা কংগ্রেস।’

প্রায় এক ঘণ্টা ধরে মোদি সরকারকে তুলোধোনা করে ভাষণ শেষে রাহুল নাটকীয়ভাবে গটগট করে ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে এগিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকে বাড়িয়ে দেন হাত। রাহুল দাঁড়িয়ে মোদির আসনের সামনে। প্রসারিত হাত ধরে ফেলেছেন মোদি। আচমকাই রাহুল প্রধানমন্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় গোটা কক্ষ হকচকিত। রাহুল ফিরে যাচ্ছেন তাঁর আসনের দিকে। মোদি তাঁকে কাছে ডাকলেন, হাত মিলিয়ে পিঠ চাপড়ে কিছু একটা বললেন। রাহুল ফিরে এলেন নিজের আসনে।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর লোকসভায় বিতর্ক শুরু হয় শুক্রবার। অধিবেশনের একপর্যায়ে রাহুলের এই বিশেষ অভিব্যক্তি। ছবিটি টুইটার থেকে নেওয়া
বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর লোকসভায় বিতর্ক শুরু হয় শুক্রবার। অধিবেশনের একপর্যায়ে রাহুলের এই বিশেষ অভিব্যক্তি। ছবিটি টুইটার থেকে নেওয়া

গোটা ভাষণে যেভাবে নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারকে রাহুল আক্রমণ করে গেলেন, তেমন আক্রমণাত্মক কেউ কখনো তাঁকে দেখেনি। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত, তড়িঘড়ি জিএসটি চালু, কর্মসংস্থানে ব্যর্থতা, কালাটাকা দেশে ফেরানো ও প্রত্যেকের ব্যাংক খাতায় ১৫ লাখ টাকা জমা দেওয়ার ভুয়া প্রতিশ্রুতি, তিন গুণ বেশি দাম দিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে রাফায়েল যুদ্ধবিমান চুক্তি, হাতে গোনা কিছু শিল্পপতির স্বার্থ দেখে কৃষকের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে সরকারকে তুলোধোনা করে রাহুল বলেন, পররাষ্ট্রনীতিতেও এই সরকার চূড়ান্ত ব্যর্থ। ভারত, ভুটান ও চীন সীমান্তে ডোকলামে চীনা অনুপ্রবেশের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পরেই মোদি চীন সফরে যান। সে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো রকমের অ্যাজেন্ডা ছাড়াই দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন অপদার্থতা ঢাকা দিতে! বিজেপির নীতিকে আক্রমণ করে রাহুল বলেন, ওরা হিংস্র। আক্রমণাত্মক। ওদের বুকে ঘৃণা। আমরা বিরোধীরা এবং আমাদের সঙ্গে শাসক দলেরও অনেকে মিলে এই সরকারের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেব।

মাত্র কিছুদিন আগেই রাহুলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ক্ষমতা থাকলে লিখিত ভাষণ পাঠ না করে ১৫ মিনিট বক্তৃতা দিয়ে দেখান। সেটা করতে পারলে ভূমিকম্প দেখা দেবে। শুক্রবার লোকসভায় রাহুল সেটাই করে দেখালেন। তাঁর ভাষণের সময় শাসক দলের সমবেত বিরোধিতার মধ্য দিয়েও এটা স্পষ্ট হয়ে গেল, আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসই হতে চলেছে বিজেপির প্রবল প্রতিপক্ষ এবং মোদির লড়াইটা রাহুলেরই সঙ্গে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও তাই টুইট করে বললেন, বাস্তবিকই এটা পালাবদলের ভাষণ। ভূমিকম্প এসে গেছে।

খুশি সোনিয়া গান্ধীও। সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি খুব খুশি। আরও খুশি প্রচারমাধ্যমের মনোভাব বদলাচ্ছে দেখে।’

আরও পড়ুন...