অস্থির সময়ের বয়ান

‘ন্যাচার–১০’, শিল্পী: আশরাফুল হাসান। প্রদর্শনীটি চলছে গ্যালারি কায়ায়
‘ন্যাচার–১০’, শিল্পী: আশরাফুল হাসান। প্রদর্শনীটি চলছে গ্যালারি কায়ায়

গত কয়েক মাস ধরেই শহরের সবচেয়ে আলোচিত এবং আলোড়িত ঘটনা হলো আগুন এবং সড়ক দুর্ঘটনা। এর মধ্যে গ্যালারি কায়াতে প্রদর্শিত হচ্ছে আশরাফুল হাসানের পঞ্চম একক চিত্র প্রদর্শনী ‘টাইম ইন আ থ্রেসহোল্ড’। প্রদর্শনীটি দেখে মনে হলো, এই অস্থির সময়ে এর চেয়ে উপযুক্ত উপস্থাপন যেন আর হয় না।

২০১১ ও ২০১২ সালে এই শিল্পীর তৃতীয় ও চতুর্থ একক প্রদর্শনী ‘কার্নিভাল অব এগোনি’ এবং ‘ট্রমা অ্যান্ড টাইম’–এর পর ‘টাইম ইন আ থ্রেসহোল্ড’ যেন ভিন্ন সময়েরই এক অভিন্ন বয়ান। এই প্রদর্শনীর বেশির ভাগ পেইন্টিংই সিরিজ ওয়ার্ক।

অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে ক্যানভাসে করা ‘বুদ্ধ’ সিরিজের কাজগুলোতে উঠে এসেছে পাল আমলের টেরাকোটায় ব্যবহৃত বুদ্ধের আঙ্গিক। যেখানে গৌতম বুদ্ধের চোখে বাঁধা লাল কাপড় যেন বুদ্ধের স্বাভাবিকতা নষ্ট করার ইঙ্গিতবাহী। বুদ্ধের হাত ও পা থেকে শেকড় গজিয়ে তা মিলিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিতে। ‘বুদ্ধ-২’ চিত্রকর্মে চোখ বাঁধা ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের সামনে অসংখ্য মানবেতর ক্রন্দিত মুখ যেন বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের প্রতিচ্ছবি। আবার ‘দ্যা রুটস-১’ ছবিতেও আছে পাল আমলের টেরাকোটার আদলে নারীদেহের মাতৃরূপী ফর্ম, যার দেহাংশ শিকড়ের রূপ নিয়ে বুকে আশ্রয় দিয়েছে এক পাখি মা এবং তার দুই সন্তানকে।

‘নেচার’ সিরিজের কাজগুলোতে মানবদেহের বিভিন্ন ভঙ্গিমা আঁকা হয়েছে প্রকৃতির সাযুজ্যতায়। অন্যদিকে, ‘রেড রিবন’ শিরোনামের কাজে খবরের কাগজে মোড়ানো লাল ফিতায় বাঁধা হাত প্রচারমাধ্যমের সীমাবদ্ধতাকে কী ইঙ্গিত করছে?

কাগজে কালি-কলম ব্যবহার করে ‘ডার্ক ইমেজ’ সিরিজটিও এ প্রদর্শনীর উল্লেখযোগ্য কাজ। ‘নিউ লাইফ’ ছবিতে পিছমোড়া দেহভঙ্গিমার হাতে রোপণের অপেক্ষায় একটি নতুন গাছের চারা অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যেও অনেকখানি জীবনীশক্তি দেয় দর্শককে। সব মিলিয়ে প্রদর্শনীটি অনিশ্চয়তার দোলাচল থেকে শিল্পীর ভাবনাকে উজ্জীবিত করে দর্শকমনেও। আর প্রদর্শনীটি দেখার পর আমাদের মনে হয়, অনিশ্চিত এই সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়, মানুষের যাপিত জীবনের টানাপোড়েন, অতঃপর জীবন খুঁজে পাওয়ার এই যজ্ঞে প্রকৃতি ও শিকড়ে ফিরে যাওয়ার আহ্বান নিয়েই যেন এই প্রদর্শনীর সূত্রপাত।

মোট ৪৪টি ছবি নিয়ে ২৯ মার্চ থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত।