সাপ, না দড়ি?

ঘুটঘুটে অন্ধকার পথ দিয়ে হেঁটে আসার সময় পায়ের কাছে একটা সাপ পড়ে আছে দেখে চমকে উঠেছিল লোকটা। ‘ওহ্ মাগো’ বলে চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়েছিল। সেই জ্ঞান আর ফিরল না। পরে চিৎকার শুনে লোকজন ছুটে এসে দেখল, সাপ না, এক টুকরো দড়ি, মোটাসোটা একটা দড়ি পড়ে আছে সামনে। কিন্তু লোকটা তো সাপ দেখেই মরেছে, সাপটাই তার কাছে বাস্তব, তা-ই না?

মানে?

মানে, একটা দড়িকে সাপ ভেবেছিল লোকটা, কিন্তু সে তো সাপ দেখেই ভয়ে-আতঙ্কে মারা গেল, তার কাছে সাপটা সত্য, না দড়িটা সত্য?

হয়তো সাপটাই সত্য। কিন্তু এসব কথা আমাকে বলছ কেন?

বলছি আমার অবস্থাটা তোকে বোঝানোর জন্য।

তোমার আবার কী হলো। তুমি তো সাপও দেখোনি, দড়িও না। দিব্যি বেঁচেও আছ...।

এটাকে বেঁচে থাকা বলে না—একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মঈনের বুক ফুঁড়ে, একটা উদাহরণ দিয়ে তোকে ব্যাপারটা বোঝাতে চাইলাম। তুই কি আসলে আমার কথাটা বুঝতে পারছিস না, নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করছিস?

এইসব মারফতি লাইনের কথা আসলে আমি বুঝি না মঈন ভাই। কোদালরে কোদাল বললে বুঝি।

কেন তুই কি অশিক্ষিত মেয়ে?

অশিক্ষিত হব কেন, তবু তফাত একটা আছে না, মেডিকেল কলেজের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট আর গার্লস কলেজের...।

পারিসার কথাবার্তা আর আচরণ আজ বিস্মিত করে মঈনকে। মাঝখানে অল্প কিছুদিন দেখা হয়নি, এর মধ্যে কী করে যেন আমূল পাল্টে গেছে মেয়েটা। কদিন আগেও মুখোমুখি হলে মাথাটা নিচু হয়ে যেত আপনাআপনি। নখ খুঁটত দাঁত দিয়ে। ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ছাড়া তেমন কথাও বলত না বেশি। চোখের কোণে একঝলক বিদ্যুৎ বা ঠোঁটটেপা একটু হাসি...। এ-ই তো, কিন্তু ওইটুকুতেই এই মেয়ে কাহিল করে দিতে পারে কোনো যুবকের মন,Ñসেটা বুঝতে পারে মঈন। বুঝতে পারে বলেই যুদ্ধক্ষেত্রের ঘোড়সওয়ার যোদ্ধাদের মতো নিজের বুকে একটা অদৃশ্য বর্ম পরে নিয়েছিল, যাতে তির ছুড়লে হৃৎপিণ্ডে না লেগে তা ছিটকে যায়। এই প্রতিরোধ তৈরি করতে গিয়েই বোধ হয় একটু বেশি অবহেলা করা হয়েছে মেয়েটাকে। আজ কি তারই প্রতিশোধ নিচ্ছে এই মেয়ে! বাচাল মেয়েদের মতো মুখে মুখে বেশ সওয়াল-জওয়াব করছে আজ।

মঈনের ছোট খালাদের পুরো পরিবার নোয়াখালীর পাট চুকিয়ে ঢাকা চলে এসেছে বছরখানেক হলো। খালু বন বিভাগে চাকরি করেন, প্রমোশন হয়েছে তাঁর। বন বিভাগের কর্মকর্তা প্রমোশনের ধাপে ধাপে আরও গভীর বনের দিকে ধাবিত হবেন, এটাই তো সাধারণ ধারণা, খালু কেন সুন্দরবনে না গিয়ে ঢাকায় আসেন—এ প্রশ্ন মঈনের মনে জাগে, কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।

ছোট বোনের পরিবার ঢাকা চলে আসায় সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন মঈনের আম্মা। বোনের মেয়ে পারিসার কথা উঠলে প্রায় ভাষা হারিয়ে ফেলেন মায়মুনা। এমন চোখ-ভোলানো চেহারা-সুরত যার, তার কী করে এমন মন-ভোলানো স্বভাব-চরিত্র, এই রহস্যের মীমাংসা করতে না পেরে বারবার শুধু বলেন, মাশাল্লাহ্, মাশাল্লাহ্।

ছেলের সামনে বোনঝির রূপ ও গুণ বর্ণনার সময় মায়মুনা আক্তার এতই বাড়াবাড়ি করে ফেলতেন যে, কেন জানি মঈনের মনে হয়েছে আম্মার মনে কোনো অভিসন্ধি আছে। নোয়াখালীর স্কুল-কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পারিসা ঢাকায় গার্লস কলেজে ভর্তি হয়েছে গ্র্যাজুয়েশন করার জন্য। মেয়েটা যে বেশ সুন্দরী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই ছোটবেলায় দেখেছিল ওকে গ্রামের বাড়িতে, ঢাকায় আসার পর যুবতীকে দেখে নিজেও চমকে গিয়েছিল। ক্যাম্পাসেই হোক বা হাটে-বাজারে-শপিংমলে সচরাচর এ রকম সুশ্রী মায়াভরা মুখ দেখা যায় না। কিন্তু দেখতে রাঙা আলু হলে কী হবে, লেখাপড়ায় লবডঙ্কা। মঈনের ধারণা, বিএ ক্লাসে ভর্তি হয়েছে বিয়ের যোগ্য পাত্রী বিবেচিত হওয়ার জন্য, আর কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। সদ্য চিকিৎসকের সনদ পাওয়া নিজের ছেলেটির সামনে এহেন বোনঝির প্রশংসায় মায়মুনা আক্তার যখন মুখে ফুলঝুরি ছোটান, তখন একটা সন্দেহ তৈরি হতেই পারে। মঈন তাই সতর্ক। তা ছাড়া কাজিনদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক তার একেবারেই না-পসন্দ একটা বিষয়।

এদিকে দুই বোনের মাত্রাছাড়া আবেগে দুই পরিবারই ভেসে যাচ্ছিল। সবকিছুরই একটা সীমা আছে। সীমা লঙ্ঘন করলে যা হওয়ার তা-ই হলো কিছুদিনের মধ্যে। হঠাৎ এ–বাড়ি ও–বাড়ির শীর্ষ পর্যায়ের সফর বন্ধ হয়ে গেল। হঠাৎ দুই বোনের এই মনোমালিন্যের সূচনা কোত্থেকে বোঝা না গেলেও, এর রেশ যে খুব সহজে শেষ হবে না, তা বোঝা গিয়েছিল।

শীর্ষ পর্যায়ের সম্পর্কের অবনতিতে মঈনের অবশ্য কিছু যায়–আসে না। মাঝেমধ্যে খালার বাসায় যায়। পারিসা আর তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে গল্পগুজব করে। বোনের সঙ্গে যত যা-ই অভিমানপর্ব অব্যাহত থাকুক, ভাগ্নের জন্যøস্নেহ-ভালোবাসার কোনো ঘাটতি নেই আইনুন নাহারের। অন্য দিকে বন বিভাগের কর্মকর্তা রাশভারী মানুষ। তিনি আদিখ্যেতাও দেখান না, আবার উপেক্ষাও করেন না।

সবই চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু হঠাৎ একদিন পারিসা খুব খুশি খুশি চেহারায় জানাল, তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্র নোয়াখালীর ছেলে, তার পূর্বপরিচিত। নোয়াখালী সরকারি কলেজের প্রভাষক ছিলেন, ঢাকা কলেজে এসেছেন সহকারী অধ্যাপকের পদোন্নতি পেয়ে।

সত্যি বলতে কী শুনে ভালো লাগেনি মঈনের, বলেছিল, তুই রাজি হয়ে গেলি? এখনই বিয়ে করবি কেন, গ্র্যাজুয়েশনটা শেষ কর...।

কিন্তু সলজ্জ হেসে পারিসা যে উত্তরটা দিয়েছিল, তা শুনে কেন জানি বুকের ভেতরটা আরও ভারী হয়ে উঠেছে। কলেজশিক্ষকটির সঙ্গে নাকি আগে থেকেই একটু ভাব-ভালো লাগা ইত্যাদি ছিল পারিসার। সাহস করে এত দিন ঘরে জানাতে পারেনি। এখন সব দিক বিবেচনা করে বাবা-মাকে জানিয়েছে। তাঁরাও না করেননি।

কলেজশিক্ষক? নট আ বিগ ডিল। মঈনের কণ্ঠে কি ঈর্ষা বা অচেনা ভদ্রলোকের প্রতি অমর্যাদা প্রকাশ পেল?

পারিসা একটু খোঁচা দিয়েই যেন বলল, কেন, সমস্যা কী, সবাইকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারই বিয়ে করতে হবে?

সেদিন অনেক জোরাজুরি সত্ত্বেও কিছু মুখে না দিয়েই খালার বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। বাইরে তখন অদ্ভুত সন্ধ্যা। টিপটিপ বৃষ্টি, সঙ্গে এলোমেলো হাওয়া। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ঘন ঘন। মেঘের গর্জনে চাপা পড়ে যাচ্ছে গাড়ির হর্ন, রিকশার টুংটাং, বাস-টেম্পোর হেলপারের চিৎকার। এর মধ্যে দুম করে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকার রাস্তায় একটা দুর্যোগ-পূর্ববর্তী পরিবেশ। কিন্তু প্রচণ্ড একটা চাপা ক্রোধ নিয়ে সবকিছু উপেক্ষা করেই যেন হনহন করে হাঁটছিল মঈন। রাগটা কার ওপর, ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। পারিসার ওপর? কেন, একজন কাউকে তার ভালো লাগতে পারে না? খালা-খালুর ওপরও রেগে যাওয়ার তেমন কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ খুঁজে পেল না। তাঁরা এখন মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী হতেই পারেন। গড়পড়তা বাঙালি মেয়ের বিয়ের বয়স পারিসার হয়েছে। তাহলে রাগটা নিজের ওপর? কেন, সে কি কখনো পারিসার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে চমকে ওঠে সে। তার প্রতিরোধের সমস্ত অদৃশ্য নির্মাণ তখন ভেঙে পড়ে ঝুরঝুর করে।

দৈনন্দিন কাজকর্মে তালগোল পাকিয়ে গেল, রাতের ঘুম হারাম। তন্দ্রার ভেতর একটা মুখই শুধু ভেসে ওঠে। সেই মুখ যেন জানতে চায় ‘এত দিন কোথায় ছিলেন?’ নিজের সর্বনাশটা তখন আর আবছা স্বপ্নের মধ্যে থাকে না। বাস্তব অবস্থাটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ রকম বেহাল অবস্থার মধ্যে একটা চূড়ান্ত বোঝাপড়ার জন্যই এসেছিল আজ।

সাপ আর দড়ির ব্যাপারটা কী যেন বলছিলে? পারিসার দৃষ্টিতে কৌতুক।

সেটা এখন গায়ে মাখার অবস্থা নয় মঈনের। অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলল, ওই দড়িটাই এখন আমার কাছে সাপ, সাপের আতঙ্কেই মারা গেছি আমি।

তুমি? মারা গেছ! কী সব যা-তা বলছ, কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

এবার পারিসার হাত দুটো ধরে ফেলল মঈন, কেন না বোঝার ভান করছিস পারিসা, তোকে আমি ভালোবাসি। তোকে ছাড়া আমি...।

সাপের কামড় খেয়ে বাঁচবে? হেসে ফেলল পারিসা। তারপর ধীরে ধীরে গম্ভীর হলো তার চোখ-মুখ, বলল, এখন তো আর সম্ভব না। আমি কামাল স্যারকে কথা দিয়েছি।

কথা দিয়েছিস মানে? মুখের কথা কি সংবিধান, যে পাল্টানো যাবে না? মানুষের মত পাল্টায় না?

কিন্তু আমার তো মত পাল্টায়নি।

ইচ্ছে করছিল মেয়েটার ফরসা গালে কষে একটা চড় দিয়ে লাল করে দিতে। অনেক কষ্টে রাগ সংবরণ করে বলল, তুই আমাকে ওই লোকের ফোন নম্বরটা দে।

দুই.

হ্যালো, কামাল সাহেব?

জি।

আমার নাম মঈন। ডা. মঈনুল ইসলাম।

জি, বলুন।

পারিসার সঙ্গে বোধ হয় আপনার বিয়ের কথাবার্তা চলছে...।

জি, কথাবার্তা পাকা হয়েছে।

এই বিয়েটা হবে না।

হবে না মানে, কেন হবে না? হবে না বলার আপনি কে?

আমি, মানে আমার সঙ্গে ওর একটা সম্পর্ক আছে...মানে প্রেমের সম্পর্ক...।

কই পারিসা তো আমাকে কখনো বলেনি।

বলেনি, কারণ ও আগে জানত না।

পারিসা নিজেই জানত না ওর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক! ও প্রান্তে সশব্দে হেসে উঠলেন কামাল সাহেব।

হাসছেন কেন?

হাসব না, এ রকম আজগুবি কথা শুনে না হেসে উপায় আছে? আপনি কি বিয়েটা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছেন?

মঈন সংযত রাখতে পারছে না নিজেকে। প্রেম আর যুদ্ধে কোনো নিয়ম মানলে চলে না, বলল, চেষ্টা করছি না, বিয়েটা আমি হতে দেব না।

ফোনে এ রকম অনেক কথা বলা যায়, সাহস থাকলে সামনে এসে দাঁড়ান।

মাথায় রক্ত চড়ে যায় মঈনের, কোথায় আসতে হবে? এখনই আসছি।

ঠিকানা জানার পর আগপিছ ভাবার সময় থাকল না। আশ্চর্য, ওর স্বভাবের মধ্যে এ রকম বেপরোয়া একটা ব্যাপার লুকিয়ে আছে নিজেই জানতে পারেনি কখনো। পারিসা তার চরিত্রের কত দিক যে উন্মোচন করে দিল, ভেবে অবাক হয়ে যায় মঈন।

এর-ওর কাছ থেকে নাম জিজ্ঞেস করে তেজকুনিপাড়ার দোতলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাটের দরজায় বেল টিপল।

প্রায় আগোছালো একটি ঘর। একটি বড় টেবিলের চারপাশে পাঁচ-সাতটা চেয়ার। বোঝা যায় নিয়মিত ব্যাচ করে ছাত্র পড়ান কামাল সাহেব। এই মুহূর্তে দুটি ছাত্রকে পাঠদান করছেন যে ভদ্রলোক, তাঁর মাথায় বিস্তৃত টাক, চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা। এই পারিসার কামাল স্যার!

ভদ্রলোক হেসে অভ্যর্থনা জানালেন, আপনি মঈনুল সাহেব? আসুন...।

মঈন একটা চেয়ার টেনে বসল। একটি অপ্রিয় প্রসঙ্গের অবতারণা করতে হবে বলে চেহারাটা কঠিন।

দুই ছাত্রকে বিদায় করে দিয়ে এবার মুখোমুখি এসে বসলেন কামাল সাহেব। মঈন যতটা গম্ভীর, ঠিক ততটাই যেন সহজ ও স্বাভাবিক ভদ্রলোক। বললেন, আপনি বিয়েটা কেন ভেঙে দিতে চান, বলুন তো?

কারণ, আমি পারিসাকে ভালোবাসি।

ভালোবাসেন তো এত দিন পারিসাকে বলেননি কেন?

বলিনি...মানে...। এবার একটু বেকায়দায় পড়ে গেল মঈন, গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্ব রক্ষা করে প্রায় কঠিন হয়ে একটু আমতা আমতা করেই বলল, আসলে ব্যাপারটা আমি নিজেও নিশ্চিত হতে পারিনি এত দিন।

বাহ্, ভালোবাসেন, অথচ নিশ্চিত হতে পারেননি, বড়ই অদ্ভুত! এখন আপনি নিশ্চিত?

এক শ ভাগ। দৃঢ়কণ্ঠে বলল মঈন।

এবার বেশ প্রসন্ন হাসিতে মুখ ভরালেন কামাল সাহেব, আসলে আমি বিবাহিত। ভেবেছিলাম দ্বিতীয়বার পাণিগ্রহণ করব, আপনার জন্য সেটা আর হলো না।

মানে? চোয়াল ঝুলে গেল মঈনের।

মানে আর কী, আপনি যে ভালোবাসেন, কিন্তু কিছুতেই ঝেড়ে কাশতে পারছেন না, এটা বুঝতে পেরেছিল পারিসা। আমার স্ত্রী তার বান্ধবী। সমস্যার কথা আমাদের দুজনকে এসে বলত। আমরাই এ ধরনের একটা সমাধানের পথ দেখিয়েছিলাম।

উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠল মঈন, তার মানে পুরোটাই নাটক? পারিসার বিয়ে ঠিক হয়নি?

টাক মাথা, পুরু চশমা পরা লোক এতটা রসিক হতে পারে, কখনো দেখেনি মঈন। কান পর্যন্ত বিস্তৃত হেসে কামাল সাহেব বললেন, বিয়ে ঠিক হয়নি বলাটা ঠিক হবে না, আপনি করবেন না বললে আমি কিন্তু এখনো রাজি।

একটা যুদ্ধ করতে এসেছিল মঈন, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র এমন ফুলের বাগান হয়ে উঠবে ভাবতেই পারেনি। এতক্ষণ জমিয়ে রাখা বরফ হঠাৎ জলের মতো সরল হয়ে গেল, আবেগে-উত্তেজনায় স্থান-কাল-পাত্র ভুলে কামাল সাহেবকে জড়িয়ে ধরে চকাস করে তাঁর গালে একটা চুমু খেয়ে ফেলল মঈন।

আরে আরে করছেন কী, আমার স্ত্রী দেখতে পেলে কী ভাববে বলে হাসছিলেন কামাল সাহেব, আর তখনই পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকল বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা। মিটিমিটি হাসছে পারিসার বান্ধবী।

কামাল সাহেব বললেন, ষড়যন্ত্রে কিন্তু এই ভদ্রমহিলারও হাত আছে।

আনন্দের আতিশয্যে পারিসার বান্ধবীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল মঈন, কামাল সাহেব বললেন, খবরদার আমার সঙ্গে যা করলেন, একই কাণ্ড ওই ভদ্রমহিলার সঙ্গে করবেন না যেন। সম্পর্কে উনি আমার স্ত্রী।

লজ্জা পেয়ে আরেক দফা কামাল সাহেবকেই জড়িয়ে ধরল মঈন।