Thank you for trying Sticky AMP!!

মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বিক্ষোভ দমাতে চাইছে ইরান

মাসা আমিনির কবর জিয়ারতের জন্য শোকাতুর হাজারো মানুষের স্রোত ছুটে যায় ইরানের কুর্দিস্তানের সাকেজ শহরে। এ সময় এক নারীকে গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে কিছু বলতে দেখা যায়

নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলা বিক্ষোভ দমাতে উঠেপড়ে লেগেছে ইরান সরকার। এ জন্য দেশটিতে একের পর এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিচার শেষে ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনগুলোয় আরও অনেক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অধিকারকর্মীরা। তাঁরা বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডকে বিক্ষোভ দমানোর কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে ইরান সরকার। খবর এএফপির।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আজ সোমবার জানিয়েছে, ছয়জন বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ইরানের আদালত। আরও ২১ জনের বিচার চলছে। সংগঠনটির আশঙ্কা, তাঁদেরও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের পর বছরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে ইরানে। ২০২১ সালে দেশটি অন্তত ৩১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তবে নরওয়েভিত্তিক সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) জানিয়েছে, ইরানে গত বছর ৪৮২ জনের বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে মাসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে বিক্ষোভ দমাতে কঠোর অবস্থানে গেছে ইরান সরকার। এ পরিস্থিতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে তাঁদের বিক্ষোভ থেকে দূরে রাখতে চায় ইরান সরকার। এ জন্য গ্রেপ্তার, বিচার ও মৃত্যুদণ্ডকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি–মোঘাদাম জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত মৃত্যুদণ্ডবিরোধী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেন, ‘ইরানের একের পর এক মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হতে হবে। তেহরানকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে আমরা দেশটিতে গণহারে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা দেখতে পাব। কেননা, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশে৵ নয়, মাদকসংক্রান্ত মামলার বিচারেও এখন ইরানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।’

Also Read: পাল্টাপাল্টি তোপ বাইডেন-রাইসির

ইরানজুড়ে চলমান বিক্ষোভকে ‘দাঙ্গা’ হিসেবে দেখছে কর্তৃপক্ষ। তাদের ভাষ্য, বিদেশি শত্রুরা এ বিক্ষোভে মদদ দিচ্ছে। দেশটির বিচার বিভাগের কাছেও বিক্ষোভকারীরা ‘দেশবিরোধী দাঙ্গাবাজ’ হিসেবে চিহ্নিত। এর ফলে প্রচলিত আইনে তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়ায় বাধা নেই।

চলতি মাসের শুরুতে ইরানের পার্লামেন্টের ২৯০ জন সদস্যের মধ্যে ২২৭ জন এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। এর আওতায় বিক্ষোভকারীদের বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে সমর্থনের কথা জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে বিক্ষোভ দমাতে মৃত্যুদণ্ডের কৌশলকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছেন অধিকারকর্মীরা।

Also Read: ইরানে আবারও সংঘর্ষ–গুলি, একজন নিহত

গ্রেপ্তার দুই অভিনেত্রী

ইরানে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়ায় দেশটির দুই খ্যাতিমান অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার বরাতে বিবিসি এ তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিনেত্রীরা হলেন হেনগামেহ গাজিয়ানি ও কাতাইয়ুন রিয়াহি। তাঁরা মাথার হিজাব ছাড়া প্রকাশ্যে এসেছিলেন। একে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Also Read: ইরানে এবার স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে হত্যা, দেশজুড়ে বিক্ষোভ

ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের কৌঁসুলির কার্যালয়ের আদেশক্রমে গতকাল রোববার এই দুই অভিনেত্রীকে আটক করা হয়। তাঁরা ইরানি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে গোপন আঁতাত ও অপতৎপরতা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ।

গাজিয়ানি ও কাতাইয়ুন একাধিক পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী। গ্রেপ্তারের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে গাজিয়ানি লিখেছেন, ‘যা–ই ঘটুক না কেন, জেনে রাখুন, আমি বরাবরের মতো ইরানের জনগণের পাশে থাকব। এটাই হয়তো আমার শেষ পোস্ট।’

Also Read: ইরানের পুলিশের বিরুদ্ধে মাসা আমিনির পরিবারের মামলা

ইরানের অভিনেতা-অভিনেত্রী, ক্রীড়াবিদসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি ইতিমধ্যে বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কয়েক মাসের বিক্ষোভে ইরানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ৪০০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৬ হাজার ৮০০ জনের বেশি।

Also Read: বিক্ষোভ দমনে চলছে গুলি